স্বাভাবিক হয়ে উঠছে তুমব্রু সীমান্ত পরিস্থিতি

25

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৬৪.৭৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি ইউনিয়ন ঘুমধুম। এখানে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার মানুষের বসবাস। গত এক মাস ধরে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাগুলির আওয়াজে এপারের মানুষেদের ভয় কাজ করেছে বেশ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বাঁচার তাগিদে ভয় বা আতংক দূরে ঠেলে মানুষ এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যদিওবা ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মাঝে সংঘাত চলমান রয়েছে।
তুমব্রæ এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ, মাহমুদুল হাসান, ফখরুদ্দীন, মোহাম্মদ হোসেন জানান, গত একটি মাস সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শুনতেছি। প্রথম প্রথম একটু ভয় কাজ করতো। কিন্তু এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখন আর ভয় কাজ করে না। স্বাভাবিকভাবেই জীবন-যাপন করতে শুরু করেছি।বাঁইশফাঁড়ি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইবরাহিম জানান, পাহাড়ের পেছনে প্রতি দিনই গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। তবে এখন আর ভয় কাজ করে না। কারণ, সীমান্তে গোলাগুলি এখন নিত্যদিনের ঘটনায় রূপ নিয়েছে।
জানা যায়, গত পাঁচ বছর ধরে তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কোনার পাড়ায় বসবাস করছে ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। সম্প্রতি মর্টার শেল-গোলা ছোড়ার পাশাপাশি সীমান্তে হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণের ঘটনায় জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের ওপরও চলাচলে সতর্ক করেছে সেখানকার দায়িত্বে থাকা বিজিবির সদস্যরা। এখানে লোকজনের চলাচলে সতর্ক করা হয়েছে। জরুরি না থাকলে এখানকার লোকজনকে ঘোরাফেরা না করতে বলা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টের ৩৯-৪১ নম্বর পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্থানীয় লোকজনের ২০ টিরও বেশি রাবার বাগান আছে। এতে শ্রমিক আছে ৩ হাজারেরও বেশি। ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেল রাবার বাগানের পাশে পড়ার পর সরিয়ে নেওয়া শ্রমিকরা চার দিন আগে কাজে ফিরে গেছে। আতংক কাটিয়ে এখন স্বাভাবিকভাবেই কাজ শুরু করেছে তারা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম জানান, সোমবার (গতকাল) সকাল থেকে কোনো গোলাগুলির আওয়াজ শুনা যায়নি। কিন্তু গত এক মাস ধরে সীমান্তে গুলির আওয়াজ শুনা মানুষগুলো বেশিরভাগই চাষাবাদ করে সংসার চালায়। বর্তমানে অনেকে বেকার অবস্থায় আছেন। ভয়ে সেখানে তারা যাচ্ছে না। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরাও চলাচলে সতর্ক করেছে।
তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শাহজাহান জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে সীমান্তে গোলাগুলির কারণে শুধু তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, ঘুমধুম ইউনিয়নের প্রায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৩০ শতাংশ কমে গেছে। সীমান্তের এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি আরও কমে যাবে বলে জানান তিনি।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্তে প্রায় ১ মাস ধরে চলছে গোলাগুলি। কোনো পরিবর্তন আসেনি। মিয়ানমার আইন লঙ্ঘন করেই চলছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এলাকার মানুষের অনেক সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে চাষিরা কষ্টে আছেন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
সীমান্তের বিভিন্ন দিক দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢোকার অপেক্ষায় থাকার বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় এলাকাবাসীদের আতংকিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।