সৌখিন মানুষের ইলিশ মাছ

30

আবদুল হাই

গত ০৬/০৮/২২ পূর্বকোণ পত্রিকার অষ্টম পৃষ্ঠার ২য় কলামে আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের একখানা ছবি ছাপা হয় তরতাজা মাছটার ছবি দেখে আন্দাজ করা যায়, মাছটি কম করে হলে সোয়া ১ কেজি থেকে দেড় কেজির মধ্যে হবে। ইলিশ নিয়ে পূর্বকোণের প্রতিবেদকের দেয়া শিরোনাম ছিলো ‘সুস্বাদু ইলিশ পুষ্টিগুণে ঠাঁসা” “আমার পছন্দের মাছ”। তাই প্রতিবেদনটা আগ্রহভরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লাম। তিনি উল্লেখ করেছেন ‘গরম ভাতের সঙ্গে ইলিশের যে কোন পদ হলেই কথা নেই।” প্রতিবেদকের উক্তিটা দেখে জিহŸা দিয়ে টল্ টল্ করে পানি আসবার উপক্রম। চানপুরের ইলিশের সুগন্ধ কারো বাড়ীতে পাক করলে আশপাশের দশবাড়ীতে দস্তুর মতো খবর হয়ে যেতো সুগন্ধের কারণে। বেশীদিন আগের কথা নয় এই আশিদশকের কথা। তখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তো কর্ণফুলী মোহনায়। ঐ মাছগুলো উঠতে এয়াকুব নগর এলাকায় এয়াকুব আলী দোভাসীর বাড়ীর সম্মুখে যেনতেন ভাবে গড়ে ওঠে মাছের আড়ত বরফ কল।
ট্রাক আর ঠেলাগাড়ীতে বোঝাই করে ওরে মাছের চালান। একটা এক বা দেড় কেজি তরতাজা ইলিশের দাম দেড় থেকে দুইশত টাকা কেটেকুটে মাছ ধোয়া শুরু করলে হাতের আঙ্গুল চর্বিতে ভরে ওঠতো। ইলিশের পচনরোধ করতে চট্টগ্রামের শহরাঞ্চল কয়েকশত বরফ কল গড়ে ওঠে। ইলিশের ভরা মৌসুমে এক একটি বরফের বøকের মূল্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বা এর অনেক উপরে। দেখতে দেখতে অনেক নগন্য মানুষ ইলিশের কাজ কারবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে জঘন্য মালদার ব্যক্তিতে পরিণত হয়। ২০২২ সালে ইলিশের এহেন মুখরোচক গল্প বর্তমান প্রজন্মে আস্তে চুঁ-য়া মিথ্যা গালগল্প বলে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। আসলে সত্যি বলছি এবং সত্যি লিখছি। সওরের বয়স্ক লোক হিসেবে মিত্যে বলছিনা। এখন এক ট্যাংক কবরে অন্য ট্যাঙ্ক মাটিতে প্রতিবেদক লিখেছেন প্রতিবেদক লিখেছেন যে ইলিশ যতবেশি তেলযুক্ত সে ইলিশ ততবেশি মুখরোচক।
ইলিশে আছে চমৎকার প্রোটিন, সহজে হজমযোগ্য এবং এতে আছে উচ্চমাত্রার লাইসিন, প্রোটিনের চমৎকার উৎস। হৃদরোগ ঝুঁকি কমায়, ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ। দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মোদ্দা কথা হচ্ছে ইলিশ কেবল সুস্বাদু মাছ নয় এ মাছ ঔষধি মাছও বটে। একবার চুলকানীর চিকিৎসার জন্য আমি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ মেজর কাজী সাইফুদ্দিন সাহেবের কাছে যাই। ডাক্তার সাহেবের ব্যবস্থাপত্রে ছাপার অক্ষরে লিখিত ছিলো (১) গরুর মাংস (২) ছাগলের মাংস (৩) চিংড়ি মাছ (৪) ইলিশ মাছ পুঁটি মাছ (৫) পুঁই শাখ মোটেই খাবেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন বন্ধু প্রতিবেদক ইলিশের পুষ্টিগুণ নিয়ে নাতিদীর্ঘ যে নিবন্ধ উপস্থাপন করেছেন আমি সত্যি দারুণ আস্বস্থ হলাম তবে কথার পরেও কথা থেকে যায়। অর্থনীতির ছাত্র আমি। চাহিদার একটা সংজ্ঞা ছাত্রাবস্থায় পড়েছিলাম। তা এ বৃদ্ধ বয়সে হুবহু মুখস্থ আছে। ‘উবসধহফ সবধহং ফবংরৎব ভড়ৎ ধ ঃযরহম নধপশবফ নু ঢ়ঁৎপযধংরহম ঢ়ড়বিৎ ধহফ রিষষরহমহবংং ঃড় ঁংব ঃযব ংধসপ.’ অর্থাৎ চাহিদা হচ্ছে কোন কিছু পাবার স্পৃহা যার জন্য থাকতে হবে ক্রয় করার সক্ষমতা এবং ব্যবহারের ইচ্ছ।” তাই আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ স্বাদে ও পুষ্টিগুণে ঠাঁসা, যতই রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হউক না কেন এটা নাগাল না পাওয়া টক আঙ্গুর ফলেরই মতো মনে হয়।
ইলিশ আমাদের নাগালের মধ্যে থাকতো যখন সিইউএফএল এর বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে নিক্ষেপ হয়। তখন থেকে ইলিশের প্রজনন কমতে থাকে এবং চলাচলের স্থান পরিবর্তিত হয়। তারপরও যথসামান্য ইলিশ বাজারে দেখা যায়। এ মাছ এখন মালদার মানুষের বিলাসী খাদ্য।
লেখক: কলামিস্ট