নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে কোভিডে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৩০ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ হয়। এদের মধ্যে ৭৫৭ জন নগরের ও ১৭৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এদিন নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ নিয়ে চট্টগ্রামে পর-পর দ্বিতীয় দিনের মতো নয়শ’র বেশি করোনা রোগী শনাক্তের খবর জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭৬ জনের। একইসময়ে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১ হাজার ৩৪২ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তদের মধ্যে উপজেলার বাসিন্দা ১৭৩ জন। এরমধ্যে লোহাগাড়ার ১০ জন, সাতকানিয়ার ১৩ জন,বাঁশখালীর ৪ জন, আনোয়ারার ৩ জন, চন্দনাইশের ১ জন, পটিয়ার ১০ জন, বোয়ালখালীর ২৩ জন, রাঙ্গুনিয়ার ১৩ জন, রাউজানের ১৫ জন, ফটিকছড়ির ১০ জন, হাটহাজারীর ১৬ জন, সীতাকুÐের ৪২ জন, মিরসরাইয়ের ৪ জন এবং স›দ্বীপের বাসিন্দা ৯ জন।
এদিকে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি মাথায় রেখে চট্টগ্রামকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (রেড জোন) জেলা হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকা ও রাঙামাটিসহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (রেড জোন) জেলার এ তালিকায় মোট যোগ হয়েছে ১২ জেলা।
চট্টগ্রামে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে কেন ? : চট্টগ্রামে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে। গত ১০ দিনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৩ হাজার ৪১০ জন। ২০ জানুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৮ হাজার ৩৭৬ জন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর এক হাজার ৭৭টি নমুনা পরীক্ষায় তিনজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদিন শনাক্তের হার ছিল ০.২৮ শতাংশ। এরপর থেকে ক্রমে বেড়ে চলেছে সংক্রমণ। স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং উদাসীনতার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, এখন চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত জাতীয় পর্যায়ের শনাক্তের হারের চেয়ে বেশি। মানুষ কিছুই মানছে না। বিভিন্ন নির্বাচনের কারণে লোকসমাগম, বিনোদন স্পটগুলোতেও লোকজনের ভিড়। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও কিছু মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানার কারণে গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ অনেক বেড়ে গেছে। এটা অ্যালার্মিং। যারা মুখে মাস্ক পরছেন, তারাও ঠিকভাবে দিচ্ছেন না।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, বিভিন্ন জেলার মানুষ ব্যবসা-পর্যটনসহ অন্যান্য কাজে যাতায়াত করছেন এখানে। এই মুহূর্তে সংক্রমণ উচ্চগতিতে। আপাতত মৃত্যু কম হলেও এই সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। ফলে সবাইকে খুবই সতর্ক হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানতেই হবে। আমাদের অর্থনীতির চাকাও সচল রাখতে হবে। সব কিছু মেনেই সংক্রমণ কমিয়ে আনতে হবে।
এদিকে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবেলায় ১১ দফা নির্দেশনা দেয় সরকার। এ নির্দেশনা প্রতিপালনে গত শনিবার থেকে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়। তবে এতেও স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা নাগরিকদের। নির্দেশনা অমান্য করে নগরীর বিভিন্ন খোলা জায়গায় হচ্ছে জনসমাগম।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। আজ (বৃহস্পতিবার) স্বাস্থ্যবিধি না মানায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে ১৫ জনকে ৩ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি মাস্কহীন মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করছি। একইসাথে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ৮ স্থানে মাইকিং করা হয়েছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পাশাপাশি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে বলে জানান। গতকাল ঢাকায় জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে সরকার ‘আতঙ্কিত’ না হলেও বিষয়টি ‘আশঙ্কাজনক’। সংক্রমণ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসকদের বলেছি, ‘আপনারা গতবার যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেছেন এবারও করতে হবে। ওমিক্রনের কারণে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এগুলো বাস্তবায়নের মূল হাতিয়ার জেলা প্রশাসন।
তিনি বলেন, বাসে, ট্রেনে, স্টিমারে যখন লোক চলাচল করবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে; সামাজিক দূরত্ব যতটুকু সম্ভব মানতে হবে। বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। বিভিন্ন বন্দরে স্ক্রিনিং চলছে সেগুলো যেন তারা ঠিকমতো দেখেন। যারা কোয়ারেন্টাইনে আছেন তারা অনেক সময় এটা ঠিক মতো মানেন না। এ বিষয়ে নজরদারি করতে বলেছি। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।