স্বর্ণালঙ্কার ও টাকার লোভেই বিজিবি সদস্যের স্ত্রী খুন

31

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর ইপিজেড থানার নিউমুরিং তক্তারপুল এলাকায় বিজিবি সদস্যের স্ত্রীকে খুন করার কারণ বের করেছে পুলিশ। আর্থিক সংকটে থাকা মো. কিবরিয়া জাফর (২৮) নামে এক যুবক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারের লোভে তার পাশের বাসার ভাড়াটিয়া ওই নারীকে খুন করে বলে জানিয়েছে পুলিশের বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা। গতকাল সোমবার সকালে ইপিজেড থানায় সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান তিনি। এ সময় ইপিজেড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল করিমও পাশে ছিলেন। ডিসি জানান, লাশ উদ্ধারের পর প্রতিবেশী যে কিবরিয়া জাফরকে আটক করে পুলিশ, সে একাই খুন ও লুটপাট করেছে বলে স্বীকার করে। শুরুতে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে সে তার সঙ্গে আরও দু’জন ছিল বলে জানিয়েছিল।
জানা যায়, গত রবিবার বিকেলে ইপিজেড থানার নিউমুরিং তক্তারপুল এলাকায় আজিজ শাহ রোডের মাবিয়া ভিলার পঞ্চম তলায় এক রুমের একটি বাসা থেকে শামীমা আক্তারের (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শামীমা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সুবেদার জামাল উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি রাঙামাটিতে কর্মরত আছেন। নিঃসন্তান শামীমা একাই এ বাসায় থাকতেন।
পুলিশের তথ্যমতে, বিজিবি সদস্য জামাল উদ্দিন রবিবার সকালে স্ত্রীকে ফোন করে না পেয়ে ভবনের মালিককে জানান। মালিক ওই বাসায় গিয়ে শামীমাকে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ও স্বজনদের খবর দেন। এসময় কাছে থাকা কয়েকজন স্বজন ওই বাসায় গিয়ে শামীমাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখেন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনার পর পুলিশ ভবনে বসবাসরত সবাইকে বের হতে নিষেধ করেন। সবার সঙ্গে কথা বলে এ ভবনের বাসিন্দা যুবক মো. কিবরিয়া জাফরকে সন্দেহ হওয়ায় তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ওই যুবক পুলিশকে জানায়, তিনজন মিলে শামীমার ঘরে ঢুকে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। আটকের পর তার কাছ থেকে কিছু স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। তার হাতে কামড়ের গভীর ক্ষত দেখতে পায় পুলিশ।
উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সোলতানা জানান, হেফাজতে নিয়ে টানা ১০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর কিবরিয়া জাফর একাই হত্যাকান্ড ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করে বিস্তারিত বিবরণ দেন। জাফরের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম কধুরখীলে। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মাবিয়া ভিলায় শামীমার পাশের বাসায়।
তিনি আরও জানান, জাফর জানিয়েছিল, তার সঙ্গে থাকা দুই যুবক শামীমাকে খুন করেছে। সে শুধু স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও নগদ টাকা নিয়েছিল। তার কথায় বিভ্রান্ত হয়ে বাকি দু’জনকে শনাক্ত করতে গিয়ে কিছু সময় নষ্ট হয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে জানায়, শামীমাকে আপা বলে ডাকত জাফর। আর শামীমাও ছোট ভাইয়ের মত দেখত তাকে। শনিবার রাতে জাফর দরজায় নাড়া দিলে পরিচিত দেখে ভেতর থেকে শামীমা খুলে দেয়। এ সময় সে ঘরে ঢুকেই শামীমার মুখ চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সে শামীমাকে জখম করে মুখ ও হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিজের বাসায় ঢুকে পড়ে।
শামীমার ছোট বোনের বরাত দিয়ে ওসি আব্দুল করিম বলেন, অপরিচিত কাউকে দেখলে ঘরের দরজা খুলতেন না শামীমা। শুরুতে আমাদের হাতে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের সূত্র ছিল শুধু এই একটি বাক্যই। আমরা ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। নিশ্চিত হই বাইরের কেউ এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নন। শামীমার প্রতিবেশি কেউ এ খুনের সাথে সম্পৃক্ত। এ সময় শামীমার পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া জাফরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অবশ্য তার হাতে কামড়ের দাগ দেখে আমরা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, হত্যাকান্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে।
ওসি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জাফর পুলিশকে জানিয়েছে- বেকার অবস্থায় আর্থিক সংকটে পড়ে শামীমার বাসা থেকে টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুটের পরিকল্পনা করেছিল জাফর। হত্যাকান্ডের পর নিজের বাসায় গিয়ে রাত পার করে জাফর। এ সময় তার স্ত্রী পর্যন্ত জানতে পারেনি, জাফর পাশের বাসার শামীমাকে খুন করেছে। এদিকে হত্যাকন্ডের ঘটনায় শামীমার ছোট ভাই বাদী হয়ে জাফরকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।