সড়কের একপাশ অচল ধূলা-যানজটে দুর্ভোগ

243

চার কিলোমিটারে দুই লেন সড়ক। এরমধ্যে একপাশ অচল। গত তিন বছর ধরে এমন অবস্থায় পড়ে আছে বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কটি। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ-ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। ধূলার আস্তরণ ও যানজট মাড়িয়ে প্রতিদিন সড়কটি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রামজুড়ে উন্নয়নের দৃশ্যপটেও সড়কটি যেন অনুন্নত শহরের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওয়াসা ও গ্যাস লাইন স্থাপনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটির একপাশ দীর্ঘ তিন বছরেও সচল না হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে বলে দাবি করছেন সড়ক ব্যবহারকারীরা। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটির উভয়পাশে যান চলাচলের উপযোগী করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফয়জুলুল্লাহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘এ সড়কের কাজ করবে সিটি কর্পোরেশন। গ্যাস পাইপ লাইন ও বিদ্যুৎ লাইনের কিছু কাজ হচ্ছে। আমাদের কাজ শেষে অনেক আগেই সড়কটি সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কটি আমাদের ১২৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে আছে। ইতোমধ্যে দরপত্র প্রসেসিংয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এ সড়কের কাজ শুরু কবে।’
জানা যায়, মদুনাঘাট প্রকল্পের পাইপলাইন স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালের শুরুতে সড়কটির একপাশ বন্ধ করে দেয় ওয়াসা। দীর্ঘদিন ধরে পাইপলাইনের কাজ চলে। এরপর কাজ শেষ করে ওয়াসা সড়কটি চসিকের কাছে বুঝিয়ে দেয়। এরমধ্যে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র‌্যাম নির্মাণের কারণেও টার্মিনাল থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কের একপাশ বন্ধ করে দেয়া হয়। যে কারণে পুরো চার কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ তিন বছর ধরে একপাশ অচল হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র‌্যামের নিচের অংশে সড়কটির একপাশ সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী। খানাখন্দকে ভরপুর সড়কটি দিয়েই প্রয়োজনে গাড়ি চলে। র‌্যাম নামার অংশে চান্দগাঁও আবাসিক থেকে গাড়ি বের হওয়ায় তীব্র যানজট লেগে থাকে। টার্মিনাল থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত অচল সড়কটির অস্থায়ী ট্রাক ও বাস টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। ওয়েস্টার্ন পার্ক কমিউনিটি সেন্টারের অপরপাশে অচল ও সচল দুই ধরনের গাড়ির পার্কিং যেন সড়কটি। সারিবদ্ধ ট্রাক ও বাসের লাইন। সিএন্ডবি বিএফআইডিসি সড়কের মুখেই বড় দুটি গর্ত করে পাইপ লাইনের কাজ চলছে। সেখানে গাড়ির জট লেগেই আছে। সিএন্ডবি থেকে বাহির সিগন্যাল এলাকার কিছু অংশে সড়কে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে বিশালাকার বালির স্ত‚প। সকাল ও সন্ধ্যার পর এ সড়কটিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও দুদর্শার চিত্র ফুটে ওঠে। মুখে মাস্ক ও হাত দিয়ে সড়ক পাড়ি দিচ্ছে পথচারীরা।
বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কের এমন অবস্থার পর বিকালে আরো কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েন সড়ক ব্যবহারকারীরা। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কাজীরহাট, কামাল বাজার হয়ে মৌলভীবাজার পর্যন্ত পুরো সড়কের একপাশ ভাসমান দোকান ও বাজার বসার কারণে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
চট্টগ্রাম ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী শাহেলা বেগম পূর্বদেশকে বলেন, ‘মুখে হাত দিয়ে রাস্তা পার হই। স্কুলের ব্যালকনি দিয়ে পর্যন্ত ধূলাবালি ঢুকে। একপাশে গাড়ি চলাচল করায় ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হতে হয়।’ সিএন্ডবি রাস্তার মাথার ফল ব্যবসায়ী ওয়াহেদ উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ওয়াসা ও গ্যাস লাইনের কাজ চলার কারণে বহুদিন ধরে রাস্তাটি বন্ধ। কালুরঘাটের গার্মেন্টস ছুটি দিলেই মানুষের কষ্ট টের পাওয়া যায়। একদিকে যানজট, অন্যদিকে মানুষের চাপ। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ধূলাবালির আস্তরণে প্রতিদিনই দোকানের পণ্য মুছামুছি করতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে।’ বাহির সিগন্যাল সিটি গেট এলাকার মায়ের দোয়া হোটেলের মালিক মো. ফোরকান পূর্বদেশকে বলেন, তিন বছর ধরে ওয়াসার কাজের জন্য সড়কটি বন্ধ। ধূলাবালি বেশি। যানজট বেঁধে গেলে মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না। একবার যানজট লাগলে দুই থেকে তিনঘণ্টাতেও ছুটে না। যে কারণে বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথার ১৫ মিনিটের সড়কটি পাড়ি দিতে ঘণ্টাপার হয়।
গতকাল দুপুরে এ সড়কে দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট মো. হারুনুর রশিদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি সিএমপিতে আসার তিনবছরে মাত্র দুইদিন এ সড়কে দায়িত্ব পালন করেছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাপক হিমশিম খেয়েছি। রাস্তার মাথা, বাহির সিগন্যাল, ১৪নং রোড়ের মাথা, টার্মিনাল, সিএন্ডবি, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র‌্যাম নামার স্থানে মারাত্মক সমস্যা হয়। সড়কটির এমন ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের সিনিয়র স্যাররাও অবগত আছেন।’