সেবকদের আবাসন প্রকল্প অনিশ্চয়তার দোলাচলে

45

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীদের (সেবক) আবাসন প্রকল্পের দুই বছর মেয়াদ শেষ হলেও কাজের অগ্রগতি কাগজেই সীমাবদ্ধ। এখনও সেবকদের অস্থায়ী ঘরে স্থানান্তর করতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে সেবকদের উন্নত আবাসনের স্বপ্ন যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে সব প্রকল্পের মত এটিরও এক বছর মেয়াদ বেড়েছে। শুরু থেকে চরম ধীরগতির কারণে বাড়তি সময়ের মধ্যেও প্রকল্পের কাজ শেষ করা আদৌ সম্ভব হবে কি না এমন অনিশ্চয়তার দোলাচালে পড়েছে ২৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস’ প্রকল্প।
নগরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হরিজন সম্প্রদায়ের ৩ হাজার ৬৪৭ জন পরিচ্ছন্নকর্মী সিটি করপোরেশনের অধীনে কাজ করেন। বান্ডেল কলোনী, ঝাউতলা, মাদারবাড়ি ও সাগরিকার হরিজন কলোনীতে তাদের বসবাস। সময়ের সাথে বেড়েছে পরিবারের সদস্য সংখ্যা। ফলে একরুমের জরাজীর্ণ ঘরে থাকে ৭-৮ জনের পরিবার। তাদের এমন দৈন্যদশা থেকে মুক্তি দিতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। সরকার ৭টি ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ২৩১ কোটি টাকা বরাদ্দও দেয়। প্রকল্পের বিপরীতে পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে অস্থায়ী ঘরে সেবকদের স্থানান্তর করতে হবে। তারপর পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু করতে হবে। তবে অস্থায়ী ঘর তৈরি করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয় সিটি করপোরেশনকে। কেননা নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য কোনো এলাকায় করা অস্থায়ী ঘরে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় সেবকরা। তাই পুরাতন ভবনের পাশেই রাস্তার একপাশে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী ঘর। সেখানে বিদ্যুৎ-গ্যাসের লাইন দিতেই সময় গেছে দুই বছর। এখন তাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী।
কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রকল্পটির উপ পরিচালক ও চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব দাশ জানান, ভবনের নকশা তৈরির কাজ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। সেবকদের অস্থায়ী ঘরে স্থানান্তর করেই ভবন ভাঙার কাজ শুরু হবে। তবে বাড়ানো একবছর মেয়াদের মধ্যে ৭টি ভবন নির্মাণ সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার পূর্ব মাদারবাড়িতে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের আবাসিক কলোনী পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এই সময় তিনি বলেন, ‘পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন রোগ বালাই প্রতিরোধের প্রধান প্রতিষেধক। করোনাকালে এর গুরুত্ব অপরিসীম। পরিচ্ছন্ন আবাস ও দেহকে জীবাণু সহজে স্পর্শ করে না। তাই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ কর্মপরিকল্পনায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনী নিশ্চিত হলে রোগ-ব্যাধি সংক্রমণের জীবাণু নিস্তেজ ও নিষ্প্রাণ হতে বাধ্য।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই নগরীর পরিচ্ছন্নকর্মীদের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে চসিকের গৃহীত ২৩১ কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস’ শীর্ষক প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পে সরকারি তহবিল (জিওবি ফান্ড) থেকে ১৮৫ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। বাকি ৪৬ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এই প্রকল্পের আওতায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ১৪ তলা বিশিষ্ট ৭টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১ হাজার ৩০৯টি ফ্ল্যাট থাকবে। এর মধ্যে ৩৩নং ওয়ার্ডস্থ বান্ডেল কলোনিতে ৩টি, ফিরিঙ্গীবাজারে ১টি, ২৭নং ওয়ার্ডস্থ ঝাউতলায় ২টি এবং সাগরিকায় চসিকের নিজস্ব জায়গায় ১টি ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনগুলোতে বসবাসকারী পরিচ্ছন্নকর্মীদের প্রতিটি পরিবারের জন্য দুইটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, দুইটি বাথরুম থাকবে। প্রতিটি ভবনে দুইটি লিফট থাকবে। এছাড়া তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য প্রতিটি ভবনের নিচতলা স্কুল ও সাংস্কৃতিক কাজে ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা হবে।