স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাষ্ট্রনায়কদের বাংলাদেশ সফর বৈদেশিক সম্পর্ক বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে

20

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৭ মার্চ থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ, প্রতিনিধি, কূটনেতিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং সংস্থার প্রতিনিধি ও বিশেষ দূত। ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেদ, ওআইসির চেয়ারম্যান, জাতিসংঘের প্রতিনিধি নিজ নিজ দেশ ও দপ্তর থেকে শুভেচ্ছা বাণী প্রেরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে মানুষের মুক্তি সংগ্রামে তাঁর অবদানকে স্বীকার করছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ইতোমধ্যে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপালের রাষ্ট্রপ্রধান ও জাতিসংঘের ইউনেস্কো প্রতিনিধি প্যারেড গ্র্যাউন্ডে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন। এরপর রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিসহ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এসময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিও স্থান পায়। এ উপলক্ষে দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী। শ্রীলঙ্কা ও নেপালের রাষ্ট্র নাযকদ্বয়ের সাথে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা ও বৈঠক শেষে বাংলাদেশের সাথে দেশ দুটির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বাণিজ্যি, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মরকে স্বাক্ষর হয়। বিশেষ করে, শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীর এ সফর বাংলাদেশ-শ্রীলংকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও বেগবান করবে বলে মনে করি আমরা। সফরকালে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে যুব উন্নয়ন বিষয়ক একটি নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময়, কৃষি উন্নয়ন, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা প্রশিক্ষণ, রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা এবং কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক ৫টি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে অগ্রাধিকার বাণিজ্য ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি, কোস্টাল শিপিং চুক্তি, আকাশপথে যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে ‘কানেক্টিভিটি’র ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বস্তুত কানেক্টিভিটি হচ্ছে এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ। এ বাস্তবতা সামনে রেখেই বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনঅধ্যুষিত দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের জনগণের সার্বিক উন্নতির জন্য ‘সার্ক’ গঠিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান বিশ্ব সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক সহযোগিতার বিশ্ব। বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্রই অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারে আন্তরিক। দক্ষিণ এশিয়ার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমিতে দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ সুরক্ষা, সন্ত্রাস প্রতিরোধ, কৃষি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও জনসেবাসহ বিভিন্ন খাতে আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার ও বেগবান করা উচিত। আমরা আমাদের পণ্য বিক্রির জন্য অন্য দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় পণ্যের বাজার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়ার লক্ষ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্যের পরিসর বাড়ানো গেলে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না, তা বলাই বাহুল্য।
বিপদে-আপদে সবার আগে যারা ছুটে আসে এবং যা করণীয়, তা সাধ্যমতো করার চেষ্টা করে-তারাই হলো প্রতিবেশী। পড়শির সঙ্গে রক্তের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও আত্মায়-আত্মায় নিবিড় সংযোগ থাকে। ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রাখার যেমন বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে, অনুরূপ খ্রিষ্টধর্মেও। যীশু বলেছেন, ‘প্রতিবেশীকে আপনার মতো প্রেম করিও।’ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সবসময়ই সচেষ্ট। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা আগে থেকেই পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এ ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়েও আমরা কাজ করতে পারি। এছাড়া সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়েও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর ফলে অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচার নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে এবং বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ লক্ষ্যে পারস্পরিক কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করা হবে, এটাই কাম্য।