স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বপ্ন

79

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

বিশ্ববাসীসহ দেশের আপামর জনগণ সম্যক অবগত আছেন, মুক্তির মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপামর বাঙালির আর্থ-সামাজিক বৈষম্য-ঔপনিবেশিক-সাম্প্রদায়িক শৃঙ্খল মুক্তির জন্য বিশাল স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত করেছেন। তাঁরই নেতৃত্বে কঠিন পথ পরিক্রমায় আত্মত্যাগের অসীম বিশালতায় রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি অর্জন করে প্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমি। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন ১৯৭৫ এর বর্বরতম রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ঘৃণ্য সেনা ও স্বৈর শাসকদের কদর্য রাষ্ট্র শাসন তা ধূলিসাৎ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। দীর্ঘ সময় পরে বিগত ১৪ বছর ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেথ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার তথ্যপ্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথ ধরে অপার সম্ভাবনার চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিজয়ে দেশকে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে নেওয়ার বহুমাত্রিক পরিকল্পনা-কর্মকৌশল গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারের প্রতিশ্রæত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
৭ এপ্রিল ২০২২ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এর তৃতীয় সভায় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ভিশন বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছেন। ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট সিটিজেন-স্মার্ট ইকোনমি-স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মৌলিক স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। দেশের প্রতিটি নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ ও উপযোগী, অর্থনীতির সব লেনদেন ও ব্যবহার হবে প্রযুক্তি নির্ভর, সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ও কর্মকান্ডসহ সর্বত্র হবে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আমাদের পুরো সমাজটাই হবে প্রযুক্তি বান্ধব।’ স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার সফল কার্যকারিতা দেশকে কোন পর্যায়ে সমাসীন করবে তা সহজেই অনুমেয়। এই লক্ষ্যে নানা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম ও সরকারের নানামুখী প্রায়োগিক কর্মতৎপরতা অবলোকনে দেশবাসী নতুন আশা-আকাক্সক্ষায় উজ্জ্বীবিত।
ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠনের পাশাপাশি একটি নির্বাহী কমিটিও গঠিত হয়েছে যারা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করবেন। টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কার্যকর রূপান্তরে স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আবশ্যকীয় ব্যবস্থা নেওয়া, আইন ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সকল পর্যায়ে তা কার্যকরণে দিকনির্দেশনা দেবে এই কমিটি। এ ছাড়াও শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি-আর্থিক খাতের কার্যক্রমকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা, স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক-সামাজিক-বাণিজ্যিক-বৈজ্ঞানিক পরিমন্ডলে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিধিমালা প্রণয়ন, রপ্তানির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নীতি প্রণয়ন ও সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গত ৬ ডিসেম্বর ২০২২ টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোটার্স নেটওয়ার্ক (টিআরএনবি) ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবির উদ্যোগে আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ বর্তমান সরকার ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করে কানেকটিভিটি সুদৃঢ় করা, সাশ্রয়ী মূল্যে ডিভাইসের ব্যবস্থা ও মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ানো, ইন্টারনেটের মূল্য কমানোসহ বেশকিছু মতামত ব্যক্ত করেন। তাদের ভাষ্যমতে, দেশে স্কিল-ডাটা কমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ইউনিভার্সিটিগুলোর সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির এবং আইসিটি, তথ্য, টেলিকমসহ মিনিস্ট্রিগুলোকে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। যদি আমার ঘর এবং আমি স্মার্ট না হয়, তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশও সম্ভব হবে না। এজন্য স্মার্ট এডুকেশন, স্মার্ট এগ্রিকালচারের প্রয়োজন।
মূলত রোবোটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো-বায়োটেনোলজি, কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস, থ্রিডি প্রিন্টিং, স্বয়ংক্রিয় যানবহান এবং ক্রমবর্ধমান জটিল কাজে কর্মরত কর্মীদের বুদ্ধিদীপ্ত সহায়তায় প্রয়োজনীয় স্বয়ংক্রিয়করণ প্রযুক্তির নবতর বিকাশে প্রতিভাত চতুর্থ শিল্পবিল্পব ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠায় অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচ্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর প্রভাবে দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন-বিপনন-বাজারজাতকরণে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার পরিলক্ষিত। এটি পৃথিবীর সামগ্রিক গতিপ্রকৃতি ও মানুষের চিন্তা-ভাবনায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। সাধরণত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিস্তার ঘটছে ইন্টারনেটের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোগের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্টদের মতে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা তার পরবর্তী সময়কে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে ডিজিটাল সংযুক্তির জন্য যতটুকু প্রস্তুতির প্রয়োজন, সরকার তার অধিকাংশই সুসম্পন্ন করেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বাহিনী সৃষ্টি এবং পরিবেশ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ধীরে ধীরে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রাগ্রসর সড়কে অগ্রসর হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তি উন্নয়নে সরকার ২০২১ সালে দেশে ৫জি ইন্টারনেট সেবা চালু এবং একই বছর হাওর-বিল-চর ও পার্বত্য অঞ্চলে ক্যাবল বা স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে। ২০২৩ সালে সংযুক্ত হবে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল।
৩ মার্চ ২০২২ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসসি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদানকালে প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করে সে লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা এবং গবেষণা খাতে আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের দেয়া রাজস্ব থেকে আপনাদের ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। যারা ফেলোশিপ পাচ্ছেন, সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা চাই দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তুলতে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ করে উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি শিল্পায়নও আমাদের দরকার। আর শিল্পায়নের ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, সেটা আমাদের ধরা দরকার। তার উপযুক্ত দক্ষ মানবসম্পদও আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’ তিনি আগামী দিনের বাংলাদেশ বা একচল্লিশের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে সকলকে নিবিড় মনোনিবেশ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
১১ নভেম্বর ২০২১ ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজির মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে প্রদত্ত মূল বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে নেতৃত্ব দিতে সবাইকে এক সাথে কাজ করার আহŸান জানিয়ে বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সেই সক্ষমতা আছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বøক চেইন, আইওটি, ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবটিকস, মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইনের মত ক্ষেত্রগুলোতে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। এক সাথে উদ্ভাবনের পথে একযোগে কাজ করতে হবে, তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বমানের সুযোগ সুবিধা নিয়ে দেশে ৩৯টি হাই টেক পার্ক করা হয়েছে। এসব পার্কে বিনিয়োগে কর অব্যাহতি, বিদেশিদের জন্য শতভাগ মালিকনার নিশ্চয়তা, আয়কর অব্যাহতিসহ নানা সুযোগ রাখা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যারা ফ্যাক্টরি বা তথ্য প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগে তৈরি অবকাঠামো সুবিধা নিতে চান তারা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।’ তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে মেউড ইন চায়না বা ভিয়েতনামের মত বাংলাদেশের তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেট, হার্ডড্রাইভে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ দেখা যাবে এবং আইটি শিল্প রপ্তানি এক সময় পোশাক খাতকে ছাড়িয়ে যাবে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি, গবেষণা-উদ্ভাবনী কাজে উৎসাহ দেওয়া এবং ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমির মধ্যে নেটওয়ার্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ ৬ জুলাই ২০২২ উদ্বোধন করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখান থেকেই উদ্ভাবিত হবে নতুন নতুন আইডিয়া যা বাস্তবায়নে রূপদান করার অবারিত ক্ষেত্র হবে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে এই ইনকিউবেটরের ভূমিকা প্রত্যাশিত। প্রসঙ্গত বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বর্তমানে সারাদেশে ৯২টি হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য ৬৪ জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৩টি প্রকল্প অনুমোদিত এবং আরও ৩৪টি জেলায় এটি স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী প্রজন্মকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় উপযোগী করে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ও রোবটিকস সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা দিতে ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার প্রতিষ্ঠা করা হবে। সম্মানিত টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে বর্তমান সরকারের তৈরি করা ডিজিটাল অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে দেশের আপামর জনগণের জীবনমান ও শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে যেতে পারে। আর এভাবেই একসময় বাংলাদেশ চতুর্থ-পঞ্চম শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দেবে। পঞ্চম শিল্প যুগের প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের ৭০ ভাগ তরুণ জনগোষ্ঠীকে তৈরি করতে হবে। দেশে স্থাপিত শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত ডিজিটাল অবকাঠামোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল দক্ষতা প্রদানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এগিয়ে আসার আহŸান জানান।
বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরতœ শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বছরপূর্তি উপলক্ষে ৬ জানুয়ারি ২০২৩ জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সর্বক্ষেত্রে রোবোটিকস-আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স-ন্যানো টেকনোলজি-জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সকল পর্যায়ে গবেষণার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আসুন, স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে আমরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। এ দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাই।’ বস্তুতপক্ষে ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের মহাসড়কে পদার্পণ উল্লেখ্য বিষয়ের আধুনিকায়ন-গুনগত মান পরীক্ষণ-পর্যাপ্ত দুর্নীতিমুক্ত ন্যায়নিষ্ঠ তদারকি ও পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতকরণ-উন্নত বিশ্বের উন্নয়ন পর্যায়ক্রমের সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ-স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উদ্দিষ্ট কার্যক্রমের নিয়মিত মূল্যায়ন ও পুনর্মূল্যায়ন এবং সর্বোপরি দেশপ্রেমে পরীক্ষিত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় ব্যতীত এই অসাধারণ উদ্যোগ কতটুকু সার্থক হবে; এখন থেকেই তারও নৈর্ব্যক্তিক পর্যালোচনা জরুরী। দেশবাসী আশঙ্কা করছেন; কতিপয় মাফিয়া-সন্ত্রাসী-অন্ধকারের শক্তি ছদ্মবেশে সরকার-দল-বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা-প্রতিষ্ঠানে কুকৌশলে সর্বোচ্চ পদ-পদবি দখলে নিয়েছে তাদের দেশবিধ্বংসী কার্যকলাপ কঠোর নজরদারিতে এনে স্তব্ধ করা না গেলে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের দৃশ্যমান কার্যকারিতা দুঃস্বপ্নের দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও রয়েছে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চ.বি