সেই মিনুর ঘটনায় তলব দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে

4

চট্টগ্রামে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের হয়ে জেল খাটা মিনুর গাড়িচাপায় মৃত্যুর ঘটনায় সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং আটক কুলসুমীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তলব করেছেন হাইকোর্ট। এসব নথি ও কেস ডকেটসহ দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে যুক্ত থাকতে বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর এ দুই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মামলার নথি (কেস ডকেট-সিডি) নিয়ে ভার্চ্যুয়ালি হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
আদালতে মিনুর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
এর আগে গত ৩১ মার্চ এ ঘটনা উচ্চ আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এরপর আদালত গত ৭ জুন মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেন।
গত ১৬ জুন বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু। তবে গত ২৮ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে বায়েজিদ-ভাটিয়ারী লিংক রোডের মহানগর সানমার গ্রিনপার্কের বিপরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মিনু।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় গত ২৯ জুন একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। আর খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত কুলসুমকে গত ২৯ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় কুলসুমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। তিনি জবানবন্দিও দেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুবায়ের মৃধা।
একটি হত্যা মামলায় আদালত যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেন কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। আর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেল খাটছেন মিনু। বিষয়টি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান আদালতের নজরে আনেন।গত ২২ মার্চ সকালে অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভ‚ঁঞার আদালতে পিডব্লিউ মূলে মিনুকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে জবানবন্দি শুনে এ মামলার আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় মিনুর উপ-নথি গত ২৩ মার্চ হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন। এ মামলায় মিনুর পক্ষে শুনানি করেছেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টসকর্মী কোহিনূর আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর রহমতগঞ্জে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পারভিন আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন গার্মেন্টসকর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এরপর থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। মামলায় পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে হত্যা করা হয়েছে প্রতিবেদন দিলে হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।
মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ওই হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদÐসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেন। সাজার পরোয়ানামূলে কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি মিনু গত ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান।
এদিকে গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান নারী ওয়ার্ড পরিদর্শনকালে মিনু কোনো মামলার আসামি নয় বলে জানতে পারেন। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। খবর বিডিনিউজের
কারাগারের সংরক্ষিত হাজতি রেজিস্ট্রার অনুসারে আসামি কুলসুম আক্তার গত ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কারাগারে আসেন। তিনি কারাগারে প্রায় এক বছর তিন মাস ছিলেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালত ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জামিন মঞ্জুর করেন। ওইদিন কারাগার থেকে মুক্তি পান কুলসুম আক্তার কুলসুমী।