সূর্যমুখী বাগানে দর্শনার্থীর উৎপাত, বিপাকে চাষি

73

হাটহাজারীতে একবর্ষী ফুলগাছ সূর্যমুখী ফুলের আবাদকে ঘিরে জমে উঠেছে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম। হাটহাজারী পৌরসভার আলীপুর গ্রাম সংলগ্ন আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রথমবারের মতো এ বছর একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। লম্বায় প্রায় ৩ মিটার ও ব্যাস ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত দেখতে সূর্যের মত হওয়ায় এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকা এসব ফুলের হাসির ঝিলিক দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়েসেই নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছে দর্শনার্থীরা। গাছে ফুল আসতে শুরু করার পর থেকে এলাকার পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্থান থেকে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের দর্শনার্থীরা প্রতিদিন ফুল দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীরা জানান, এমন সৌন্দর্যে মুগ্ধ তারা। চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ফসলের মাঠ। মাঝখানে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। ফুটে আছে হাজার হাজার হলুদ বর্ণের সূর্যমুখী ফুল। স¤প্রতি এ দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্বরত আনসার জানান, সূর্যমুখী ফুল ফোটার পর ছবি তুলে কে বা কারা ফেসবুকে দিলে তা দ্রæত ভাইরাল হয়ে যায়। আর ফেসবুকে দেখা সূর্যমুখীর বাগানকে বাস্তবে দেখার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। দর্শনার্থীদের চাপ এত বেশি যে এখন বাগানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জমির চারদিকে জাল দিয়ে ঘেরা দেয়া হয়েছে। এত দর্শনার্থীদের সামাল দেয়া আমাদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোনভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না কৌতুহলী দর্শনার্থীদের প্রবেশ। ফুল বাগান দেখতে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামরিন তাসমিন বলেন, সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিকেই মুখ ঘুরিয়ে থাকা সূর্যমুখী ফুল আগে কখনো সরাসরি দেখা হয়নি। কিছুদিন ধরে ফেসবুকে ছবি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিই সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসব। তাই বন্ধুদের নিয়ে বাগানটি নিজের চোখে দেখতে আসা। একসঙ্গে এত ফুল দেখে আমি অভিভূত। গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, এ তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। তাই দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে একদিন দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে বলে এবার বারি-৩ জাতের আবাদ হচ্ছে। এ জাতে প্রতি একর আবাদে ৫ কেজি বীজ লাগে। সারাদেশে ফরিদপুর, মেহেরপুর ও পাবনায় ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন কেন্দ্রের তিনটি খামারেই এখন এ বারি-৩ জাতের বীজের চাষ করা হয়েছে। এবার এখানে বীজ পাওয়ার পর তা স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। গবেষণা কেন্দ্রেটির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খলিলুর রহমান ভূঁইয়া জানান, বীজের জন্য খামারে প্রতি বছরই কমবেশি সুর্যমূখীর চাষ করা হয়। এবার আমাদের এখানে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এ এলাকার মাটিতে সূর্যমুখী ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হতে পারে। অনেক কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ প্রাশ করেছেন। এটি বাণিজ্যিক দিকে ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও জানান, মাঠজুড়ে ফুলে ভরে যাওয়াতে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তেরি হয়েছে। অন্যদিকে, পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। গত কয়েক দিন থেকে সূর্যমুখী ফুল দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছে, ছবি তুলছে। একই সাথে মিডিয়াকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করছে এইটা সৌভাগ্যের বিষয়।