সৌদি-ইরানের মধ্যে এতো শত্রু তা কেন?

45

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উপসাগরীয় এলাকায় সৈন্য মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়ার পর ইরান বলছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্যে হুমকির কারণ হয়ে উঠছে। ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, এসব বিদেশি শক্তি সবসময় দুঃখ-দুর্দশা বয়ে এনেছে এবং এখানে অস্ত্র প্রতিযোগিতা তৈরি করা উচিত নয়।
সৌদি আরবের দুটি তেল স্থাপনায় সাম্প্রতিক হামলার পর সৌদি আরবে মার্কিন সৈন্যসংখ্যা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই দুটো দেশই এই হামলার জন্যে ইরানকে দায়ী করছে।
ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা দীর্ঘদিনের, কিন্তু এবছর সেই উত্তেজনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে। কিন্তু সবশেষ সৌদি আরবের আবকাইক তেলক্ষেত্র ও খুরাইস তেল শোধনাগারে গত ১৪ সেপ্টেম্বরের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর শুক্রবার বলেছে যে সৌদি আরবের অনুরোধে তারা সেখানে সৈন্য প্রেরণ করবে, তবে এই সংখ্যা হাজার হাজার হবে না। যুক্তরাষ্ট্র মূলত সৌদি আরবের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপরেই জোর দেবে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি এর পর বলেছেন, বিদেশি শক্তি এ অঞ্চলে অতীতেও বিপর্যয় নিয়ে এসেছে এবং তিনি তাদেরকে এখান থেকে দূরে থাকতে বলেন।
ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ড বাহিনী এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে।
সৌদি আরব ও ইরান, শক্তিশালী দুটো প্রতিবেশী দেশ- আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে তারা বহু বছর ধরেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বহু দশক ধরে চলে আসা এই শত্রæতা আরো তীব্র হয়েছে দুটো দেশের ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে। এ দুটো দেশ ইসলাম ধর্মের মূল দুটো শাখার অনুসারী- ইরান শিয়া মুসলিম বিশ্ব এবং অন্যদিকে সৌদি আরব সুন্নি মুসলিম জগতের শীর্ষ শক্তি হিসেবে বিবেচিত। ধর্মীয় এই বিভাজন মধ্যপ্রাচ্যের বাকি মানচিত্রেও দেখা যায়।
বাকি দেশগুলোর কোনটিতে হয়তো শিয়া আবার কোনটিতে সুন্নি অনুসারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের কেউ ইরানের সাথে, আবার কেউ সৌদি আরবের সাথে ঘনিষ্ঠ। ঐতিহাসিকভাবেই সৌদি আরব- যেখানে ইসলামের জন্ম হয়েছে- তারা নিজেদেরকে মুসলিম বিশ্বের নেতা বলে দাবী করে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে এই দাবীকে চ্যালেঞ্জ করে ইরানের ইসলামি বিপ্লব।
এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে নতুন এক ধরনের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়- এক ধরনের বিপ্লবী মোল্লাতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং তাদের একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের বাইরেও এমন রাষ্ট্রের মডেল ছড়িয়ে দেওয়া।
গত ১৫ বছরে একের পর এক নানা ঘটনার জের ধরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে বিভেদ বাড়তে বাড়তে আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ইরানের বিরোধী অন্যতম বৃহৎ শক্তি ছিলেন ইরাকি প্রেসিডেন্ট ও সুন্নি আরব নেতা সাদ্দাম হোসেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভিযানে তাকে ক্ষমতা থেকে হটানো হয়। কিন্তু এর ফলেই ইরানের সামনে থেকে বড় একটি সামরিক বাধা দূর হয়, খুলে যায় বাগদাদে শিয়া-প্রধান সরকার গঠনের পথ। শুধু তাই নয়, এরপর থেকে দেশটিতে ইরানের প্রভাব বেড়েই চলেছে।
এরপর ২০১১ সাল থেকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। সরকারবিরোধী এসব আন্দোলন, যা আরব বসন্ত নামে পরিচিত, পুরো অঞ্চল জুড়েই বিভিন্ন দেশকে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল করে তোলে।
এই টালমাটাল পরিস্থিতিকে সৌদি আরব ও ইরান নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে তাদের প্রভাব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে সিরিয়া, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে। এর ফলে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস ও শত্রুতা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে শত্রুতা দিনে দিনে ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ আঞ্চলিক নানা লড়াই-এ বিভিন্নভাবে ইরান জয়ী হচ্ছে। বিশেষ করে এটা ঘটেছে সিরিয়াতে। সেখানে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রæপকে সমর্থন দিয়ে আসছিল সৌদি আরব, কিন্তু সিরিয়ার সরকারি বাহিনী রাশিয়া ও ইরানের সাহায্য নিয়ে তাদেরকে হটিয়ে দিতে সমর্থ হচ্ছে।
তাই সৌদি আরব এখন মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে ওই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান ইরানি প্রভাবের লাগাম টেনে ধরতে। কিন্তু সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সামরিক উচ্চাকাক্সক্ষার কারণে সেখানে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। সৌদি যুবরাজ এখন প্রতিবেশী ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করছেন। এই যুদ্ধের একটি উদ্দেশ্য সেখানে ইরানি প্রভাব প্রতিহত করা। কিন্তু চার বছর পর মনে হচ্ছে, এই যুদ্ধ সৌদি আরবের জন্যে ব্যয়বহুল এক বাজিতে পরিণত হয়েছে।
হুথিদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। কিন্তু জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেলের দেওয়া কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তেহরান হুথি বিদ্রোহীদেরকে অস্ত্র ও প্রযুক্তি দিয়ে বড় রকমের সাহায্য ও সমর্থন দিচ্ছে।
অন্যদিকে, লেবাননেও আছে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র শিয়া মিলিশিয়া গ্রæপ হেযবোল্লাহ- যারা শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, একই সাথে নিয়ন্ত্রণ করছে সশস্ত্র যোদ্ধাদের বিশাল একটি বাহিনীকে।
অনেক পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন যে ২০১৭ সালে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি সৌদি আরবে গেলে তাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছিল সৌদি আরব। হারিরি পরে সৌদি আরব থেকে লেবাননে ফিরে গেছেন ঠিকই, কিন্তু পদত্যাগের বিষয়টিকে তিনি স্থগিত করে রাখেন।
বিশ্লেষক জনাথন মার্কাস বলেন, এখানে বাইরের শক্তির খেলাও আছে। সৌদি আরবকে সাহস যোগাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আর তেহরানকে নিয়ন্ত্রণে সৌদি আরবকে সমর্থন দিচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের একটি ভয় হচ্ছে, সিরিয়ায় ইরানপন্থী যোদ্ধারা জয়ী হতে থাকলে এক সময় তারা তাদের সীমান্তের কাছে চলে আসতে পারে।
ইরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালে যে পরমাণু চুক্তি সই হয়েছিল ইসরায়েল ও সৌদি আরব তার তীব্র বিরোধিতা করে আসছিল। তাদের কথা ছিল, এরকম একটি চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক বোমা বানানোর আকাক্সক্ষা থেকে ইরানকে বিরত রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।
মোটা দাগে বলতে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র শিয়া-সুন্নি বিভাজনে বিভক্ত। সৌদি শিবিরে আছে উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য সুন্নি দেশগুলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর এবং জর্ডান। অন্যদিকে ইরানের সাথে আছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, লেবাননের হেযবোল্লাহ গ্রæপ।
ইরাকের শিয়া নিয়ন্ত্রিত সরকারও ইরানের মিত্র, আবার একই সাথে তারা ওয়াশিংটনের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের সাথে যুদ্ধে তারাও যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল।
মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে এই দুটো দেশের প্রতিদ্ব›িদ্বতাকে নানা কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দীর্ঘদিনের শীতল যুদ্ধের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ইরান ও সৌদি আরব একে অপরের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছে না ঠিকই, কিন্তু বলা যায় যে তারা নানা ধরনের ছায়া-যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংঘাতে তারা একেক গ্রæপকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিচ্ছে যেগুলোর একটি আরেকটির বিরোধী। এই সমীকরণের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে সিরিয়া। উপসাগরীয় সমুদ্রপথেও পেশীশক্তি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে ইরানের বিরুদ্ধে। এই চ্যানেল দিয়ে সৌদি আরবের তেল পাঠানো হয় বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি এরকম বেশ কয়েকটি তেলের ট্যাংকারে হামলার জন্যে ওয়াশিংটন ইরানকে দায়ী করেছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে তেহরান।
এখনও পর্যন্ত ইরান ও সৌদি আরব প্রত্যক্ষভাবে বিভিন্ন যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু কখনো তারা নিজেদের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি নেয়নি। তবে সৌদি আরবের অবকাঠামোতে হুথিদের সাম্প্রতিক বড় ধরনের হামলা তেহরান ও রিয়াদের শত্রæতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার সাথে আছে উপসাগরীয় চ্যানেলে তেলবাহী জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরির বিষয়টিও।
অনেকেই মনে করছেন, এসবের ফলে এই দুটো দেশের উত্তেজনা হয়তো এখন আরো ব্যাপক সংঘাতেও রূপ নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো বহু দিন ধরেই ইরানকে দেখে আসছে এমন একটি দেশ হিসেবে- যারা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।
সৌদি নেতৃত্ব ইরানকে দেখছে তাদের অস্তিত্বের জন্যে হুমকি হিসেবে। আর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তো ইরানের প্রভাব ঠেকাতে প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা নিতেই প্রস্তুত।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইরান- এই দুটো দেশের মধ্যে যদি শেষ পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধ লেগে যায়, তাহলে সেটা হবে দুর্ঘটনাবশত, তাদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কমই।

সর্দিজ্বর : কেন হয়
ও কী করবেন?
বিবিসি বাংলা
হঠাৎ ঠান্ডা লাগা বা সর্দিজ্বর হওয়া যে কারো জন্য খুবই সাধারণ একটি বিষয়। ঠান্ডা বা সর্দিজ্বর মানুষকে খুবই সামান্য কারণে যেমন ভোগাতে পারে, তেমনি সহজেই সেরেও যেতে পারে। সাধারণত ঠান্ডা লাগা বা সর্দিজ্বরের বেশকিছু সাধারণ উপসর্গ থাকে যেগুলো শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে একইরকম হয়ে থাকে।
ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাকমে’র সিনিয়র ম্যানেজার ও চিকিৎসক আফরোজা আখতার বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বছরে ৪ থেকে ৬ বার এবং একটি শিশুর বছরে ১০ থেকে ১২ বার সর্দিজ্বর হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। অর্থাৎ, আপনার জীবদ্দশায় ২০০ বারের বেশি সর্দি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আপনার।
একসময় ধারণা করা হতো একটি বিশেষ গোত্রের ভাইরাসের মাধ্যমেই শুধু সর্দি হয়। তবে ৮০র দশকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয় যে মোট সাতটি গোত্রের ভাইরাসের কারণে সর্দিজ্বর হয়ে থাকে।
ঠান্ডার মৌসুমে বা শীতের সময় এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মত পরিবেশ পায় বলে শীতের সময় সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং শীতের সময় মানুষের বেশি সর্দি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সর্দিজ্বর সংক্রমিত থাকা অবস্থায় নাসারন্ধ্রের ভেতরে মিউকাস লাইনিং অতিক্রম করে প্রবেশ করে সংক্রমণকারী জীবাণু। এর ফলে নাাসরন্ধ্রের ভেতর অতিরিক্ত সর্দি জমা হয়, ডাক্তারি শাস্ত্র যেটিকে রাইনোরেয়াা বলা হয়।


ঠান্ডা বা সর্দিজ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই সর্দিজ্বর আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি অন্যের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারেন। ঠান্ডা যেন ছড়িয়ে না পরে সেজন্য কয়েকটি পদক্ষেপ মেনে চলা যায়।
ঠান্ডায় আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে তোয়ালে বা গৃহস্থালির দ্রব্যাদি (যেমন কাপ, প্লেট) শেয়ার না করা। ঠান্ডা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর নিজের চোখ বা নাক স্পর্শ না করা।
খুব সামান্য কারণেই ঠান্ডা বা সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ। সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যেই মানুষের সর্দিজ্বর ভালও হয়ে যায়। তবে কয়েকটি উপায়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রæত সময়ে সর্দিজ্বর ভাল করা সম্ভব বলে বলছেন চিকিৎসকরা।
ঘুম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাজেই ঠান্ডা বা সর্দিজ্বরের সময় বিশ্রাম নিলে বা বেশি ঘুমালে দ্রæত আরোগ্য লাভ সম্ভব। সর্দিজ্বরের সময় উষ্ণ পরিবেশে থাকা বা উষ্ণ পোশাক পড়ে থাকলে ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রচুর পরিমাণ পানি বা ফলের রস পানের মাধ্যমে পানিশূন্যতা রোধ করলে ঠান্ডা থেকে দ্রæত আরোগ্য লাভ করা যেতে পারে।
ঠান্ডার একটি সাধারণ উপসর্গ গলা ব্যাথা। লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা অথবা লেবু এবং মধু দিয়ে হালকা গরম পানীয় তৈরি করে পান করলে গলা ব্যাথা দ্রæত উপশম হতে পারে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়া ফ্লু এবং সর্দিজ্বরের উপসর্গ একই হওয়ায় এই দুই রোগের মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইট সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের পরোমর্শ, প্রতিবছর একবার ফ্লুর পরীক্ষা করানো। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় সর্দিজ্বর যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন রকম নিয়ম মেনে চলার বিষয়ে বলা হয়েছে।
সর্দিজ্বর থেকে বাঁচবেন যেভাবে : মিষ্টি আলু, বিটের মূল, কয়েকটি বিশেষ ধরণের কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণ বেটা-ক্যারোটিন থাকে যেটিকে আমাদের দেহ ভিটামিন এতে রূপান্তরিত করে। ভিটামিন এ আমাদের নাক এবং ফুসফুসের মিউকোসাল লাইনিংকে শক্ত রাখে যা নাগ ও ফুসফুসকে ইনফেকশনের হাত থেকে বাঁচায়। পাশাপাশি কমলা, আম, তরমুজসহ লাল ফল একই ধরণের কাজ করে। এছাড়া খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ ও রসুন থাকলেও ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। পেঁয়াজ ও রসুনে একধরণের তেল থাকে যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
এছাড়া ঠান্ডা বা সর্দিজ্বর থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে ভিটামিন সি’র ভূমিকা অনেক আগে থেকেই প্রমাণিত। ঠান্ডা পরিবেশে বসবাসকারী মানুষ উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি গ্রহণ করে সর্দিজ্বর বা ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে পারেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। সূর্যের আলো বা অন্য কোনো উৎসের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণও শরীরকে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ১৯৩০ এর দশকে ভিটামিন সি ছিল সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসা। এটি সত্তরের দশকে এসে আরো বেশি জনপ্রিয় হয় যখন নোবেল বিজয়ী লিনাস পোলিং গবেষণা করে প্রমাণ করেন যে ভিটামিন সি ঠান্ডাজনিত রোগ উপশমে অনেকবেশি কার্যকর।
সম্প্রতি ককরেন গ্রæপের গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঠান্ডা থেকে মুক্তিতে ভিটামিন সি’র ভূমিকা খুব বেশি নয়। এটি শরীরের জন্যে ক্ষতিকর নয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীর থেকে মুত্রের সাথে বেড়িয়ে যায়। তবে জিঙ্ক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সুতরাং সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই ভালো।
ডাক্তার আফরোজা আখতার বলেন, সর্দিজ্বর সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে সেরে গেলেও বেশিদিন সর্দিজ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। টানা সাতদিনের বেশি সর্দিজ্বর থাকলে বা টানা তিনদিনের বেশি সর্দির সাথে উচ্চমাত্রায় জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার ক্ষেত্রে সাতদিন অপেক্ষা না করার পরামর্শ দেন মিজ আখতার। শিশুদের তিনদিনের বেশি সর্দি থাকলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। সর্দির সময় শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে বা বুকে ব্যাথা হলেও অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া হঠাৎ সর্দি পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে, ডায়বেটিস, হৃদরোগ, কিডনি বা ফুসফুসের রোগ থাকলেও দ্রæত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।