স্টিকারেই হয়ে যায় ‘বগুড়ার দই’ স্বনামধন্য খাবারের আড়ালে প্রতারণা

34

এম এ হোসাইন
দেশের বিভিন্ন জায়গার খাবারের সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে আছে দেশ-বিদেশে। জেলাভিত্তিক বিভিন্ন খাবারের এই সুনামকে পুঁজি করে অন্য জেলাতেও সেই খাবার নিয়ে চলছে নানান প্রতারণা। আসল পণ্য না হলেও শুধু নামি খাবারের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এসব পণ্য। নামি-দামি বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট এমন প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। বাস্তবে বাজার থেকে কেনা নানা উপাদানের সমন্বয়ে এসব পণ্য উৎপাদন বা তৈরি করা হলেও সেগুলোর সাথে বিখ্যাত স্থানের নামকরা খাবারের নাম জুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। নামকরা খাবারের স্টিকার দেখে সাধারণ মানুষ পণ্যটি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। মেজবানি মাংসের জন্য বিখ্যাত আমাদের চট্টগ্রাম। দেশজুড়ে চট্টগ্রামের মেজবানির সুখ্যাতি আছে। অন্যকোনো জেলা থেকে কেউ চট্টগ্রামে আসলে প্রথমেই মেজবানি মাংসের স্বাদ নিতে চান। তেমনিভাবে বগুড়ার দই, ঢাকার বাকরখানি, কুমিল্লার রসমালাই, টাঙ্গাইলের চমচম, চাঁদপুরের ইলিশ, কক্সবাজারের মিষ্টিপান, বরিশালের আমড়া, ঝালকাঠির আটা, পটুয়াখালীর মহিষের দই সহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন জিনিসের সুখ্যাতি আছে। স্বকীয়তা, স্বাদের অতুলনীয়তার কারণে এসব খাবার বা পণ্য দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। যার কারণে যে জেলা যে খাবারের জন্য বিখ্যাত সেখানে কোনো পর্যটক বেড়াতে গেলে সেই খাবার না খেয়ে ফেরাটাও অনেকটা বিরল। এসব খাবারের সাথে সেই জেলা বা জায়গার ঐতিহ্যও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে প্রতারক চক্র। সুখ্যাতি থাকা এসব জেলার খাবারের নামে বাজারে দই, রসমালাই, মিষ্টিসহ অনেক পণ্য বিক্রি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এসব খাবারের দারুণ প্রচারণা দেখা যাচ্ছে। লোভনীয় প্রচারণায় পড়ে অনেকে কিনছেন, পক্ষান্তরে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। মাঝেমধ্যে এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে অভিযানের খবর শুনা গেলেও বাজারে তেমন কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই সহ তদারক সংস্থাগুলোগুলোর নিস্ক্রিয়তার কারণেই এমন প্রতারণা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, তদারকি সংস্থার গাফেলতির কারণে কিছু প্রতারক চক্র নানা প্রলোভনে এ ধরনের প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিখ্যাত জায়গার নাম জুড়ে দিয়ে নানান পণ্য নিয়ে তারা প্রতারণা করছে। সামাজিক মাধ্যম, পত্রিকা বা অনলাইনে তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। তদারকি সংস্থাগুলো যদি বাজার থেকে স্যাম্পল নিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা করতো তাহলে এগুলো রোধ করা যেতো। যেহেতু এখনো তদারকি সেভাবে গড়ে উঠেনি, ফলে প্রতারক চক্র জোরালোভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে আমরা ভোক্তারা প্রলোভনে পড়ে প্রতারিত হচ্ছি।
শুধু অনলাইন বা অখ্যাত প্রতিষ্ঠানে যে বিখ্যাত এলাকার নামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে তা নয়, কিছু প্রতিষ্ঠিত রেস্টুরন্ট বা দোকানেও বিক্রি হচ্ছে এমন পণ্য। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান জায়গার নাম জুড়ে দিয়ে নিজেদের পণ্যকেই সেই বিখ্যাত জায়গার পণ্য দাবি করছে। চাল, ডাল, তেল, এমনকি পেঁয়াজটিও বিখ্যাত জায়গার বলে বাড়তি টাকা আদায় করছে ভোক্তার কাছ থেকে। অথচ কোনো বিখ্যাত জায়গার নাম ব্যবহার করে এমন প্রচারণাকেও প্রতারণা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএসটিআই চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, কুমিল্লার রসমালাই বা বগুড়ার দই নাম লিখে চট্টগ্রামে কোনো পণ্য উৎপাদন করার কোনো সুযোগ নেই। দই উৎপাদনে বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক কিন্তু রসমালাইয়ের ক্ষেত্রে বিএসটিআই লাইসেন্স বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু যে জায়গার পণ্য সেটা সেই জায়গাতেই উৎপাদন করতে হবে। উৎপাদনের স্থান, তারিখ ও প্রতিষ্ঠানের নাম পণ্যের মোড়কে থাকতে হবে। চট্টগ্রামে এমন চমকপদ নাম ব্যবহার করে কেউ অবৈধ পণ্য উৎপাদনে থাকার তথ্য দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
এদিকে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে অবৈধভাবে ‘বগুড়ার দই’ তৈরি ও সংরক্ষণের দায়ে গতকাল বায়েজিদ থানার সামাদপুর এলাকার জহির আলীর দইয়ের দোকানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদফতরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার ও বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক দিদার হোসেন এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানকালে অবৈধভাবে ভেজাল জুস তৈরির অপরাধে একই এলাকায় অবস্থিত এভারফ্রেস অ্যাগ্রো সিলগালা করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার জানান, বায়েজিদ জাঙ্গালপাড়া সামাদপুরে দই তৈরি করে ‘বগুড়ার মিষ্টি দই’ নামে স্টিকার ব্যবহার করে বিক্রি করা হচ্ছিল। ভোক্তাকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারিত করা হচ্ছিল। প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআইয়ের অনুমোদনও ছিল না। প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।