স্বগৌরবে ফেরাতে হবে চসিক শিক্ষা বিভাগকে

45

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর হওয়ার আরো প্রায় ছয় দশক আগেই (ব্রিটিশ শাসনামলে) যখন চট্টগ্রাম পৌরসভার মর্যাদায় নগর কর্তৃপক্ষ কাজ করছিলেন তখন থেকে পরিচ্ছন্ন, বিদ্যুৎ, রাজস্ব ও প্রকৌশলী বিভাগের পাশাপাশি এক অনন্য স্বতন্ত্র ধারায় ‘শিক্ষা বিভাগ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। নুর আহমদ চেয়ারম্যান কর্তৃক অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনার দায় নিয়ে শুরু হওয়া এ শিক্ষা বিভাগ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী যুগ ফলেফুলে মহিরুহে পরিণত হয়েছিল পরবর্তীতে যারাই মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রত্যেকে এ বিভাগকে আরো সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করেছেন নিঃসন্দেহে। এ শিক্ষা বিভাগের কার্যক্রম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বাইরে শহরতলীতেও ঠাঁই করে নিয়েছে। এখন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অনার্স কোর্সও চালু করা হয়েছে। এ অবস্থায় চসিকের কর্মপরিধি যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি শিক্ষা বিস্তারের কর্মসূচিও সমান্তরালে বাড়ছে। বাড়ছে ছাত্র-ছাত্রী। নগরীতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের স্বল্পতার কারণে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছে দ্বিতীয় বিকল্প হিসাবে সিটি কর্পোরেশনের পরিচালানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পছন্দের তালিকায় থাকলেও নানা সমস্যার কারণে শিক্ষা বিভাগ তা ধরে রাখতে পারছে না বলে অভিযোগও রয়েছে। এরপরও শিক্ষা বিভাগের দাবি দৃশ্যত জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, ¯œাতক (পাস) এর ফলাফল এবং পাঠদান পদ্ধতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে। কিন্তু বিগত ৮ বছর ধরে চসিক কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে কলেজে অধ্যক্ষ ও বিষয় ভিত্তিক কোন শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ী না করায় প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঠদানে ও একাডেমিক-প্রশাসনিক কার্যক্রমে দারুণ বিঘ্ন ঘটছে বলে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের অনেকের অভিযোগ রয়েছে। জনাব মঞ্জুর আলম মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে ২০১১ সালে স্থায়ীভাবে কিছু শিক্ষক দেয়া হয়েছিল তাও খালি আসনের বিপরীতে ছিল সামান্য। এরপর ২০১৩ সালে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে এবং কিছু কিছু মেয়র মহোদয়ের অফিস আদেশে শিক্ষক-কর্মচারি অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া আরবান হেলথ-এর প্রজেক্ট থেকে বেশ কিছু জনবল শিক্ষা খাতে ( শিক্ষক ও কর্মচারি পদে)পুনর্বাসন করা হয়েছিল, কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের কারো চাকরি স্থায়ী করা হয়নি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। ফলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ মিলে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক অস্থায়ী ভিত্তিতে শ্রেণিপাঠ দিয়ে যাচ্ছেন। জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের চাকরি একদিন স্থায়ী হবে এ প্রত্যাশায় দিন গুণতে গুণতে অনেকের চাকরির বয়সও খেয়ালিতে বিদায় নিয়েছে, ফলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত নির্ধারিত বেতনেই তাদের চাকরি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া বেশকিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ২৩টি কলেজের মধ্যে ১৯জন অধ্যক্ষই ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। যাদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য কোন অতিরিক্ত ভাতাও দেয়া হয় না। এ অবস্থায় বিগত মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার পর অস্থায়ী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের স্থায়ীকরণ ও প্রমোশনসহ শিক্ষকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান এবং প্রয়োজনে একটি শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের আশ্বাস দিয়েছিলো। কিন্তু সবশেষে দেখা গেল শিক্ষাক্ষেত্রে মাধ্যমিকে কিছু প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও কিছু নির্ধারিত বেতনে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ, কলেজের দীর্ঘদিনের প্রমোশন বঞ্চিত প্রভাষকদের একটি বড় অংশকে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতিসহ প্রতিষ্ঠানের আধিক্য বৃদ্ধি, জাইকা শিক্ষা প্রকৌশলীর সহযোগিতায় কিছু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বটে কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির যে মূল অন্তরায় প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ, স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের কোন রকম উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৩টি কলেজ, একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, ৩টি কম্পিউটার ক্যাম্পাস, একটি সংগীত একাডেমি, ৪টি কিন্ডার গার্টেন, ১টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৫০টি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, ৬টি মসজিদ, ২টি টোল স্কুল, শিক্ষক-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১টি, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, থিয়েটার ইনস্টিটিউট ১টি ও সিটি কর্পোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি ১টি পরিচালনা করে আসছে। এ নগরীর ভূমিপুত্র, সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব বিদ্যোৎসাহী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন গত ১৫ ফেব্রæয়ারি। নির্বাচনী ইশতেহারে ও বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আগের গৌরবে ফেরানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগসহ শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির কথা বলেছেন। নগরবাসী আশা করেন, নবনির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরীর সুযোগ্য উত্তরাধিকার হিসাবে শিক্ষাকে আগের গৌরবে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।