স্বাক্ষর-টিপসইয়ে ক্ষোভ ক্রেতাদের

36

মনিরুল ইসলাম মুন্না

করোনা মহামারির কারণে দিনদিন চাহিদা বাড়ছে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) কর্মসূচি চাল-আটার। খাদ্য অধিদপ্তর পরিচালিত ওএমএস দোকান/ট্রাকসেল কেন্দ্রগুলোর সামনে প্রতিদিনই মেহনতি মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। বাজারদরের অর্ধেক মূল্যে ওএমএসের চাল ও আটা কিনছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও শ্রমহারা খেটে খাওয়া মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তরাও আসছেন লাইনে। আর এসব পণ্য কিনতে ডিলারদের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে স্বাক্ষর ও টিপসই। এ নিয়ে অস্বস্তি ক্রেতাদের। কারই এমনিতে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে, তার উপর স্বাক্ষর, টিপসই ও নাম-ঠিকানা নিতে গিয়ে আরও সময়ক্ষেপণ করছেন সংশ্লিষ্ট ডিলাররা। এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ জানিয়ে বিক্রি প্রক্রিয়া আরও সহজ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।
লালখান বাজার এলাকায় ট্রাকের সামনে দাঁড়ানো ক্রেতা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় রয়েছি পণ্য নিবো বলে। কিন্তু পণ্য নেয়ার পর নাম, ঠিকানা, স্বাক্ষর ও টিপসই নিতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। যদি এটা না হতো তবে আরও অল্প সময়ে পণ্য নিয়ে চলে যেতে পারতাম।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ায় দেশব্যাপী লকডাউন চলছে। তা আগামী আগস্ট পর্যন্ত চলবে। তাই লকডাউনে খেটে খাওয়া, নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য নগরীর তিনটি পয়েন্টে বিশেষ ওএমএস কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। যদি লকডাউনের সময় বাড়ে বিশেষ ওএমএস এর সময়ও বাড়বে। তবে সাধারণ ওএমএস এর ডিলারগণ নিয়মিত পণ্য বিক্রি করছেন। বর্তমানে নগরীতে ১৫টি ডিলার পয়েন্ট রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছুই নেই। গাদাগাদি করে লাইন করে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতারা। কারও কারও মুখে মাস্ক থাকলেও অনেকের মুখেই তা দেখা যায়নি। লাইনের ছবি তোলার সময় কেউ কেউ জামার পকেটে ভাজ করে রাখা মাস্ক বের করে পরেছেন। তবে বর্তমানে নগরীর সাধারণ ডিলার পয়েন্টে এক টন আটা ও দেড় টন চালের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ৩টি ট্রাকসেল কেন্দ্রে ডিলারদের আড়াই টন চাল ও দেড় টন আটা দেয়া হচ্ছে। কেজি ৩০ টাকা দরে চাল ও ১৮ টাকা দরে আটা পাওয়া যাচ্ছে। আর প্রতিজনে ৫ কেজি আটা ও ৫ কেজি চাল কিনতে পারছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওএমএস ডিলার আলাউদ্দিন জানান, প্রতিদিন নগরীর তিনটি ওয়ার্ডে ওএমএস এর পণ্য বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসবের তদারকি করছেন। বিশেষ ওএমএস এর আওতায় ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ডে বিক্রি করতে হয়।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম পূর্বদেশকে বলেন, ‘নগরীর ২১টি পয়েন্টে এই কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে যেসব এলাকায় আমাদের ডিলার নেই সেসব এলাকায় রোটেশনালি দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই কার্যক্রম শুরু করার আগে এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানানো হয়ে থাকে। আবার পণ্য কিনতে মানুষ যাতে সমাগম করে সংগ্রহ না করে সে জন্য তিন ফুট দূরত্বে বৃত্ত করে দেয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদের মাস্ক পরিধান করতে বলা হচ্ছে। এতে স্থানীয় প্রশাসনও সহায়তা করছে। তবে পরিবেশকদের বলে দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন ক্রেতাদের লাইনে দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করে। এছাড়া আমরা বিশেষ ওএমএস এর ক্ষেত্রে প্রতি ট্রাকে আড়াই টন চাল ও দেড় টন আটা প্রদান করছি। একই সাথে সাধারণ ওএমএস ডিলার পয়েন্টে দেড় টন চাল ও এক টন আটা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নগরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ১৫টি পৌরসভাতেও বিশেষ ওএমএস এর পণ্য দেয়া হচ্ছে। যার মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির পৌরসভার মধ্যে ৪ জন ডিলার এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির পৌরসভার মধ্যে ৩ জন ডিলার প্রতিদিন পণ্য বিক্রি করছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়েছে- খাদ্য অধিদপ্তরের ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট বরাদ্দ থেকে ঢাকা ও শ্রমঘন ৪টি মহানগরের ২৭৬টি কেন্দ্রে প্রতিদিন ২ টন আটা ও ১ টন চাল এবং অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে ৪২৯টি কেন্দ্রে প্রতিদিন এক টন করে চাল-আটা ওএমএস কর্মসূচিতে বিতরণ করা হবে। যা এখনও চলমান রয়েছে।