যুবলীগের মতো স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। এ লক্ষ্যে সারাদেশের ইউনিটগুলোতে নিয়মিত কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে এ তিন সংগঠনের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেই। নিজেরা সম্মেলন না করেই কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দলবল নিয়ে যোগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। এ তিন সংগঠনের নিয়মিত কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্ব শূন্যতা বিরাজ করছে চট্টগ্রামে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ থাকলেও চট্টগ্রামের নেতারা চুপচাপ।
এদিকে ক্যাসিনোকান্ডে আলোচিত যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সবগুলো সংগঠনের সম্মেলনই হবে নভেম্বরে। যা শুরু হবে ৬ নভেম্বর কৃষক লীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। এরপর ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলন হবে। অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন শেষে ডিসেম্বরে হবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকতুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের কমিটি গঠনে কোনোরকম নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে নিয়মিত কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও আমাদেরকে নেতারা সেভাবে কিছু বলেননি। আমরা নিজেরাই সম্মেলনে যেতে প্রস্তুত। নেতাদের সাথে বসে একটি সিদ্ধান্ত নিবো। এখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে কেন্দ্রীয় সম্মেলনে যাবো।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগ সভাপতি আতিকুল ইসলাম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘দক্ষিণ জেলায় কৃষক লীগ সুসংগঠিত। বিভিন্ন সময় কৃষকদের দাবি নিয়ে সোচ্চার থাকি আমরা। প্রত্যেক উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান। ইতোমধ্যে ৮টি ইউনিটের মধ্যে পাঁচটির কমিটি গঠন হয়েছে। বাকিগুলো দ্রত করে ফেলবো।’
দলীয় সূত্র জানায়, ২০০২ সালে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ আহব্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি পার করেছে প্রায় ১৭ বছর। এ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে নতুন কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ নেই। ২১ সদস্যের এ কমিটির প্রায় নেতাই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ২০০৬ সালে উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির দুই শীর্ষ নেতাই এখন আওয়ামী লীগে সক্রিয়। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় এ ইউনিটে নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠিত হয়। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করলেও এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলায় কমিটি গঠন হলেও জেলায় সম্মেলনের উদ্যোগ নেই।
চট্টগ্রাম নগর কৃষক লীগের নতুন কমিটি গঠিত হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ৮১ সদস্যের এ কমিটি গঠনের পর থেকে ইতোমধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ড ও দুটি থানার সম্মেলন করেছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলের সব কমিটির সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা নাই। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে গঠিত হয় উত্তর জেলা কৃষক লীগের কমিটি। একই সময়ে দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের কমিটি গঠন হয়। ২০০৩ সালে গঠিত হয় নগর শ্রমিক লীগের আংশিক কমিটি। এ কমিটি ১৬ বছরেও পূর্ণতা পায়নি। দীর্ঘদিন ধরে ঢিলেঢালাভাবে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় শ্রমিক লীগের কমিটির কর্মকান্ডে ভাটা পড়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে জোর দিলেও চট্টগ্রামে কোনো তোড়জোড় নেই। নেতারা নিজেদের সম্মেলনের চেয়ে কেন্দ্রীয় সম্মেলন নিয়ে বেশি সক্রিয়। সম্মেলন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা বলেন, ‘কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নেতারাও চান কমিটি এখন না হোক। কেন্দ্রীয় সম্মেলনে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা টিকিয়ে রাখতেই নতুন কমিটি করবে না। পরে হয়তো কখনো করলেও করতে পারে। আর আমরা পদ ছাড়াই রাজনীতি করে যাবো যুগের পর যুগ।’