স্কুল-কলেজ খোলার গাইডলাইন প্রকাশ

31

করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার প্রস্তুতি নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শুক্রবার স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রস্তুত করার জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে নিয়ে এ গাইডলাইন অনুযায়ী আগামী ৪ ফেব্রূয়ারি মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পাওয়া মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে যে ব্যবস্থা নিতে হবে
১) প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় সংশ্লিষ্ট সবার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
২) সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনে তিন স্তরবিশিষ্ট মাস্ক তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও নির্দেশনা প্রদানের পরিকল্পনা করতে হবে।
৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার বিষয়ে শিক্ষক ও স্টাফদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করতে হবে।
৪) স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুকরণের পরিকল্পনা করতে হবে।
৫) স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ভাষায় প্রস্তুতকরণ ও নিয়মিত হালনাগাদকরণের পরিকল্পনা।
৬) শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষাকার্যক্রমে অংশ নিতে পারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলাফেরা করতে পারে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পরিকল্পনা গ্রহণ।
এদিকে নিরাপদভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির (শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর) সংখ্যা নিরূপণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করতে যা করতে হবে
১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা, অবকাঠামো এবং ভৌত সুবিধাদির ম্যাপিং করে স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
২) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে একইসঙ্গে বা একই শিফটে সর্বোচ্চ কতজন শিক্ষার্থীকে একত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা সম্ভব হবে, সবাইকে একইসঙ্গে আনা সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে সবার শিক্ষা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
৩) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আসন ব্যবস্থা কেমন হবে এবং কতজন শিক্ষার্থীকে একই শিফটে এনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে, তা পরিকল্পনা করতে হবে।
৪) গাইড লাইনে দেওয়া চিত্র অনুসরণ করে, শ্রেণিকক্ষের আয়তন ও সংখ্যা অনুপাতে শ্রেণিভিত্তিক কতজন শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনা যাবে তার সম্ভাব্য সংখ্যা নির্ধারণ করে পরিকল্পনা নিতে হবে।
শিক্ষার্থীর সামর্থ্য ও চাহিদা বিবেচনায় এবং অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করার পরিকল্পনা করতে হবে। কোন কোন শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবে, বা কোন কোন শিক্ষার্থী বিকল্প উপায়ে লেখাপড়া চালাবে বা দূরশিখনে যুক্ত হবে, সে বিষয়টি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরাপদে পরিচালনার ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অধিক শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে আগ্রহী হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে সবাইকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
অন্যদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় কম শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে বাকি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে হবে।
শুরুতে কোন কোন শ্রেণির কার্যক্রম দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হবে তা বিবেচনা করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবহিত করার পরিকল্পনা নিতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম ১৫ দিন কোনও একটি শ্রেণি কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পরিকল্পনা নিতে হবে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শ্রেণিকার্যক্রমের সময় ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকার্যক্রম একইসঙ্গে চালু করতে হলে কতটি শিফট প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রতিটি শিফটের জন্য কর্মঘণ্টা কতটুকু হবে তা নির্ধারণের পরিকল্পনা নিতে হবে।
শিক্ষক ব্যবস্থাপনা
ক) কোন কোন শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ক্লাস পরিচালনা করবেন এবং কোন শিক্ষককে বাড়তি সহায়তা দিয়ে দূরশিখন কার্যক্রম পরিচালনা করানো হবে, তার পরিকল্পনা করা।
খ) শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা।
৩) স্থানীয় পর্যায়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপজেলা/জেলা পর্যায়ের শিক্ষা অফিসের সঙ্গে আলোচনা/পর্যালোচনা সাপেক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে একাডেমিক ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ের কোনও নির্দেশনা থাকলে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৪) কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তবে তার মেরামত করা অথবা বিকল্প স্থানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৫) প্রথম ১৫ দিন শিক্ষা কার্যক্রম কেমন হবে, কতটা সময় শিখন কার্যক্রম এবং কতটা মনোসামাজিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা থাকবে তার পরিকল্পনা করতে হবে।
৬) ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকার্যক্রম একইসঙ্গে চালু করতে হলে কতটি শিফট প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রতিটি শিফটের জন্য কর্মঘণ্টা কতটুকু হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৭) কোন কোন শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ক্লাস পরিচালনা করবেন এবং কোন শিক্ষককে বাড়তি সহায়তা দিয়ে দূরশিখন কার্যক্রম পরিচালনা করানো হবে তার পরিকল্পনা করতে হবে।
৮) কোন শিক্ষার্থী সপ্তাহে কতদিন এবং কোন কোন দিন আসবে তা শিক্ষার্থীদের ও তার অভিভাবকদের নিয়মিত অবহিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৯) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় বেশি শিক্ষার্থীকে একত্রে আনার ক্ষেত্রে একাধিক শিফটের কারণে যেহেতু শিক্ষার্থীর জন্য কর্মঘণ্টা কমে যাবে, এ জন্য প্রয়োজনে শ্রেণিভিত্তিক বিষয়ের অগ্রাধিকার তালিকা তৈরির পরিকল্পনা করতে হবে।
১০) যেসব শিক্ষার্থী দূরশিখনের মাধ্যমে শ্রেণিপাঠ নিতে ইচ্ছুক তাদের জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে।
১১) লেখাপড়ার ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিকল্প পরিকল্পনা নিতে হবে।
১২) শিখন পরিবেশ আনন্দঘন করতে বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা নিতে হবে।
১৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম কয়েকদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়য়ে জানানোর বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে।
১৪) প্রথম এক/দুই সপ্তাহ পাঠ্যক্রমভিত্তিক শিখনের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সে বিষয়ে প্রত্যেক শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষকদের অবহিতকরণের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।