স্থানীয়ভাবে রাজাকারের তালিকা যাচাইয়ের চিন্তা

56

স্থগিত হওয়া রাজাকারের তালিকা স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি করে যাচাই-বাছাই করার চিন্তা চলছে বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন। আর এই মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমান বলছেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে রাজাকারের তালিকা যাচাইয়ের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করলে এটি সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
সরকার ঘোষিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য বুধবার ওই তালিকা স্থগিত করা হয়। বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ ওই তালিকা প্রকাশ করেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, আমরা কোনো তালিকা তৈরি করছি না। যারা একাত্তরে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরোনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল সেটুকু প্রকাশ করছি’। এখন কোন পদ্ধতিতে এই তালিকা যাচাই করা হবে, সেই প্রশ্নে মন্ত্রী মোজাম্মেল বলেন, ‘এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব’।
তালিকা যাচাইয়ের কাজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে রাখবেন কি না- এই প্রশ্নে পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘কেন, এটা তো লোকালি করতে হবে, এখানে কে কয়জনকে চেনে? লোকালি করলে অনেকেই চিনতে পারবেন, তারা সঠিকটা বলতে পারবেন। যার বাড়ি যে থানায় সে থানার লোক চিনবেন’। স্থানীয়ভাবে কমিটি করে দিয়ে রাজাকারের তালিকা যাচাই করা হতে পারে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মিটিং করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। খবর বিডিনিউজের
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমানও বলেন, কোন পদ্ধতিতে রাজাকারের তালিকা যাচাই করা হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা এখন তারাই যাচাই-বাছাই করবে নাকি আমরা করব, নাকি যৌথভাবে করা হবে, নাকি কোনো বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নেওয়া হবে এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়নি, এটা শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দুই মন্ত্রণালয় (মুক্তিযুদ্ধ ও স্বরাষ্ট্র) একসঙ্গে কাজ করলে এটি সহজ হবে। কারণ তাদের কাছে এখনও বহু ডকুমেন্ট আছে। আগে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিল করত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হবে। গুছিয়ে কাজটা করতে হবে, এককভাবে এটা করা সম্ভব না’।
কেন্দ্রীয়ভাবে রাজাকারের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের পর মাঠ পর্যায়েও তা যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানান সচিব আরিফ-উর-রহমান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তালিকাটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী হুবুহু প্রচার করেছেন জানিয়ে সচিব বলেন, ‘মন্ত্রী তালিকাটা এনে তার হাতেই রেখেছিলেন, সেটা আমরা দেখিনি। মন্ত্রী মহোদয় সরল বিশ্বাসে এবং তাদের উপর আস্থা রেখে তালিকাটা প্রচার করেছেন। যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনটা অনুভব করেননি’।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি নোট দিয়ে সেই তালিকা দিয়েছিলেন, এমনটা জানানোর পর সচিব বলেন, ‘এটা ঠিক কথা। কিন্তু রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস হিসেবে যাদের চিহ্নিত করেছেন তাদের ৯০২ জনের তালিকা তারা পাঠিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। আমাদের মন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পর তারা পুরনো ফাইল ঘেটে আটটি বই আকারে আমাদের দিয়েছে। ভেতরে ভেতরে ইন্টারভেনশন হতে পারে, তাদেরও হয়ত জানা ছিল না। এখন সতর্ক পদক্ষেপ নিয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রচার করা হবে’।
রাজাকারের তালিকা তৈরিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যায়নি জানিয়ে সচিব বলেন, ৬৪ জন ডিসির মধ্যে মাত্র ১২ জন তথ্য পাঠিয়েছেন। অনেকে ট্রেজারি থেকে বের করে দিতে পারেননি। এতো তড়িঘড়ি করে এসব হয় না।