সেলফি নিয়ে মোহ দেখলে ফ্রয়েড কি বলতেন?

77

কিংবদন্তি মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড আজ যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে সেলফি নিয়ে বর্তমানে মানুষের মধ্যে যে মোহ কাজ করছে তাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করতেন তিনি? মনোবিজ্ঞানী এবং লেখক টমাস চামোরো-রিমুজিচ তার সম্ভাব্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এভাবে: পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোতেও যদি আপনি যান, অবধারিতভাবে দেখবেন সেখানেও বহু মানুষ ছবি তুলছে তাদের নিজেদের। আমরা হয়তো মনে করি যে ‘সেলফি’ নতুন একটি বিষয়। এটা ঠিক যে ‘সেলফি’ শব্দটি প্রথম অক্সফোর্ড অভিধানে জায়গা পায় ২০১৩ সালে এবং দ্রুত তা বছরের সেরা শব্দ হিসাবে পরিচিতি পায়।
কিন্তু সেলফি বলতে যা বোঝায় তার ইতিহাস ততটাই পুরনো- যতটা পুরনো ফটোগ্রাফি। ১৮৩৯ সালে রবার্ট কর্নেলিয়াস নামে একজন আমেরিকান প্রথম সেলফি তুলেছিলেন। কিন্তু প্রতিদিন বাথরুমের আয়নায় নিজের চেহারা দেখে মুগ্ধ হওয়ার সুযোগ যেখানে রয়েছে, সেখানে সেলফি নিয়ে এত মোহ কেন?
কিছুটা অস্বাভাবিক। নয় কি? এই অস্বাভাবিক আচরণকে ফ্রয়েডের চেয়ে কে বেশি ব্যাখ্যা করতে পারবেন? আমি যদি নিজেকে ভালোবাসি, তুমিও আমাকে বাসবে- ফ্রয়েড মনো-বিশ্লেষণের ধারণা আবিষ্কার করেছিলেন। সেইসাথে ইগো অর্থাৎ অহংবোধ, অবচেতন এবং থেরাপির মত ধারণাগুলো জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এসব মনস্তাত্ত্বিক ধারণার অন্যতম ছিল- নার্সিসিজম অর্থাৎ অতিমাত্রার আত্ম-প্রেম। খবর বিবিসি বাংলার
গ্রীক পুরাণে রয়েছে- নার্সিসাস নামে এক যুবক একদিন নদীর পার দিয়ে হাঁটার সময় নদীর পানি পান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তা করতে গিয়ে তিনি নদীর পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলেন। দেখতে দেখতে নিজের চেহারা নিয়ে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়ে পড়লেন যে ভুলে গেলেন তার চারপাশে কি হচ্ছে। একসময় নদীর পানিতে সেই প্রতিচ্ছবি ছুঁতে গিয়ে তিনি ডুবে মরেছিলেন।
ফ্রয়েড অবশ্য বলেন, ‘কিছুটা আত্ম-প্রেম স্বাভাবিক। সবার ভেতরেই তা থাকে’। কিন্তু এই আত্ম-প্রেম অনেকসময় বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গিয়ে মনোবৈকল্য তৈরি করতে পারে। অন্য সবাইকে বাদ দিয়ে শুধু আত্ম-প্রেমেই মশগুল হয়ে পড়তে পারে কেউ কেউ। সেই মানসিক অবস্থাকেই নার্সিসিজম বা চরম আত্ম-প্রেম বলা হয়।
এদিকে কোন মানুষ কতটা নার্সিসিস্ট বা আত্ম-প্রেমী তা মাপার পদ্ধতি বের করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
কিছু উদাহরণ :
– আত্ম-প্রেমীরা সোশাল মিডিয়াতে অন্যদের তুলনায় অনেক সক্রিয়।
– তারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী সেলফি তোলে।
…কিন্তু এই অতি আত্ম-প্রেম মূলত ছেলেদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে আত্ম-প্রেম অপেক্ষাকৃত কম। মেয়েরা সোশাল মিডিয়ায় বেশি সংখ্যায় সেলফি পোস্টও করলেও, আত্মপ্রেমে ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে।

আত্ম-প্রেম বাড়ছে
মার্কিন মনোবিজ্ঞানী জঁ টুইঞ্জ পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন, মানুষের মধ্যে অতিমাত্রায় আত্ম-প্রেমের প্রবণতা বাড়ছে। গত এক দশকে, মানুষের শারীরিক স্থূলতা যে হারে বেড়েছে, অতিমাত্রার আত্ম-প্রেমের প্রবণতাও ততটা বেড়েছে।
ফ্রয়েডের অধিকাংশ তত্ত্ব আসতো তার প্রতিদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে। বর্তমানে যে বিস্তর তথ্য পাওয়ার সুযোগ আমাদের রয়েছে, ফ্রয়েড বেঁচে থাকলে দারুণ উল্লসিত হতেন। তিনি নিশ্চয়ই সেলফি নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতেন। তিনি হয়তো লক্ষ্য করতেন যে, অধিকাংশ মানুষ সেলফি তুলে তা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করছে শুধু আত্ম-প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই নয়, বরঞ্চ অন্যরা যাতে তাকে ভালোবাসে- সেই আকাঙ্খা থেকেই তারা তা করছে।

নজর কাড়ার চেষ্টা : এটা ভুললে চলবে না যে ফ্রয়েড মানুষের মনস্তত্ত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে থেকে। সে সময় সমাজে যৌন অবদমনের মাত্রা ছিল প্রচন্ড। নারী এবং পুরুষকে যতটা সম্ভব পৃথক থাকতে হতো। যৌন আকাঙ্খা প্রদর্শন ছিল লজ্জার ব্যাপার। আর যৌনতা উপভোগ ছিল আরো লজ্জার।
ফ্রয়েড লক্ষ্য করেছিলেন, ভিয়েনার অভিজাত সমাজের যেসব রোগীরা তার কাছে আসছেন, তাদের অনেকে একধরণের ‘অস্থির মানসিক-পক্ষাঘাতে’ ভুগছেন। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া তারা হাঁটতে পারতেন না। ফ্রয়েড ভাবলেন, এই সব মহিলারা ভাবছেন তাদের হাঁটা যদি কারো দৃষ্টি আকর্ষণ নাই করলো, তাহলে হেঁটে লাভ কি?
সুতরাং মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের যদি এতটাই আমাদের প্রয়োজন, তাহলে খোলামেলা কিছু ‘সেলফি’ পোস্ট করা অন্য কিছুর চেয়ে সহজ এবং ভালো পন্থা নয় কি?
হয়তো ভালো, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সেলফি নিয়ে মোহ কোনো পরিপূর্ণ স্বাভাবিক সুস্থ কোনো ব্যাপার। যারা সেলফি তুলছে তাদের বিষয়ই শুধু নয়, অন্যদের ওপর এর প্রভাব কি হয় সেটাও ভাবার বিষয়।

স্বাভাবিক অসুখী : সেলফি সাধারণত কোনো মানুষের শ্রেষ্ঠ সময়ের প্রতিচ্ছবি, খুব সচেতনভাবে শুধু ভালো সময়টাকে দেখানোর চেষ্টা হয়। সোশাল মিডিয়াতে ছবি এবং সেলফি দেখলে মনে হয়, আমাদের চারদিকে শুধু সুখী মানুষের ভীড়। হালের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এত সুখী মুখ দেখলে অনেক মানুষের মধ্যে ঈর্ষা, নিরাপত্তাহীনতা, বঞ্চনা এবং একাকীত্বের বোধ জন্ম নেয়।
এটা দেখে ফ্রয়েড হয়তো বলতেন, এ ধরণের সুখী-সুখী মুখের ফটো আমাদের ভেতর অনেকসময় অতিমাত্রায় মানসিক অস্থিরতা তৈরি করছে, অসুখী করে তুলছে। সুতরাং পরেরবার সেলফি তুলতে গেলে গ্রীক পুরাণের নার্সিসাসের কথা মনে করবেন, এবং শুধু নিজের কথা না ভেবে আপনার বন্ধুদের কথা ভাববেন। তাতে করে আপনি হয়তো তত বেশি ‘লাইক’ পাবেননা, কিন্তু ফ্রয়েড আপনাকে সেই পরামর্শই হয়তো দিতেন।




ফেলে যাওয়া লাশের পেটে
দেড় হাজার ইয়াবা
ঢাকায় হাসপাতালে ফেলে যাওয়া এক নারীর লাশের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে চিকিৎসকরা তার পেটে প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় দেড় হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী ওই নারীর পরিচয় জানা যায়নি। যারা তাকে নিয়ে এসেছিলেন, তারাও রেখেই সটকে পড়ায় তাদের পরিচয়ও মেলেনি।
নেশার বড়ি ইয়াবা পেটের ভেতরে নিয়ে পাচারের কয়েকটি ঘটনা ইতোপূর্বে ধরা পড়লেও মৃত কারও পেটে ইয়াবা পাওয়ার ঘটনা আগে শোনা যায়নি।
গতকাল বুধবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে ওই নারীর ময়নাতদন্ত করা হয়। তখনই তার পেটে ইয়াবা পাওয়া যায় বলে কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান এ এম সেলিম রেজা জানান। খবর বিডিনিউজের
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে গতকাল বুধবার এই নারীর লাশ এসেছিল পাশের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে। তা নিয়ে এসেছিল শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।
শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যার আগে দু’জন লোক এই নারীকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখে মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা দেওয়ার পর ওই দু’জন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসার কথা বলে বেরিয়ে গিয়ে আর ফেরেনি’।
মঙ্গলবার (গতকাল) সারাদিনও কেউ লাশ নিতে না আসায় পুলিশ তা গ্রহণ করে। এরপর বুধবার ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় সোহরাওয়ার্দীর মর্গে।
ডা. সেলিম রেজা বলেন, ‘ময়নাতদন্ত করার সময় তার স্টমাকে বেশ কিছু প্যাকেট পাওয়া যায়, যার ভেতরে ইয়াবা ছিল। তখন চিকিৎসকরা পুলিশকে ঘটনাটি জানান’।
পুলিশ কর্মকর্তা আজাদ বলেন, ‘ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক লাশের পেটে ৫৭টি প্যাকেটে ইয়াবা পায়, যার মধ্যে দু’টি প্যাকেটে থাকা ইয়াবা গলে গিয়েছিল। বাকি ৫৫টি প্যাকেটে ১৫’শ ট্যাবলেট পাওয়া যায়’।
এই নারীর পরিচয় বের করতে তার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি তাকে নিয়ে আসা দুই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত চালানো হচ্ছে বলে জানান পরিদর্শক আজাদ।