স্টেজেই এক আয়োজকের মৃত্যু, তবুও চলল অনুষ্ঠান!

164

‘স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, স্বপ্ন মানুষকে বড় করে। বড়রা ছোটদের স্বপ্ন দেখাবেন আর ছোটরা স্বপ্ন দেখবে একদিন আমাদের মতো বড় হবে। সফল ব্যক্তিদের মতো সফল হবে।’Ñস্টেজে দাঁড়িয়ে হাজারো তরুণের সামনে বলা এ কথাগুলোতে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সফল হওয়ার। তিনি স্বপ্নবাজ মানুষ রেজাউল করিম চৌধুরী লিটন। কিন্তু কে জানতো সেই কথাগুলোই তার জীবনের শেষ কথা? স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য শেষ করে স্টেজে চেয়ারে বসার মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায় মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়েন তিনি। ৪০ বছর বয়সেই জীবনের ইতি ঘটে গেল স্মৃতির স্কুলে।
গতকাল বাঁশখালীর কাথরিয়া বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে এমন নির্মম ও মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় পুরো অনুষ্ঠানে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনুষ্ঠানে আগতদের মধ্যে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
তবে আরও নির্মম ব্যাপারটি ঘটল লিটনের মৃত্যুর পর। রেজাউল করিম চৌধুরী লিটন নিজেও এ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের একজন এবং স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। তার এমন করুণ মৃত্যুর পরও আয়োজকরা অনুষ্ঠান বন্ধ করেনি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সবকিছুই চালিয়ে গেছেন স্বাভাবিকভাবেই। একজন সম্ভাবনাময় তরুণের এমন মৃত্যুতে এলাকার মানুষ যখন শোকে স্তব্ধ, তখন আয়োজকরা অনুষ্ঠান বন্ধ না করে দিব্যি চালিয়ে গেছেন যেন, ‘কিছুই হয়নি’। লিটনের মৃত্যুর পর চালিয়ে নেওয়া অনুষ্ঠানের ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বেশ আয়েশ করেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন। আয়োজকদের এমন কান্ডজ্ঞানহীন আচরণে পুরো এলাকার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির একজন সদস্য পূর্বদেশ এর কাছে দাবি করেন, লিটনের মৃত্যুর পর কিছুক্ষণ অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। পরে কমিটি অনুষ্ঠান চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আয়োজকদের একজনের করুণ মৃত্যুর পরও অনুষ্ঠান চালিয়ে নেওয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন চাইলে তো আর অনুষ্ঠান বন্ধ করতে পারি না, আমাদের চেয়ারম্যান চেয়েছেন চালিয়ে নিতে তাই চালাতে হয়েছে। তবে এ কাজটি অবশ্যই খুব খারাপ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা পরে পুরো অনুষ্ঠানটিই লিটনটি উৎসর্গ করেছি। তবে মৃত ব্যক্তির জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উৎসর্গ করা যায় কি-না এমন প্রশ্নে তিনি নিরুত্তর থাকেন।
মারা যাওয়া রেজাউল করিমের স্কুল বন্ধু নুরুল কবির বলেন, ‘রাজধানীর একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা ছিলেন রেজাউল। তিনি এই স্কুলের ১৯৯৪ ব্যাচের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা একজন ভালো বন্ধুকে হারালাম।’
কাথরিয়া বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উপদেষ্টা ইউসুফ চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, মঞ্চে কিছুক্ষণ আবেগঘন বক্তব্য রাখার পর চেয়ারে বসেন লিটন। এর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই হঠাৎ ঢলে পড়েন তিনি। তাৎক্ষণিক সবাই মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দীর্ঘদিন যাবত স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন লিটন। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই নিজ গ্রামে এসেছিলেন।