স্যার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

4

ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম যুগের একজন বিশিষ্ট নেতা। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রতিষ্ঠাতা। পরে এ দলটিকে নিয়ে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। তাঁকে রাষ্ট্রগুরু সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৮৪৮ সালের ১০ নভেম্বর কলকাতায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। তার বাবা দূর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ঐ যুগের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ইংল্যান্ডে চলে যান এবং ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) পরীক্ষা পাশ করেন। অতঃপর ১৮৭১ সালে তিনি সিভিল সার্ভিসের কর্মজীবনে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সিলেটে আসেন। তিনি তার নির্ধারিত দায়িত্ব সঠিকভাবে চালাতে পারেননি ও অগ্রসর হতে চান না- এ অজুহাতে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। জাতীয় নেতৃত্বে জোরালোভাবে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে তিনি পুনরায় ইংল্যান্ডে গমন করেন। তিনি যেমন ছিলেন একজন স্বভাবজাত লেখক তদ্রæপ বাগ্মী হিসেবেও তিনি ছিলেন বিশেষভাবে পরিচিত। ১৮৭৫ সালে মাতৃভূমি ভারতে ফিরে আসেন এবং শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে মনোনিবেশ ঘটান। ইংরেজির প্রফেসর হিসেবে প্রথমে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন এবং পরে ফ্রী চার্চ কলেজে নিয়োজিত ছিলেন। সর্বশেষে রিপন কলেজে যোগ দেন। পরবর্তীকালে এই রিপন কলেজই তার নামে নামকরণ করা হয় সুরেন্দ্রনাথ কলেজ হিসেবে। ২৬ জুলাই, ১৮৭৬ সালে সুরেন্দ্রনাথ সর্ব ভারতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারত সভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৮ সাল হতে তিনি দি বেঙ্গলি শিরোনামে একটি কাগজ সম্পাদনা করতেন এবং নির্ভিক ও ঔৎসুক চিত্তে জাতির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিশেষ করে জাতীয় সংস্কৃতি, একতা, স্বাধীনতা ও মুক্তির বিষয়ে নিয়মিত লিখতেন। এছাড়াও, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় বিধানসভার অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৮৭৬-১৮৯৯ সাল পর্যন্ত একাধারে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনেরও সদস্য হিসেবে ছিলেন।
১৯০৫ সালে সুরেন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন এবং স্বদেশী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এর ফলে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সা¤প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। পরবর্তীতে তিনি মতানৈক্যজনিত কারণে ১৯১৮ সালে কংগ্রেস থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। এবং মধ্যপন্থী হিসেবে হিন্দু-মুসলিম উভয় পক্ষকে একীকরণের জন্য তিনি উদ্যোগী হন। ১৯২১ সালে তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন এবং বাংলায় তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ১৯২১ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত দেশের সেবায় মনোনিবেশ করেন। ৬ই আগস্ট, ১৯২৫; স্যার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৭৭ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া