স্বাধীনতার পূর্বে চট্টগ্রামের যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা : একটি পর্যালোচনা

27

শৈবাল বড়ুুয়া

শেষ অংশ

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভের পর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়নের সাথে সাথে আরো অন্যান্য অঞ্চলের সাথে বাস সার্ভিস চালু হয়। শহর এলাকায় ১নং ও ২নং রুটে বাস সার্ভিস চালু করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম-কুমিরা রুটে পেট্রল চালিতি বাস চালতে শুরু করে। ডিজেল চালিত বাস আমদানি হবার পর দূরবর্তী অঞ্চলে অর্থাৎ চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি এবং চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সার্ভিস চালু হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর উক্ত বাস সার্ভিসের আরো উন্নয়ন সার্ধিত হয়। বর্তমানে বিবিভিন্ন রুটে ব্যক্তিগত মালিকানায় বহু সংখ্যক জিডেল চালিতি দ্রæতগামী বাস চালু আছে। পূরবর্তী বাস রুটে গুলো ছাড়াও বর্তমানে চট্টগ্রাম-কুমিল্লা, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-মাাইজদী, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে আন্তঃজেলা দ্রæতগামী কোচ সার্ভিস চালু আছে। এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংষ্থার বেশ কিছু সংখ্যক বাস চালু আছে। সড়ক পরিবহন সংস্থার বাসগুলো আন্তঃজেলা যাতায়াত করে এবং চট্টগ্রামের অভ্যন্তরেও চালু রয়েছে।
এছাড়াও কিছু সংখ্যাক অটোরিক্সা, রিক্সা এবং ট্যক্সি চালু থাকায় নিকটবর্তী এলাকায় যাতায়াত করারও সুবিধাজনক হয়েছে। বর্তমানে দূর পাল্লার যাত্রাপথে ডিজেল চালিত সুপিরিয়র কোচ চালু আছে। এ কোচসমূহ দ্রæতগামী এবং আকারে বেশ বড়। এছাড়া আছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ‘রেন্ট-এ-কার’ (জঊঘঞ অ ঈঅজ) সার্ভিস। দেশি এবং বিদেশি সৌখিল পর্যটকদের চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করার জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সৌখিন বাস চালু আছে।
বাংলো এবং রেস্ট হাইজ :
এক স্থানের সাথে অন্য স্থানের যোগাযোগ ব্যভস্থা সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে সে সব স্থানে সংক্ষিপ্ত অবস্থান এবং অবাাসিক ব্যবস্থার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণ চট্টগ্রামের জন্য এর গুরুত্ব আরো অত্যাধিক। তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে চট্টগ্রাম জিলা পরিষদ, বিভিন্ন থানা সদরে এবং অন্য্যা দর্শীয় স্থানে পরিদর্শন বাংলো স্থাপন করে। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামের সীতাকুÐ, মিরশ্বরাই, রোজারগঞ্জ এবং ধূম এলাকায় রেস্ট হাউস স্থাপন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বিভিন্ন স্থানে সংক্ষিত যাত্রাবিরতি বা অস্থায়ী আবাসস্থল নির্মাণ করে এই সমস্যা বহুলাংশে হ্রাস করেছে। চট্টগ্রামের বিবিন্ন আদলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বন বিভাগ, রেল বিভাগ এবং অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক বহু রেস্টহাউস নির্মিত হয়েছে। পাকিস্তানি শাসনামলে চট্টগ্রামের কেন্দ্রস্থলে স্থাািপত সার্কিট হাউসটি প্রভূত উন্নয়ন সাধনের পর বর্তমানে প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী এবং পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণের সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতির স্থান রূপে ব্যবহৃত হচেইছ।
এছাড়া চট্টগ্রামে ব্যক্তিগত মালিকানায় চালু আছে কিছু সংখ্যক আবাসকি হোটেল। এর মধ্যে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ হোটেল, হোটেল শাহজাহান, হোটেল সফিনা, হোটেল মিসকা এবং কক্সবাজারের হোটেল সাইমন উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পেআরেশন চট্টগ্রামের কেন্দ্রস্থলে স্থাপন করেছে আবাসিক হোটেল সৈকত। এছাড়া কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে আছে পর্যটন কর্পোরেশনের সুসজ্জিত মোটেল এবং কটেজসমূহ।
ডাক, তার এবং টেলিগ্রাফ যোগাযোগ :
চট্টগ্রামর্ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত চট্টগ্রাম প্রধান ডাকঘর (এচঙ) একটি প্রথশ শ্রেণির ডাকঘর। ১৭৯৪ সনে চট্টগ্রাম এবং কোলকাতার মধ্যে প্রথম দৈনিক ডাক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বর্তমানে এই প্রধান ডাকঘরের নিয়ন্ত্রণে ১১৭টি সাব-অফিস এবং ৩৬১টি শাখা অফিস রয়েছে।্ ইে সাব অফিস এবং শাখা অফিসগুলো চট্টগ্রাম জেলার সকল থানা সদর এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহের সাথে ডাক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জিপিও’র নিয়ন্ত্রণে শহর এলাকায় ৪০টি ডাকঘর কাজ করে চলেছে।
ডাক বিভাগের পরেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে টেলিফোনে এবং টেলিগ্রাফের গুরুত্ব দেখা যায়। পাকিস্তান শাসনামলেই চট্টগ্রামের কেন্দ্রস্থলে টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই এই অফিস চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে ও বাহিরে টেলিফোন ও টেলিগ্রাফের যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বাংলাদেশে টেফিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড গঠিত হয়, এবং ্টইে বোর্ড আমাদের এই নব্য স্বাধীন দেশের টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন যোগাযোগ সুষ্ঠুভাবে রক্ষা করে চলেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহর এলাকায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় এক্সচেঞ্জ, নন্দনকানন, আগ্রাবাদ এবং বায়েজিদ বোস্তামী এক্সেচেঞ্জসমূহ কাজ চলেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন মহকুমা এবং থানা সদরে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও পাবলিক কল অফিস স্থাপন করে টেলিফোন বোর্ড আইে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো গতিশীল করে তুলেছে। টেলিফোন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রাম জেলারয় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও পাবলিক কল অফিসসমূহ হল ১. কক্সবাজার, ২. রামু, ৩. বাঁশখালী, ৪. লোহাগাড়া, ৫. দোহাজারী, ৬. ডুলাহাজারা, ৭. পটিয়া, ৮. উখিয়া, ৯. টেকনাফ, ১০. হ্নীলা, ১১. চিরিঙ্গা, ১২. সাতকানিয়া, ১৩. বৈলছড়ি, ১৪. কধুরখিল, ১৫. হাটহাজারী, ১৬. নাজিরহাট, ১৭. রাউজান, ১৮. রাঙ্গুনিয়া,০০০০০০০০০০০০০০০০ (২৪. শান্তিরহাট, ২৫. করেরহাট প্রভৃতি। এছাড়া চট্টগ্রামের সাথে ঢাকা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সাথে ট্রাঙ্ক যোগাযোগ আছে।
টেলিগ্রাফ এবং টেলিরেফান বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত অন্য একটি যোগাযোগ মাধ্যম হল টেলিগ্রাফ। চট্টগ্রামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রধান টেলিগ্রাফ অফিস থেকে চট্টগ্রাম এবং অভ্যন্তরে এবং বাহিরে যে কোন স্থানে যে কোন সময়ে টেলিগ্রাফ প্রেরণ করা চলে। চট্টগ্রাম এর অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে সাব টেলিগ্রাফ অফিসসমূহ হল ধ আছদঞ্জ, মহেশখালী, হাজী ক্যাম্প (পাহাড়তলী), বাড়বকুÐ, কক্সবাজার, পটিয়া, সাতকানিয়া, হাটহাজারী, সদরঘাট, পতেঙ্গা বিমান বন্দর। এছাাড় পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই, চন্দ্রঘোনা, রাঙামাটি এবং বান্দরবান স্থানসমূহের সাথে চট্টগ্রাম প্রধান অফিসের সরাসরি টেলিগ্রাফ যোগাযোগ চালু আছে। চট্টগ্রাম প্রধান অফিসের সাথে অন্যান্য জেলা প্রধান অফিসের টেলিগ্রাফ যোগাযোগ সরাসরি চালু থাকায় যেকোন সময়ে যে কোন জেলা সদরের সাথে চট্টগ্রাম এর টেলিগ্রাফ যোগাযোগ সম্ভব। এছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় টেলিগ্রাফ অফিসের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাথে বহির্বিশ্বের টেলিগ্রাফ যোগাযোগ চালু আছে।
রেডিও ও ওয়্যার‌্যাস যোগযোগ : তৎকালীন পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামে রেডিও স্টেশন চালু ১৯৬৩ সনে। তখন এই কেন্দ্র মাত ্র১০ কিলো ওয়াট শক্তিসম্পন্ন ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এই কেন্দ্রকে ১০০ কিলো ওয়ার্ড শক্তিসম্পন্ন করা হয় এবং এর প্রচার পরিধি আরো বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ রেডিওর চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার জন্য রাঙামাটিতে একটি সম্প্রচার কেন্দ্র চালু করা হয় এবং উক্ত সম্প্রচার কেন্দ্র রেডিও বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
১৪৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর চট্টগ্রামের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আর একটি অগ্রগতি সাধিত হয়েছে ।বেং তা হল বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম সম্প্রচার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা। বর্তমান সরকার ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রামে উক্ত মাইক্রোওয়েভ সম্প্রচার কেন্দ্র চালু করে এই অঞ্চলের জনগণের বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ করে দিয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পতেঙ্গায় নিজস্ব ওয়ারল্যাস সেট বা বেতার যোগাযোগের মাধ্যমে সর্বক্ষণ রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
উপসংহার :
নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যরে রাণী বার আউলিয়ার স্থান এই চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বর্তমানে যে বহুলাংশে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বর্তমান শাসকগোষ্ঠি এই অঞ্চলের তথা সমগ্র বাংলাদেশের যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্তমানে যে বহুলাংশে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বর্তমান শাসকগোষ্ঠি এই অঞ্চলের তথা সমগ্র বাংলাদেশের যানবাহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। আগামী দ্বিতীয় পাঁচসালা, পরিকল্পনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধনের জন্য বর্তমান সরকার সে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবায়নের ফলে চট্টগ্রাম জেলায়ও যোগাযোগের সুবিধার জন্য আরো বহু সংখ্যক সড়ক ও জনপথ নির্মিত হবে বলে আশা করি। রেল এবং বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো আধুনিকীকরণ কর াহবে। জনগণের বৃহত্তর সেবার লক্ষ্যে চালু হবে উন্নতমানের দ্রæতগামী আরো বহুসংখ্যক যানবাহন।

লেখক : অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা