সোশ্যাল মিডিয়ার যত কথা

10

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের খেজুরের রস

সেলিম কলি

বিলুপ্ত প্রায় খেজুর গাছ ও গাছি………..
এক সসময় শীতে ‘গাঁও-গেরামে’ রস,গুড়, পিঠা-পায়েসের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠতো পুরো গ্রাম।গ্রাম গঞ্জে খেজুর রসের উৎসবের আমেজ আজ লুপ্ত প্রায়।
খেজুর গাছ কাটা শুরু হতো দুপুরের পর থেকেই। ভোর থেকে রসের ভাড় /মাটির কলস নামিয়ে তা চুলায় চড়িয়ে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি হতো। ৪ মাস গাছিরা পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কাটাতেন। রাতে অবসর বিনোদনের জন্য কুঁড়েঘরের পাশে আগুন জ্বালিয়ে বসতো কবিগানের আসর। গাছিদের ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ নিয়ে পুঁথিসাহিত্যে চর্চাও বেশ জমে উঠতো তখন। বাউল – কবিরা আবেগের স্পর্ধিত উচ্চারণে বলে উঠতো
‘ঘরেতে বধূয়া কান্দে ফিরে নাহি চাও
গাছি ভাই গাছ কাটো দূর দেশে যাও।
গুড় মিঠা, রস মিঠা, মিঠা গাছির মন
সব বোঝো, বোঝেনাতো কুমারী কন্যার মন!
কয়েকটি জেলায় খেজুর গাছের বাগান থাকলে ও বেশীরভাগ জেলায় কিছু গাছ থাকতো, সেগুলি থেকে রস সংগ্রহ চলতো।
পেশাদার নয় সৌখিন রস চোরের সংখ্যা ও কম ছিলোনা। রস কিনে বাড়ীতে পিঠা পায়েস রান্না করা হলে সেটার চেয়ে চুরি করা রসে নিজেদের অনভিজ্ঞ রান্নার রসের সিরণী হতো খুব মজাদার অমৃত সমান।
রস চুরি করতে গিয়ে কুকুরের তাড়া খেয়ে বন্ধুকে গাছে রেখে অন্য বন্ধুদের পলায়ন, গাছের নীচে কুকুরের অবস্থান ও ঘেউ ঘেউ শুনে গাছে থাকা বন্ধুর অগত্যা পুকুরে বা খালে শীতের কনকনে ঠাÐা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষার গল্প আজ আর শোনা যায়না।
কলেজ পড়ুয়া বন্ধুরা রস চুরি করতে রাস্তার পাশে খেজুর গাছে এক বন্ধু উঠলো আর দুই বন্ধু নীচে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ দেখলো চেয়ারম্যান সাহেব আসছেন, দুই বন্ধু পালালো। উপরের বন্ধু সবেমাত্র রসের হাড়িটা খুলে হাতে নিয়েছে কিন্তু নীচে চেয়ারম্যান সাহেব কে দেখে ভয়ে হাড়িটা একেবারে রাস্তায় চেয়ারম্যানের সামনে পড়ে ভেঙে গেলো। চেয়ারম্যান সাহেব তার সঙ্গী মেম্বার সাহেব কে বললেন, দেখছো কালাম, কোথায় গাছ আর কোথায় এসে পড়লো রসের হাড়ি ? তাড়াতাড়ি চলো এটা জ্বীনের কাÐ। উপরে তাকাইওনা’ এটা আমার গ্রামের ঘটনা যা সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিলো। আসলে চেয়ারম্যান সাহেব বুঝেছেন এটা দস্যি পোলাপাইনের রস চুরির বিষয় ,তাই না বুঝার ভান করে চলে গেলেন। আজকের দিনে এমন রস চুরির ঘটনা সালিশ বৈঠক পর্যন্ত গড়াতো।
আজ আর খেজুরের রস তেমন পাওয়া যায়না। পেলে ও সেই গন্ধ, সেই স্বাদ নাই। হাইড্রোজেন,চক পাউডার সহ নানা রাসায়নিকের ব্যবহারে নকল খেজুর গুড়ে বাজার সয়লাব, পরিণামে মরণ ঘাতি রোগে ভোগা।
খেজুর গাছের দাম সস্তা হওয়ায় বিক্রী হয়ে গেছে ইটভাটায় বা ঘরের জ্বালানীতে।
কালের বিবর্তনে গাছিরা আজ ভিন্ন পেশায় ।হারিয়ে গিয়েছে সোনালী অতীতের ইতিহাস- ঐতিহ্যের খেজুর রসের উৎসব মূখর দিন গুলি।
আমরা দিন দিন হারাতে বসেছি আমাদের পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া সংস্কৃতি- কৃস্টি,কালচার।
আর তাই দিনে দিনে নকল – ভেজালের সমুদ্রে হাবুডুবু খেয়ে মৃত্যুপথ যাত্রী হয়ে মরিতে মরিতে বাঁচিয়া আছি।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিন

ওসমান এহতেসাম

ডেঙ্গু বর্তমান বাংলাদেশের এক অন্যতম আতঙ্কের নাম। সরকার মহামারী করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে যতটাই না সফল, বিপরীতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঠিক ততটাই ব্যর্থ। বলা যায় করোনার কান্নায় ডেঙ্গুর গর্জন। প্রতিদিনই খবরে শুনি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের অভিযান। কোথায় এ অভিযান? মশকনিধন কর্মীদের দেখাই তো মেলে না। বর্তমান অবস্থা এমন হয়েছে যে প্রতি ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। তাহলে সিটি কর্পোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম কি শুধু লোক দেখানো! বাসা-বাড়ি, শিক্ষা-ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মশার কামড় থেকে কেউই রক্ষা পাচ্ছেন না। এদিকে বস্তি, আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক এলাকা সবখানেই মিলছে এডিস মশার লার্ভা। ফলে মশার জ্বালায় শিশু থেকে বৃদ্ধরাও অতিষ্ঠ। ডেঙ্গু দুর্যোগ মোকাবেলায় সকল সিটি কর্পোরেশনের মেয়ররা গণমাধ্যমে যতটা সরব কাজে ততটা ব্যর্থ। ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকার ও জনগণের সমন্বিত প্রয়াস জরুরি হলেও সিটি কর্পোরেশন এলাকার কাউন্সিলরদের অবহেলার কারণে ডেঙ্গু এখন দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। জনগণ নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করলেও সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সেবা থেকে বরাবরই জনগণ বঞ্চিত। অভিযোগ আছে, রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সব এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ না ছিটানো, নগরীর অলিগলিতে না গিয়ে মেইন রাস্তায় ফগিং করাসহ লোক দেখানো অভিযান, জরিমানা আদায়, ডোবা-নালা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ কোনো কাজে আসছে। কাজেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। এ ব্যর্থতার দায় সিটি কর্পোরেশনগুলোর মেয়র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছুতেই এড়াতে পারেন না।
তবে একথাও ঠিক, ঘরে ঘরে প্রবেশ করে মশা মারা যেমন সিটি কর্পোরেশনের কাজ নয়, তেমনি ঘরের বাইরে এডিস মশার ডিম পাড়া ও বংশবৃদ্ধি রোধ করা সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এক্ষেত্রে অবশ্যই নাগরিক সচতেনতা জরুরি। যেখানে সেখানে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত পাত্র, মাটির হাঁড়ি, টায়ার, ক্যান যার মধ্যে জমা পানি থাকে বা কোনো গর্ত যেখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমতে পারে সেখানেই নির্মূলের ব্যবস্থা করতে হবে। ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সর্বস্তরের জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশবান্ধব কার্যকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করার পাশাপাশি উড়ন্ত মশা মারার ব্যবস্থা করতে হবে। এডিস মশার প্রজনন, বিস্তার, প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার বিকল্প নেই।
মশকনিধন কার্যক্রম শুধু নির্দিষ্ট একটি সময়ে সীমাবদ্ধ না রেখে বছরব্যাপী নিয়মিতভাবে পরিচালনা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জনস্বাস্থ্যের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা ও তা মোকাবিলার পথ খুঁজে বের করাও জরুরি। আমরা মেয়রদের বক্তব্যের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের কাজের বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
কাজেই দেরি না করে মেয়রদ্বয় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। প্রথমত, সবখানে মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এবং পাশাপাশি আন্তরিকতার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে সব কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা
বাকবিতণ্ডায় প্রাণহানি বন্ধ হোক!

এস.এম.রাহমান জিকু

শুরু হয়ে গেলো ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সবচেয়ে বড় দুটি প্রতিপক্ষ দল হচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই এই দুটি প্রতিপক্ষ দলের অগণিত শুভাকাক্সক্ষী ও সমর্থকগোষ্ঠী বিদ্যমান। ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশেও রয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার অহরহ সমর্থকগোষ্ঠী। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২২কে ঘিরে স¤প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানান আয়োজনে মেতে উঠেছে ফুটবল প্রেমীরা। ফুটবল একটি সম্মোহনী খেলা। যার প্রতিটি আসর ঘিরে ফুটবল প্রেমীরা তাদের নিজেদের প্রিয় দলের মুগ্ধতায় জীবনের প্রাণ খুঁজে নেয়। শুরু হতে যাওয়া ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২২ আসরের এই আমোদ-প্রমোদ উদযাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ফুটবল প্রেমী হাজারো তরুণ-তরুণীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ যুদ্ধের এই আসর উদযাপনে অনেক ফুটবল প্রেমীরা আবার অতি আবেগী মানসিকতা পোষণ করেন। যা সমাজে কিংবা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। যার ফলে মানুষের মধ্যে সামাজিক স¤প্রীতি বিনষ্ট হয়।পরিসংখ্যানে চোখে পড়ে বিগত ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ আসর সমূহ উদযাপনেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন দ্ব›দ্ব-সংঘাতে নিমজ্জমান ছিলো। এমনও দেখা গেছে যে, নিজের সহোদরদের মধ্যেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে বাকবিতÐা, এক এলাকার সাথে অন্য এলাকার দ্ব›দ্ব-সংঘাত উলেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। যেখানে প্রাণহানির মতো নাশকতাও ঘটেছিলো। খেলাধুলার যেকোনো ইভেন্ট উদযাপনে খেলাধুলা প্রেমীদের এমন দ্ব›দ্ব-সংঘাত কাম্য নয়, যা কখনোই আমোদ-প্রমোদের অংশ হতে পারে না। স¤প্রতি বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে অতি আবেগী ফুটবল প্রেমীদের কিছু সংখ্যক তুলকালাম পত্রিকারও শিরোনাম হয়েছে। যেখানে উল্লেখ্য, ব্যাংকে স্ত্রীর জমানো টাকা ভাঙিয়ে ব্রাজিলের পতাকা টাঙিয়ে সাড়া ফেলেছেন মিন্টু, আর্জেন্টিনার পতাকা টাঙাতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে স্কুলছাত্রের মৃত্যু, আর্জেন্টিনার পতাকা টাঙাতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে নারায়ণগঞ্জে যুবকের মৃত্যু প্রভৃতি। চলমান ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২২ আসর উদযাপনকে ঘিরে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি নাহয়, যেন কোনো প্রকারের দ্ব›দ্ব-সংঘাত বা প্রাণহানির মতো নাশকতার সৃষ্টি নাহয় সেদিকেটাই সচেতনতা বাড়াতে হবে।
প্রত্যেক ফুটবল প্রেমীরই নিজস্ব ব্যক্তিস্বত্ত¡া, রুচি, মানসিকতা ভিন্ন-ভিন্ন ভাবে বিদ্যমান। যা ফুটবল বিশ্বযুদ্ধে প্রতিপক্ষ দল নির্বাচনে প্রত্যেক ফুটবল প্রেমীর নিজস্ব স্বত্ত¡া কাজ করে। তাই যার পছন্দের দল একান্তই তার মানসিকতা কেন্দ্রিক হয়ে থাকবে। কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা, কেউ পর্তুগাল আবার কেউবা জার্মানি, ফ্রান্স। এভাবেই প্রত্যেক ফুটবল প্রেমীরা তাদের নিজস্ব ব্যক্তি চেতনায় দল নির্বাচন করে থাকেন। যেখানে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২২ আসর উদযাপনে কোনো প্রকারের ¯্যাসিং, দ্ব›দ্ব বা সংঘাত না থাকাটাই প্রয়োজন।
আমি ব্রাজিল, আমি আর্জেন্টিনা এমন প্রফুলিত ফুটবল বিশ্বযুদ্ধ উদযাপনে বাকবিতÐা বা সংঘাত নয়; হোক সুন্দর ও সুস্থ মানসিকতায় ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২২ উদযাপন।