স্মার্ট ভূমিসেবায় বিড়ম্বনা

9

 

সম্প্রতি স্মার্ট ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৩ পালিত হল। স্মার্ট ভূমিসেবার আওতায় ভূমি উন্নয়ন কর, ই-নামজারী, খতিয়ান (পর্চা) জমির ম্যাপ, ভূমি বিষয়ক পরামর্শ ও ভূমি সংক্রান্ত অভিযোগ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ভূমিসেবা সপ্তাহের আয়োজনে ছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। তাদের ¯েøাগান ছিল : “স্মার্ট ভূমিসেবায় আপনাকে স্বাগতম।” এ উপলক্ষে মোবাইলে বেশ কিছু মেসেজ বার্তাও প্রেরিত হয়। সরকারের এ ধরনের তৎপরতায় আমি যারপর নাই মুগ্ধ হয়ে যাই। গর্ব করতে থাকি তারুণ্যের প্রতীক ভূমিমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভূমি সংস্কার আইন এবং ডিজিলাইশেন কর্মকাÐের জন্য। বিষয়গুলো আমাকে বেশ উদ্বুব্ধ করে। আমি খুব মনোযোগের সাথে এই মন্ত্রণালয়ের কার্যাদি পত্র-পত্রিকায় ও সামাজিক মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। হাজার হোক ভূমিমন্ত্রী আমাদের চট্টগ্রামের। যিনি লেখাপড়া করেছেন উন্নত দেশে। তাঁর পিতা ও চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান ও রাজনীতিবিদ এবং শিল্প উদ্যোক্তা। যাই হোক, দেশের অন্যান্য সাধারণ নাগরিকের মতো আমি বিগত ১৮ জুলাই আমার এলাকার তহসিল অফিসে যাই। ফিরিঙ্গীবাজার তহসিল অফিসটি একটি টিলার উপর। একজন প্রবীণ ও হৃদরোগীর পক্ষে টিলাতে উঠা বেশ কষ্টকর ছিল। আমাদের ভূমি সংক্রান্ত কাজগুলো ডিজিটাল হবে এই ভরসায় বুকবেঁধে সকালে উপস্থিত হলাম। হায় দুর্ভাগা জাতি। গিয়ে প্রথমেই শুনলাম তাদের প্রিন্টার মেশিন খারাপ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বললাম, আমার প্রিন্ট কপি লাগবে না হোয়াস্ট আপে দিলে চলবে। এবার শুরু হল নানা তালবাহানা। সার্ভারে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। ঘণ্টা দুই বসে থাকার পরও সার্ভারে লাইন করা গেল না। ইতিমধ্যে লোকজনের অস্বস্তি ও গুঞ্জন শোনা গেল। তাঁরা বলছেন, আমরা কাজ কর্ম করে খাই। এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলে তো পেটে ভাত জুটবে না। এ মাঝে অবৈধ লেনদেনও হয়ে গেল দু’একটি। আমি জানতে চাইলাম, ইন্টারনেট সার্ভিস কি সরকারি না বেসরকারি। অবাক হয়ে জানতে পারি, নেই হলো বেসরকারি। আশ্বর্য হলাম। সরকারি অর্থাৎ টিএন্ডটি সাবমেরিন ক্যাবলের উন্নত মানের নেট সংযোগ না নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ের অধিক মূল্যের নেট ব্যবহার দেখে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও ভূমি মন্ত্রণালয় কেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আশ্রয়ী মূল্যের নেট ব্যবহার করছে না! এছাড়া অফিস কক্ষের পরিবেশ ও ফাইলিং ব্যবস্থা উন্নত মানের নয়। অফিস কক্ষের আশেপাশে লতাপাতা ঝোপঝাড়ে আক্রান্ত। অথচ তথায় সুন্দর ও নান্দনিক বাগান করা যেত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সবজি বাগান করা যেত। তা না করে পতিত অবস্থায় আছে।
সার্ভারের কথায় ফিরে আসা যাক্ ধারণা করছি, সার্ভার ক্রয়ের সময় দুর্নীতি হয়েছে। তা না হলে জনসাধারণের সুবিধার্থে যেখানে কাজকর্ম চলে সেখানে কেন অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এবং উন্নতমানের সার্ভার ক্রয় করা হলো না। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সার্ভার ক্রয় করা হলে কর্মজীবী মানুষের শ্রমঘণ্টা অপচয় হত না। লোকজন সহজে সেবা গ্রহণ করে সরকারের কর্ম তৎপরতায় খুশি মনে দোয়া করতে করতে বাড়ি ফিরে যেতে পারতেন। আর একটি ব্যাপার আছে। আমার যাওয়া-আসায় একশত টাকা গাড়ি ভাড়া ব্যয় হয়েছে। প্রথম দিন কাজ সারতে ব্যর্থ হয়েছে। জানি না আর কতবার যেতে হবে। তার মানে বারবার ভূমি অফিসে যাওয়া-আসায় আমার মতো অনেকের পকেট হতে গচ্চা যাবে। দেখা গেল, আমার মতো অনেকেই গত কয়েকদিন থেকে কর দিতে এসে ফিরে গেছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে যেহেতু সবকিছু অনলাইন হয়ে গেছে, তবে ভূমি অফিসে যেতে হবে কেন। তার উত্তরে বলবো দেশের আপামর মানুষ অদ্যাবধি সকল ডিজিটাল বিষয়ে পারঙ্গম হয়ে উঠে নি। সরকার যেভাবে আন্তরিকতা নিয়ে সকল বিষয় ডিজিটাল করার চেষ্টা করছে। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এই কার্যক্রমের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত হতে পারবেন। তবে তার আগে দেশের আপামর মানুষকে কায়িকভাবে সেবা দিয়ে উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তা আছে। এছাড়াও অফিস সামগ্রীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। একটি প্রিন্টার বা পিসি নষ্ট হলে অন্যটি ব্যবহারের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া প্রবীণদের অগ্রাধিকার দিয়ে সেবা দিতে হবে। উপরোক্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, ভূমি মন্ত্রণালয় ও সরকারের সুদৃষ্টি দিতে হবে। সাথে সাথে কায়েমী স্বার্থবাদী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দমনের জন্য সিসি ক্যাকেরার ব্যবহার করা উত্তম। আমি নিজ চোকে দেখেছি অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। সন্দেহ জাগবে সার্ভারে ইনপুট দেয়া যাচ্ছে নাÑঅবৈধ অর্থের অপেক্ষায়-যাচাই করা দরকার।

লেখক : কবি, নিসর্গী ও ব্যাংক নির্বাহী (অব)