সড়কে বিশৃঙখলা, দায় কার

47

 

বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এবং স্থান ভেদে জেলা শহরে রাস্তায় কম-বেশি যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবে ঢাকা শহরে যানজটের মাত্রা অস্বাভাবিক এবং অসহনীয়। যানজটে নাকাল নগরবাসী এবং ভুক্তভোগী। রাজধানী হিসেবে ঢাকায় মানুষের বসবাস দিন দিন বেড়ে চলেছে। সেই কারণে যানবাহন ও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সড়কের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়াতে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় ছোট যান বিশেষ করে সিএনজি চালিত বেবী ট্যাক্সি এবং মোটর বাইক বেড়ে যাওয়া যানজটের অন্যতম কারণ। তাছাড়া সড়কে খানাখন্দ এবং নির্মাণ সামগ্রী রাখার কারণে রাস্তা ছোট হয়ে যাওয়া যানজট সৃষ্টির সহায়ক। রাস্তা সংকুচিত হয়ে যানজট সৃষ্টির বহুবিধ কারণ বর্তমান। ঢাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাত পুরোপুরি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তথা হকারদের দখলে।
রাজধানীর বিপণি বিতানগুলোর সামনে অবৈধ পার্কিং এর কারণে রাস্তা ছোট হয়ে থাকে। সত্যিকার অর্থে বেশীর ভাগ মার্কেটে আলাদা পার্কিং এর ব্যবস্থা নাই। তাই রাস্তা দখল করে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। দিনের বেলা দোকানের সামনে রাস্তায় ট্রাক এবং ভ্যান দাঁড় করিয়ে রেখে মালামাল ওঠানামা করা ভোগান্তি। নামী-দামী স্কুল- কলেজ গুলোর সামনে গাড়ি পার্কিং করে ছেলেমেয়েদের ওঠানামা করা ভোগান্তি। ঢাকার রাস্তায় মানুষের ভোগান্তি চরমে এবং যানজটে প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। অনেক রাস্তায় বিকাল ৩-০০ টার পরে রাস্তা দখল করে ভ্যান গাড়িতে শাক- সবজি এবং বিভিন্ন পণ্য সামগ্রি বিক্রিও যানজটের কারণ। মূলত; সড়ক ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনার অভাব। অনেক ফ্লাইওভার সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু দুর্ভোগ কমানো যায়নি। যানজটের কারণে দৈনিক মানুষের লাখ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হয় এবং তাতে অর্থনৈতিক ক্ষতিও অপরিসীম। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, দুই বছর আগে রাস্তায় গাড়ির গতি ছিল, ঘনটায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। বর্তমানে গতি নেমে এসেছে ৪.৮ কিলোমিটারে। ২০০৭ সালে যানবাহনের গতি ছিল, ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০১৭ সালে তা নেমে দাঁড়ায় ০৭ কিলোমিটারে। রাজধানীর ভিতরে এবং বাইরে থেকে আসা প্রায় ত্রিশ লাখের মত গাড়ি রাস্তায় চলছে। তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ গাড়ি রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত। ঢাকার প্রবেশ পথে যানজট থাকে সবসময়। আমাদের জানামতে, ঢাকার প্রবেশ পথে বিশেষ করে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, নরসিংদীতে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। ঢাকার বাইরে পরিবহন নিয়ন্ত্রণে কোন লোকবল নেই। শুধু হাইওয়ে পুলিশ দিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। দুই- ঈদে পার্বনে দেখা যায়, গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে যায় এবং ভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করে। এক্ষেত্রে জনগণের দায়ভারের চেয়ে সরকারের দায়ভার অনেক বেশি।
অসহনীয় যানজট এবং দুর্ভোগ থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে সড়ক – মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। সেই মর্মে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরতা এবং মাঝে মাঝে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এবং রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার অত্যধিক গুরুত্বপুর্ণ। লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালনা সম্পূর্ণ রূপে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বাসে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো এবং বাড়তি ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে। সড়ক এবং মহাসড়কের পাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা, অবৈধ পার্কিং বাজার ফুটপাতের দোকান ও টার্মিনাল উচ্ছেদ করতে হবে। গণপরিবহনের উপযোগী সড়ক অবকাঠামো করতে হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক