স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গিকার

21

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

স্বাধীনতা। চারটি অক্ষরের এই শব্দটির মাঝে জড়িয়ে আছে কত ভাষা, কত অভিব্যক্তি তা বলে শেষ করা যাবেনা। স্বাধীনতা একটি শর্ত- যেখানে একটি জাতি, দেশ বা রাষ্ট্র বা জায়গা যেখানে জনগণ থাকবে। থাকবে নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা এবং সাধারণত কোন অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব থাকবে। স্বাধীনতার বিপরীত পরাধীনতা। স্বাধীনতা মানে যা খুশি তা করা নয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্বাধীনতা অর্জনে কষ্ট করেছে, সংগ্রাম করেছে। আমরাও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু করে সুদীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের কাছ থেকে পেয়েছি স্বাধীনতা। মুক্তির উল্লাসে মেতেছিল এ দেশের কোটি কোটি জনতা। স্বাধীনতা অর্জন হওয়ায় মানুষের উৎসাহ, উদ্দীপনা, মুক্তির মিছিল জানান দেয় স্বাধীনতার মানে কী। স্বাধীনতা দিবসে আমরা নানা অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে তা প্রতি বছর আড়ম্বরভাবে উদযাপন করে থাকি। গত বছর বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাস রোগের কারণে জাতীয় অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের কর্মসূচি বাতিল করা হলেও এবার নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালন করা হবে। কারণ এবার দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তী। তাছাড়া, সুবর্ণজয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বিশ্বের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশকয়েকজন যোগ দিয়েছেন। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান একসাথেই পালিত হচ্ছে এবার।
মানুষ সগৃহে বাস করার যে আনন্দ পায় পরের গৃহে বাস করে তার কোন কিছুই পাওয়া সম্ভব নয়। নিজের ভাংগা কুঁড়ে ঘরে যে সুখ তা আর কোথাও থাকেনা। এজন্য নিজের বাসগৃহে বেঁচে থাকার স্বাধীনতার তুলনা হয়না। এতেই তার সুখ। এই সুখ, দুখ নিয়েই তার জীবন। এতে তৃপ্ত হয় সে। স্বাধীনতা মানে অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকা।
স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে আমরা নাগপাশে বন্দী ছিলাম। তা থেকে উত্তরণের ধাপে ধাপে আমাদের রক্ত ঝরেছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে অধিকারহীন ছিল এ দেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মানুষ। নানা শোষণ, নির্যাতনে হাঁপিয়ে উঠেছিল তারা। তারা মুক্তি চেয়েছিল। বন্দীদশা থেকে মুক্তি! নানা চড়াইউৎরাই পেরিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা এনেছিল। স্বাধীনতা অর্জনের মাহেন্দ্রক্ষণে মানুষের আবেগ, অনুভূতি ছিল সীমাহীন। মুক্ত আকাশে যেন ডানা মেলে উড়তে চায় তারা। মুক্তির সেই স্বাদ ছিল বড়ই মজার, বড়ই তৃপ্তির। কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষ যেমন আবেগে, মুক্তির আনন্দে ফেটে পড়ে তেমনি এদেশের মানুষ আবেগঘন ভাবে ফেটে পড়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে।
বাংলােদশ রাষ্ট্র জন্মের পর নিজের ভাষায় কথা বলা, মুক্তভাবে চলাফেরা, চাকরি-বাকরিতে নিজেদের লোক নিয়োগ, পারষ্পরিক আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ, পারস্পরিক সৌহার্দ প্রকাশ, ভোটাধিকার প্রয়োগ, স্বাধীন মত প্রকাশসহ সবক্ষেত্রে স্বাধীনতার সুফল পরিলক্ষিত হয়। যদিও নানা সময় মানুষের অধিকারকে হরণ করার চেষ্টা হয়। এরপরও এই যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি কষ্ট করে তা ধরে রাখতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক একটি স্বদেশ গড়ার যে স্বপ্ন ছিল তা থেকে আমরা কিন্তু আজও অনেক দূরে। কথায় আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা অনেক কঠিন। সেজন্য স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে যে স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার তা বাস্তবায়নে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সার্বজনীন সুযোগ-সুবিধার বাইরে এখনও দেশের অগণিত মানুষ। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বারবার। নারী, শিশুসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়েছে, হচ্ছে। বেপরোয়া সন্ত্রাসীরা। দেশের কিশোর যুবকদের একটি অংশ এসব সন্ত্রাসের সাথে নিজেদের জড়িয়েছে। তারা ফেসবুক -ইন্টারনেটে মেতে অলস হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। মাত্রা ছড়াচ্ছে দুর্নীতি। এসব দেখলে একসময় স্বাধীনতার সুখ কী তা বোঝা মুশকিল হয়ে উঠে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশের স্বাধীনতার ভিত মজবুত করতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার অন্য কোন অপশন নেই। সবাই মিলে দেশটাকে গড়ে তুলি নিজেদের মতো করে। স্বাধীনতার সুফল পরিপূর্ণভাবে পেতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। স্বাধীনতার এই সুবর্ণ জয়ন্তীতে একটি সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প নিতে হবে। দেশের মানুষের আশা, আকাক্সক্ষা পূরণে এগিয়ে যেতে হবে দৃঢ়চিত্তে।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক