সোশ্যাল মিডিয়ার যত কথা

16

পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব

মিতা পোদ্দার

পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ হচ্ছে অন্যদের কাছ থেকে তথ্য আহরণের একমাত্র মাধ্যম। মানুষ যোগাযোগের মাধ্যমেই নিজের অনুভ‚তি ও মনোভাব অন্যের কাছে স্থানান্তর করতে পারে। পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝির অবসানও একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যমে সম্ভবপর হয়। ক্রোধ-এর মতো নেতিবাচক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করাও সুস্থ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সম্ভপর হয়। লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন তাকে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই- একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আমরা যখন ভীষণ গতিশীল জীবনযাপন করছি, তখন আমাদের কাছে সম্পর্কের সমীকরণগুলো কি আরও বেশি জটিলতর হয়ে উঠছে? আধুনিক সভ্যতার প্রভাবে গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলোর জটিলতা বুঝতে কি আমাদের প্রয়োজন ভিন্নতর মনস্তাত্তি¡ক বিশ্নেষণ?
আমরা চারপাশে এখন হরহামেশা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার নানা গল্প শুনি। দাম্পত্য কলহ, দাম্পত্য বিচ্ছেদ শব্দগুলোর সঙ্গে আমরা আগের চেয়ে আরও বেশি পরিচিত হচ্ছি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা প্রতিদিন নতুন নতুন বন্ধু খুঁজে চলি, কিন্তু পুরোনো বন্ধুত্বটাকে নতুন করে ঝালাই করে নেওয়াতে আমাদের কেমন যেন অনীহা। তবে সুখের কথা এই যে, কিছু কিছু দাম্পত্য সম্পর্কের দিকে তাকালে আমাদের এসব ধারণা পাল্টে যেতেই পারে। তাদের দিকে তাকালে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, মানুষের জীবন তখনই সুন্দর যখন তা ভালোবাসায় মোড়ানো। তারা পাড়ি দিয়েছেন দীর্ঘ ভালোবাসার পথ, একে অপরের পাশাপাশি হাঁটছেন বহুদিন ধরে, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম সম্পর্ক কী করে সহজ ও সুন্দর রাখতে হয় এর রহস্য।
তারা বলেন, একটি সম্পর্কের ওপর সূর্যকিরণ প্রতিদিন সমানভাবে আলো দেয় না, তবে প্রখর রোদের দিনগুলোতে ছাতাটা ভাগ করে নেওয়া জানতে হয়।
সম্পর্ক সুন্দর রাখতে ছোট ছোট সুন্দর মুহূর্তকে গুরুত্ব দিন। একে অপরের শখ ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে সহায়ক হন। মতামতকে গুরুত্ব দিন, সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি অন্য কোনো উপায়ের বদলে সরাসরি নিজেদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে, তাদের সমস্যা অনেকটা কম হয়। সম্পর্ককে সময় দিন বলতে আমরা বেশিরভাগ সময় বুঝি একে অপরের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটান; কিন্তু তারও চেয়ে বেশি জরুরি হলো মনোমালিন্য বা মতের অমিল হলেই কোনো সিদ্ধান্তে চলে যাবেন না, বরং সময় নিন ও একে অপরকে বুঝুন। অনেক সময় আমরা এসব কিছুর মাঝে নিজেকে সময় দিতে ভুলে যাই। কিন্তু একটা সুস্থ সম্পর্কের জন্য নিজেকে সম্মান করা সবচেয়ে জরুরি।
লেখক : শিশু সাহিত্যিক

প্রচণ্ড শীতে গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান

মো. দিদারুল আলম

ধনীদের কাছে শীতকাল উপভোগ্য হলেও দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কাছে তা খুবই কষ্টের সময়। বর্তমানে দেশের অনেক অসহায় ও দরিদ্র মানুষ শীতের তীব্রতায় গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে দিন যাপন করছে। এই পরিস্থিতিতে সমাজের বিত্তবানদের তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ বলে মনে করি। কেননা, বিপদ-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো অশেষ সওয়াবের কাজ। যাদের তিন-চারটা গরম কাপড় আছে, অন্তত ওখান থেকে একটি কাপড় শীতার্ত মানুষকে দান করা দরকার। সারা দেশে প্রচÐ শীত জেঁকে বসেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর জেলার দরদ্র মানুষস সারা দেশের গরিব লোকেরা গরম কাপড়ের অভাবে শীতে কাবু হয়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসের কারণে দেশব্যাপী তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে, ফলে দিনমজুর, ছিন্নমূল ও হতদরিদ্ররা পড়েছে ভীষণ কষ্টে, প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় রাতের বেলা হাড়-কাঁপানো শীতে সময় পার করছে। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
মৃদু ও মাঝারি শৈত্য প্রবাহে সারাদেশে বিপর্যস্ত জনজীবন। পৌষের শুরুতেই কনকনে শীতে কাপছে পুরো দেশ। শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষকে উপকারে পরকালীন পুরস্কার প্রাপ্তির কথা ঘোষণা করে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে পোশাক দান করবেন।’ -সুনানে দাউদ। শীতার্তদের শীত নিবারণসহ অসহায় মানুষের দুর্দশা লাঘব মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুসিবতগুলো দূর করে দেবেন।-সহীহ মুসলিম।
তাই আসুন, আমরা দেশের শীতার্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসি। একটি কাপড় দিয়ে একটি শিশু কিংবা একজন বৃদ্ধের শীত নিবারণের চেষ্টা করি।
লেখক : কথাসাহিত্যিক

 

কিছুটা সেক্রিফাইজ, একটু কম্প্রোমাইজ স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ কমাতে পারে

সাইফুল ইসলাম চৌধুরী

পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বযুগে সর্বাধুনিক জীবনবিধান আল কুরআন স্বামীদের নির্দেশ করে বলছেন, ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ আর তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ।’ (বাকারা: ১৮৭) স্বামী-স্ত্রী একে অপরের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। সুখ-দুঃখের সর্বনিকটের সাথী। একে অপরের পরিপূরক। পৃথিবীর পবিত্রতম সম্পর্কের মধ্যে অন্যতম হলো স্বামী-স্ত্রীর নিরেট প্রেমের বন্ধন। উপযুক্ত পোশাক যেমন একজন মানুষকে লজ্জা আবৃত করে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। স্বামী-স্ত্রীও একে অপরের ঠিক তেমনি পোশাক; যারা একজন অপরজনের যোগ্য উপস্থাপক। স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র ভালোবাসায় পরিবারে বরকত আনে। পরিবার হয় অনাবিল শান্তির স্বর্গরাজ্য।
আসে আশাতীত সফলতা। পরিবারে সুখ শান্তির অন্যতম মাধ্যমে দু’জনের ওয়েল রিলেশন। দুটো মানুষ একসাথে পথ চলতে গেলে একজন অন্যজনের দোষ-ত্রুটি দেখবে এটাই স্বাভাবিক। যোগ্যতা, সীমাবদ্ধতা অনেক কিছুই দৃষ্টিগোচর হবে। সেগুলো গোপন রেখে একটু ক¤েপ্রামাইজ, কিছুটা সেক্রিফাইজের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার নামই যুগলবন্দী। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, নো সেক্রিফাইজ, নো ক¤েপ্রামাইজের জাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে সোনার সংসার। দিন দিন বেড়ে চলছে বিবাহ বিচ্ছেদ। স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন; স্ত্রীর ছুরিকাঘাতে স্বামী খুন; স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েনে আত্মহত্যা; পরকীয়া বা একজনের বউ অন্যজনের সাথে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘৃণ্য অপরাধের ফিরিস্তি এখন নিত্যকার সংবাদ। বৈবাহিক জীবনে এ অপরাধ ও পারিবারিক অশান্তির মূলে অন্যতম কারণ হলো ‘তুমি আমার যোগ্য নও’ প্রবনতা। সামান্য কথা-কাটাকাটি যখন যোগ্যতা অযোগ্যতার বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে তখন স্বর্গীয় সম্পর্কের মাঝে সন্দেহ বাসা বাঁধে।
আপনজন থেকে হয়ে উঠে বিরাজমান।
স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক হওয়া চাই ইস্পাত-দৃঢ়। ভালোবাসার রাজপ্রাসাদ কেন ইগো প্রবলেমের কাছে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে। মানবজাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষাগুরু শিখিয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিযী) অন্যত্র রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘স্বামীকে খুশী রেখে যে স্ত্রীলোক মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতী।’ (ইবনে মাযাহ) হযরতের মহামূল্যবান হাদিস দু’টি আমাদের সাংসারিক জীবনের সহজপাঠ্য সিলেবাস। কতই না সুন্দর ফরমান আমার হযরতের। এ ফরমানে মোস্তফা (সা.)’র মূল থিম হলো স্বামীর চেষ্টা থাকবে স্ত্রীর সন্তুষ্টি আর স্ত্রীর চেষ্টা স্বামীর সন্তুষ্টি। এ বৈধ প্রতিযোগিতা যদি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে চলে তাহলে তাদের উপর আল্লাহ-রাসূল সহায় হবেন। তুমি আমার যোগ্য নও! সম্পর্ক বিনাশী এধরনের বাক্য বিনিময় না করে; স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ উপহার মনে করে যদি চলা যায়, তবে পরিবার হবে স্বর্গরাজ্য।
লেখক : ইসলামি গবেষক, খতিব: এ বি এম ফজলুল কবির চৌধুরী জামে মসজিদ, রাউজান, চট্টগ্রাম।