স্বাগতম মাহে রমজান

7

আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী

আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি পরম দয়ালু করুণাময়। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মাহে রমজান দান করেছেন। রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের বার্তা নিয়ে আবার এসেছে মাহে রমজান। সু-স্বাগতম পবিত্র মাহে রমজান। ওহে তাক্ওয়া অর্জনের মাস স্বাগতম, ওহে গুনাহ মাফের মাস তোমায় সহস্র মোবারকবাদ, বিশ্ব মুসলিম সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এ পুণ্যময় পুতপবিত্র মাসের। অসংখ্য ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ মাস এটি। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘ রমজান মাস, যাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে । মানব জাতির হেদায়তের জন্য এ গ্রন্থখানা সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।’ পবিত্র কোরানে আরবি বারো মাসের মধ্যে একমাত্র রমজান মাসের নাম উল্লেখ আছে। সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও অন্যান্য আসমানী কিতাব এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। এ কারণেও এ মাস শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন গঠনের মাধ্যমে খাঁটি মুমিনে পরিণত করাই রমজানের সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য। রোজা আদায়ের দ্বারা মুমিন বান্দার সমস্ত পাপ ধুয়ে-মুছে পবিত্র হয়ে যায়, দেহ-মনে পুতঃপবিত্র হয়। আত্মিক (আধ্যাত্মিক) উন্নতি তথা মনের পবিত্রতা লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয় সিয়াম-সাধনা। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি, প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ এবং ইবাদতের প্রতি অধিক মনোনিবেশ করার ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত হয়।
নাফ্স ও রুহের সমন্বিতরূপই জীবন। নাফস্ খানাপিনার দ্বারা শক্তিশালি হয়, পক্ষান্তরে রোজার দ্বারা নাফস্ দুর্বল হয় ফলে আত্মা শক্তিশালী হয়ে ইবাদতের প্রতি উৎসাহী হয়।
মুসলমানদের পাপমুক্ত করে সুন্দর, সুস্থ ও পবিত্র জীবন গঠনের সুযোগ দানের জন্যই মহান আল্লাহর পক্ষ হতে এক অনন্য নেয়ামত রমজানুল মোবারকের এ মাস।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমযানের চাঁদ উদয় হওয়ার সাথে সাথে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। অপর বর্ণনায় রয়েছে বেহেস্তের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয় দোজখের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শিকলাবদ্দ করা হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে রহমতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেওয়ার অর্থ হলো রহমত নাজিল করা এবং বেহেস্তের দরজাসমূহ খুলে দেওয়ার অর্থ হলো ভাল কাজের তাওফিক দেওয়া, যা বেহেস্তে প্রবেশ করার উসিলা হয়। ‘শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয়’ এর ব্যাখ্যায় হাদীস বিশারদ মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন- শয়তান রমযান মাসে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে তেমন সুযোগ পায়না যেমন সুযোগ অপর মাসে পায়। কেননা রমযান মাসে রোজাদার কোরআন তেলাওয়াত ও অপরাপর ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে। ফলে কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ হয়। এ মাসে নেক কাজের এমন বায়ু প্রবাহিত হয় যে,মন আপনা আপনি নেক কাজের জন্য প্রস্তত হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলার ঘোষক নেক কাজে লিপ্ত বান্দাদের পিঠ চাপড়িয়ে চাপড়িয়ে সম্মুখে অগ্রসর করে। এমতাবস্থায় মুমিন বান্দা অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে সৎকাজে আত্মনিয়োগ করে। তইতো পবিত্র রমজান মাস আসলে মুসলমান সমাজে এক অপার্থিব আনন্দের সূচনা হয়। দেখা যায় রমযান মাসে ছোট বড় সকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে একাগ্র হয় প্রফুল্ল মন নিয়ে। সাথে সাথে রাতের বেলা তারাবীর বিশ রাকাত নামাজ আদায় করে। মুসলমানদের মাঝে ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। বিগত দুই বছর মাহে রমজান এসেছিল করোনা মহামারি অবস্থায়। এবার সর্বশক্তিমান আল্লাহর দয়ায় করোনামুক্ত পরিবেশে মাহে রমজানের রোজা আদায়ের সুযোগ হয়েছে। এটা আমাদের পরম সৌভাাগ্য। আমরা এর শোকরিয়া আদায় করব। বরকতপূর্ণ আল্লাহর মেহমান রমজান মোবারককে যথাযথ সম্মান করব। আল্লাহ আমাদের সকলকে যথাযথভাবে রোজা আদায়ের মাধ্যমে সিয়াম-সাধনার উদ্দেশ্য পূরণের তৌফিক দিন- আমিন।