ঢাকা প্রতিনিধি
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য আদিলুর রহমানের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলুর ছেলে ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব আশিক আহমেদ।
সহায়-সম্পত্তির বিরোধের জের ধরে গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের বনানী অফিসে তারই উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক নেতা জানান, দুপুরে জাতীয় পার্টির বনানী অফিসের দ্বিতীয় তলার কনফারেন্স রুমে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে যুব মহিলা পার্টির মতবিনিয়ম সভা চলছিল। এসময় বাবলুর ছেলে আশিক আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে হঠাৎ করে সৎমামা দলের ভাইস চেয়ারম্যান আদিলুর রহমান এসে ভাগিনা আশিককে ডাকাডাকি করতে থাকলে সভা শেষ করে তার সাথে দেখা করবেন বলেন।
নাছোড়বান্দা আদিল তাকে নিয়ে যেতে চাইলে একপর্যায়ে জিএম কাদের বলেন, আদিল যখন ডাকছে তুমি যাও। আদিল আশিককে ডেকে নিয়ে তার বসার রুমে নিয়ে যান। দরজা বন্ধ করে সেখানে তাকে মারধর করেন। চেঁচামেচির আওয়াজ বাইরে আসলে বৈঠকে উপস্থিত নেতাকর্মীরা গিয়ে আশিককে উদ্ধার করেন। এসময় তার পরনের পাঞ্জাবি ছেড়া এবং শরীরে কিল-ঘুষির দাগ দেখা যায়। খবর পেয়ে আশিকের চাচা বনানী অফিসে ছুটে যান। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
অন্যদিকে, জিএম কাদেরের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার এসে আদিলকে নিয়ে চলে যান। জিএম কাদেরের ভাগিনা আদিলুর রহমান সম্পর্কে আশিকের সৎমামা হন। দলের চেয়ারম্যানের বৈঠক থেকেই ডেকে নিয়ে আশিককে মারধরের ঘটনায় দলীয় শিবিরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনা এখন নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। তবে কোনোভাবেই যাতে এই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ না পায় সেজন্য নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিজের বৈঠক থেকে ডেকে নিয়ে এমন ঘটনা ঘটানোয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজেই বিব্রত। ভাগিনা আদিলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলেও উপস্থিত নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহম্মদ কাদের, দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে ফোন করা হলেও তারা ধরেননি। এসএমএস দিয়েও কথা বলা যায়নি দলের ভাইস চেয়ারম্যান আদিলুর রহমান ও আশিক আহমেদের সাথে। তবে ঘটনার সময় উপস্থিত একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশিকের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানান, দলের চেয়ারম্যানের সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন এর বিচার করবেন। দেখি উনি কী করেন।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যুর পর স্ত্রী মেহজাবিন টুম্পা ও তার ভাই আদিল তার সব সহায়-সম্পত্তি জবরদখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ছেলে আশিকের নামে রেখে যাওয়া সম্পত্তিও আত্মসাতের চেষ্টা করছেন তারা। ইতোমধ্যে অনেক কিছু তারা দখলে নিয়েছেন। বাবলুর স্ত্রী হিসেবে ইসলামী শরীয়ত মতে যা পাবেন তার সবটুকুই আমরা দিয়ে দিতে চাই। কিন্তু তিনি পুত্রের সম্পত্তি থেকেও ভাগ চান। সম্পত্তি দখলে নিতে ভাই আদিলকে দিয়ে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় জিএম কাদেরের সামনেই আজকে তো তাকে শারীরিকভাবে মারধর করা হলো বলে জানান আশিকের এই আত্মীয়।