স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ‘হোয়াইট-টি’

84

পাতাতেই ঘটে যায় বিপ্লব! আসে সর্বোচ্চ দামের শতভাগ নিশ্চয়তা। চা পাতা পরিপূর্ণভাবে চোখ মেলায় গাছ থেকে তুলে ফেলা হয় সযতনে। একটি একটি করে মমতামিশ্রিত হাতের ছোঁয়ায় এসে কোমল-বন্ধকুঁড়িগুলো ঠাঁই পায় ফ্যাক্টরিতে। তারপর প্রক্রিয়াজাতকরণের পর তৈরি হয় স্বাস্থ্যসম্মত ‘হোয়াইট-টি’। আমাদের চিরচেনা নরমাল চা অর্থাৎ ‘ব্ল্যাক-টি’ কিংবা অপর ভিন্ন একটি প্রক্রিয়ার চা ‘গ্রিন-টি’ থেকে এর পার্থক্য অনেক। ব্ল্যাক -টি এবং গ্রিন-টি দুটোই কিছুটা কালো রঙের। আর হোয়াইট-টি এর পাতাগুলোর মাঝে কিছুটা সাদা রঙের আভা রয়েছে।
অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার এবং বারোমাসি চা বাগানের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হক ইবাদুল বাংলানিউজকে বলেন, এই হোয়াইট-টি তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় চা গাছের একটি বন্ধকুঁড়ি। অর্থাৎ যে কুঁড়ি এখনও প্রস্ফুটিত হয়নি। সেই বন্ধ কুঁড়িগুলোকে একটি একটি করে চা গাছ থেকে তুলে প্রক্রিয়াকরণের পরই এই বিশেষ চা তৈরি হয়। এই বন্ধ-কুঁড়িগুলো দিয়েই তৈরি হয় ‘হোয়াইট-টি’।
চায়ের রঙ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই চায়ের রঙ পিত-হলুদ বা পিতলের মতো হলুদ। এর মূল রঙটা সবুজ ও হলুদ রঙের মাঝামাঝি। একে হোয়াইট-টি বলার কারণ হলো এর গায়ে সাদা লোম রয়েছে। একে কেউ কেউ বলেন ‘সিলভার নিডল হোয়াইট-টি’ বা রূপার সুঁইয়ের মতো সাদা চা। পাতা চয়নের পদ্ধতি প্রসঙ্গে হক ইবাদুল বলেন, এ চায়ের পাতা উত্তোলনে নেওয়া হয় কঠিন মান নিয়ন্ত্রণ। পাতায় কোনো পানি থাকতে পারবে না। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে পাতা চয়নের কাজ শেষ করতে হবে। পাতা উত্তোলনের সময় হলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চ।
উপকার সম্পর্কে অভিজ্ঞ এই টি-প্লান্টার বলেন, ‘হোয়াইট-টি’ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা তারুণ্য বজায় রাখে এবং ক্লান্তি দূর করে মনকে ঝরঝরে করে তোলে। আরও একটি বিশেষ গুণ হলো এই চা ফ্যাট বা চর্বি কমায়। তবে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এর বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৭ হাজার টাকা। পিত-হলুদ রঙের চা পাতা।
বাংলাদেশে অন্য চা প্রতিষ্ঠানগুলো এটি তৈরি করছে এবং বাণিজ্যিকভাবে বিদেশে রফতানিও করছে। আমাদের টিকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানির বারোমাসি চা বাগান ‘হোয়াইট-টি’ পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই এটি বাজারজাত করা হবে-বলেন ইবাদুল।
‘হোয়াইট-টি’ বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে এই চা গবেষক আরও বলেন, এক কাপ পরিমাণ পানি কেতলিতে নিয়ে গরম করতে হবে। গরম পানিতে প্রথম বুদবুদ উঠার সঙ্গে সঙ্গে সেই পানি একটি কাপে ঢালতে হবে। তারপর এর মধ্যে ২ দশমিক ৩ গ্রাম বা এক টেবিল চামচ পরিমাণ হোয়াইট-টি দিয়ে পাঁচ মিনিট রেখে দিতে হবে। পাঁচ মিনিট পর ছাঁকলেই তৈরি হয়ে যাবে অত্যন্ত উপকারী হোয়াইট-টি।
সাধারণ চা বা ‘ব্ল্যাক-টি’ এর চেয়ে ‘গ্রিন-টি’র মধ্যে চারগুণ মানবদেহের উপকারী ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ থাকে। আর ‘হোয়াইট-টি’তে ‘গ্রিন-টি’র চেয়েও তিনগুণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বলে জানান চা বিশেষজ্ঞ হক ইবাদুল। সূত্র : ইন্টারনেট