স্থলভাগে মৌসুমি বায়ুর বিস্তার

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধু মাস জ্যৈষ্ঠের মধ্য ভাগেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু উপকূল পেরিয়ে স্থলভাগে বিস্তার লাভ করেছে। এরই মধ্যে সিলেট অঞ্চল ছাড়িয়েছে মৌসুমি বায়ু। দেশের অবশিষ্ট এলাকায় দ্রুত বিস্তার লাভ করার অনুকূল পরিস্থিতিও বিরাজ করছে। স্থলভাগে মৌসুমি বায়ুর বিস্তারে এবার আগাম বর্ষার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। বর্ষার আনুষ্ঠানিকতার সময়ে তাই মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণের পাশাপাশি তিন সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলে ইতোপূর্বে জারি করা তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, টেকনাফ উপকূল দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ইতোমধ্যে স্থলভাগের সিলেট অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। এটি আরও অগ্রসর হওয়ার অনুক‚ল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মৌসুমি বায়ুর বিস্তারের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত সমুদ্রবন্দর ও উপক‚লে জারি করা তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত বহাল থাকবে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাশাপাশি ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সাথে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণও হতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে দেশের সর্বোচ্চ ৫৮ মিলিমিটার এবং কুতুবদিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি সদরে ১৯ আর সিলেটে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের তথ্য রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এর আগে আবহাওয়ার তিন মাস মেয়াদী (মে থেকে জুলাই) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এবার জুন মাসের প্রথমার্ধেই সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষাকাল বিস্তার লাভ করতে পারে। এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্পিাতের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি পারে। পরবর্তী জুলাই মাসেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার আলামত বিদ্যমান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বিগত ১৯৯৭ সালের পর ২০১৯ সালের বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল দক্ষিণ চট্টগ্রাম। ভারী বর্ষণের পাশাপাশি উজান থেকে নদ-নদী দিয়ে নেমে আসা ঢলের পানিতে সড়ক-মহাসড়ক থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘর ও মাঠ-ঘাট তলিয়ে যায়। মহাসড়কের ওপর দিয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয় বানের পানি। টানা ১০ দিনের ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া, আনোয়ারার পাশাপাশি উত্তরের ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ বাসিন্দাকে সপ্তাহকালেরও বেশি সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করতে হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চট্টগ্রাম-বান্দরবান ও চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক। সেসময় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি কয়েকদিন ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। একইভাবে এবারও ভারী বর্ষণের পাশাপাশি উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে দেশের অন্য অঞ্চলের পাশাপাশি চট্টগ্রামও বন্যার ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে আভাস দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চার বছর আগে অর্থাৎ বিগত ২০১৯ সাল বা ১৪২৫ বঙ্গাব্দের বৈশাখেই ‘শ্রাবণের উপস্থিতি’ আগাম বর্ষার একধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। সেই বছর মধ্য বৈশাখ পর্যন্ত দেশে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, তা বিগত সাড়ে তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে, আষাঢ়-শ্রাবণকেই বর্ষাকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্ষার রেশ থেকে যায়। অর্থাৎ জুনের শেষ থেকে আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্তই বর্ষা মৌসুম ধরা হয়ে থাকে।