সৌম্য মূর্তিতে অভয়দায়িনী মা দুর্গা

1334

বহুরূপে অপরূপ দেবী মা দুর্গা। বিভিন্নরূপে তিনি আবির্ভূতা হয়েছেন মর্ত্যধামে। তিনি সর্বভূতে বিরাজমান। তিনি সকল শক্তির আধার। সর্বশক্তি সর্বরূপিনী। বিভিন্ন লীলায়, বিভিন্নরূপে তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিতা।
দেবী দুর্গা মাতৃশক্তির প্রতিভূ। মাতৃশক্তি ভিন্ন সৃষ্টি বা বিকাশ সম্ভব নয়। সৃষ্টির আদি রহস্য ও সৃষ্টিতত্তে¡র মূল এই মাতৃশক্তিতে নিহিত। প্রাচীন ও আধুনিক সভ্যতার সকল স্তরে মাতৃশক্তির স্তুতি ও বন্দনা বিদ্যমান। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে মাতৃশক্তিকে সকল শক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান দেয়া হয়েছে। মা এ শব্দটি বিভিন্নকালে একটি আরাধ্য পদবাচ্য হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। মাতৃশক্তি হচ্ছে প্রচÐ সম্মোহনী শক্তি। সন্তানকে গড়ে তোলার পক্ষে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। জীবনকে গড়ে তোলার শুভক্ষণে মা হচ্ছে সমস্ত প্রেরণার উৎস। মা দুর্গা হচ্ছেন সৃষ্টির প্রতীকী-দেবী। জীবের শুভ ও শান্তির প্রেরণা কেন্দ্র। সৃষ্টির চালিকাশক্তি। অমঙ্গল বিনাশের, অসুরশক্তির করালগ্রাস থেকে মানবকে মুক্ত করার মহাশক্তি। দেবশক্তিসমূহের তিনি কেন্দ্রবিন্দু। সকল দেবশক্তি ও মঙ্গলশক্তি তার থেকে উৎপন্ন হয় আবার তাতেই হয় বিলীন। সভ্যতার ক্রমবিকাশে আলোর সাথে আঁধারের, সত্যের সাথে মিথ্যার, শুভর সাথে অশুভের, কল্যাণের সাথে অকল্যাণের, প্রেমের সাথে অপ্রেমের যে দ্ব›দ্ব-সংঘাত চলে আসছে-মা দুর্গা হচ্ছেন সেই দ্ব›দ্ব-সংঘাতে সুরশক্তি, শুভশক্তি, কল্যাণ শক্তি ও দেবশক্তির ধারক-বাহক। কোনকালেই দেবশক্তির এই অপরাজেয়তাকে অকল্যাণকামীরা পরাভূত করতে পারেনি। মা দুর্গা সর্বজয়ী, শান্তিরূপী ও মাতৃরূপী। দেবী দুর্গা, মহামায়া, কাত্যায়নী যে নামেই তাকে অভিহিত করা হোক না কেন তিনি সর্বশক্তিধারিণী। তার আরাধনা মানে শক্তির আরাধনা করা। মানবজাতির কল্যাণ কামনা করা। মা দুর্গা দেবী কখনো অতি ভীষণা, আবার কখনো অতিসৌম্যা। ভীষণা মূর্তি তার সংহারলীলা। আসুরিক শক্তির ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধেই তার অভিযান। সৌম্য মূর্তিতে তিনি আশ্রিত ভক্ত সন্তানদের অভয়দায়িনী।
দেবীর কৃপালাভের জন্য আরাধনা দেবতা ও মানুষের বহুকালের। রামচন্দ্র দেবতাদের বিশ্রামকালে দক্ষিণায়ণে শরৎকালে অকালবোধন করে দেবীর পূজা করেছিলেন। তাই এই পূজাকে শারদীয় দুর্গাপূজা শারদীয় দুর্গোৎসবও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এ পূজার প্রবর্তন করেন সম্রাট-আকবরের রাজত্বকালের বাংলার সন্তান কংস নারায়ণ। এরপর ধীরে ধীরে বাঙালিদের মধ্যে দুর্গাপূজার প্রসার ঘটতে থাকে। নৃতাত্বিক দিক থেকে আদি বাঙালি জাতি অনার্য হলেও বৈদিক আর্যধর্মের প্রভাব বাঙালির উপর পড়ে। সময়ের স্রোত ও আর্থ-সামাজিক অবস্থায় ক্রমবিবর্তনের ফলে এক সময় তেত্রিশ কোটি দেব-দেবী হিন্দু বাঙালির মনন-মানসে স্থান করে নেয়। মা দুর্গা বাঙালি হিন্দুর এমনই এক দেবী শক্তি। মা দুর্গা পূজা এখন রূপ পেয়েছে সার্বজনীনতায়। দুর্গাপূজা বাঙালির প্রধানতম পূজা। বিবর্তনের মাধ্যমে দুর্গাপূজা মূলতঃ বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এটা প্রকৃতির পূজাও বটে। শরৎকালে বাংলাদেশে যেসব জিনিস পাওয়া যায় তার সবই প্রায় দুর্গাপূজার আবশ্যকীয় উপকরণ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত ভূমিকায় দুর্গাপূজা আজ সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। এই সার্বজনীন উৎসবে আমরা বৈদিক, পৌরাণিক, তান্ত্রিক, লৌকিক বিভিন্ন আচারের প্রকাশ লক্ষ্য করি। শক্তির এ পূজা এখন বাঙালি হিন্দুর হৃদয়-উৎসারিত হয়ে ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে মানব প্রেম ও ভালোবাসার আরতিতে পরিণত হয়েছে। দুর্গাপূজা আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলিম, নারী-পুরুষের মহামলিনের এক ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। এ পূজা সা¤প্রদায়িক চেতনা ও বাঙালির মিলনের মহাক্ষেত্র।

ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জীকে সম্মাননা প্রদান করছেন কাউন্সিলর ও পূজা উদ্্যাপন পরিষদের সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন, সাধারণ সম্পাদক রতন চৌধুরী

সিটি কর্পোরেশন পূজা উদ্্যাপন পরিষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন কাউন্সিলর ও পরিষদের সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন

ফিতা কেটে সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত দুর্গাপূজা উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন

মৃত শ্রমিক এর অসহায় স্ত্রীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন

মৃত শ্রমিক এর অসহায় স্ত্রীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন