সেই পুলিশের হাতের কব্জি জোড়া লাগিয়ে আলোচনায় যে চিকিৎসক

89

নিজস্ব প্রতিবেদক

লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নে গত রোববার আসামির দা’য়ের কোপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় জনি খান (২৮) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলের হাতের কব্জি। ওইদিন বিকেল ৫টা থেকে ঢাকার আল মানার হাসপাতালে কব্জি জোড়া লাগানোর অপারেশন শুরু হয়। অবশেষে ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় রাত ২টা ৪০ মিনিটে কাব্জ জোড়া লাগাতে সক্ষম হন ডাক্তাররা। কব্জি জোড়া লাগানোর জটিল অপারেশনে নেতৃত্ব দেন ডা. সাজেদুর রেজা ফারুকী। তিনি বর্তমানে জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউটে হ্যান্ড অ্যান্ড মাইক্রোসার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কমর্রত আছেন। জটিল এই অপারেশন করেন এই সার্জন। নিজ খরচে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতায় গত ২০ বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিস্তৃত কর্মজীবনে এ রকম বহু জটিল অস্ত্রোপচারে দেখেছেন সাফল্যের মুখ।দলগতভাবে করোনা-ডেঙ্গুর মতো দুর্যোগেও অব্যাহত রাখেন স্বাস্থ্যসেবা। তবে প্রচারবিমুখ হওয়ায় পাদপ্রদীপের আলোয় আসার সুযোগ পায়নি স্বাস্থ্যসেবায় তাঁর এসব অবদান।
অপারেশনে অংশ নেওয়া পাঁচ সদস্যের দলে অংশ নেওয়া অন্য চিকিৎসকরা হলেন, হাসপাতালটির প্লাস্টিক সার্জন ডা. হাসান নাজিরুদ্দীন সুমন, ডা. শাকেরা, অ্যানেসথেশিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আলাউদ্দীন ও ডা. মোস্তফা কামরুল ইসলাম। বহু চেষ্টার পরও এই অস্ত্রোপচার নিয়ে নিভৃতচারী এই চিকিৎসকের মুখ খোলানো যায়নি। কারণ আড়ালে থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দলগত কাজ করে যেতে ভালোবাসেন তিনি।
ডা. সাজেদুর রহমান ফারুকী ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। আইডিয়াল স্কুল থেকে ১৯৮৪ সালে এসএসসি এবং ১৯৮৬ সালে রাজধানীর নটরমেড কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে ১৯৯৩ সনে এমবিবিএস পাস করেন তিনি। ডা. সাজেদুর রহমান ফারুকী জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) থেকে অর্থোপেডিকসে এমএস পাস করেন। এর পর তিনি নিজস্ব অর্থায়নে ভারতের গঙ্গা ও বোম্বে হাসপাতাল এবং সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
অপারেশনের পর এখন কনস্টেবল জনি খানের অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানা গেছে। জটিল এ অস্ত্রোপচারের পর তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তার হাতের স্বাভাবিক রঙ চলে এসেছে। জোড়া লাগানো নার্ভগুলোর কার্যকারিতাও চলে আসতে শুরু করেছে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় হাতে উষ্ণতাও চলে এসেছে।
উল্লেখ্য, লোহাগাড়া থানার পদুয়া ইউনিয়নের লালারখিল এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে কবির আহমদ (৩৫) নামের এক সন্ত্রাসীকে ধরতে গত রোববার লালারখিল এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য ধারালো দা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় আসামি কবির আহমদ। ধারালো দায়ের কোপে পুলিশ সদস্য জনি খানের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া আরেক পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর পালিয়ে যান কবির আহমদ। গুরুতর আহত অবস্থায় কনস্টেবল জনি খানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তবে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় জনি খানকে আকাশ পথে রাজধানীর আল মানার হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায় শাহাদাতকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।