সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরু

15

পূর্বদেশ ডেস্ক

সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো বাঘ গণনার কাজ শুরু হয়েছে গতকাল রবিবার থেকে। এদিন বনের কালাবগি এলাকায় উদ্বোধন করা হবে বাঘ জরিপের কার্যক্রম। এবারই প্রথম বাঘের পাশাপাশি হরিণ ও শূকর গণনা করা হচ্ছে। এজন্য সুন্দরবনের ৬৬৫ স্পটে বসানো হচ্ছে জোড়া ক্যামেরা। ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে জানা যাবে বাঘ গণনার ফলাফল। বাঘ গণনার কাজ নিয়ে শনিবার খুলনা ফরেস্ট ঘাটে ক্যামেরা ট্র্যাপিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার। সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মো. মোহসিন হোসেন বলেন, প্রথম পর্যায়ে খাল সার্ভের মাধ্যমে বাঘের পাগমার্ক বা পায়ের ছাপ দেখা হয়েছে। পুরো সুন্দরবনে এ খাল সার্ভে করা হয়। ১ জানুয়ারি থেকে তৃতীয়বারের মতো ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপ করতে যাচ্ছি। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, সুন্দরবন অনেক বড় এলাকা। এক বছরের মধ্যে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে এ কাজ করা সম্ভব নয়। আমাদের ৪৫০টি ক্যামেরা দিয়ে মার্চের মধ্যে জরিপ কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। শুষ্ক মৌসুমে ক্যামেরা বসাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে এ কাজ করতে পারব না। আগামি মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত খুলনা রেঞ্জ ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ করা হবে। আর নভেম্বর-ডিসেম্বরে চাঁদপাই রেঞ্জ ও শরণখোলা রেঞ্জে কাজ চলবে।
তিনি আরো বলেন, সব মিলিয়ে ৬৬৫টি গ্রিডে জোড়া ক্যামেরা বসানো হবে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি, খুলনা রেঞ্জে ১৪০টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৮০টি, চাঁদপাই রেঞ্জে ১৪৫টি। প্রতিটি গ্রিডে বসানো হবে এক জোড়া ক্যামেরা। প্রতি গ্রিডে ৪০ দিন ক্যামেরা থাকবে। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে আমরা ছবি তুলব। এরপর অ্যানালাইসিস করব। পরে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
বন বিভাগ জানায়, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ এবং সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় আরো প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে বেশ কয়েকটি কার্যক্রম রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বাঘের শিকার প্রাণী হরিণ ও শূকর শুমারি, বনের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বাঘ স্থানান্তর, অন্তত দুটি বাঘে স্যাটেলাইট কলার স্থাপনের মাধ্যমে বাঘের গতিবিধি মনিটরিংয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকল্পটির কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্ব›দ্ব নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও চারটি রেঞ্জের কমিউনিটি পেট্রোল গ্রæপের ১৮৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাদের পোশাক সরবরাহ এবং প্রতি মাসে বন কর্মীদের সঙ্গে মাসিক সভা করা।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, প্রায় প্রতি বছর আগুন লেগে বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি, সে জায়গায় দু’টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও সুন্দরবনে আগুন লাগলে যেন তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো যায় সেজন্য আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি, পাইপ ও ড্রোন কেনা হবে।
সুন্দরবনে বাঘ-মানুষ দ্ব›দ্ব নিরসনে গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় নদী ও খাল ভরাট হওয়ায় গ্রামে বাঘ ঢুকে জানমালের নিরাপত্তা হুমকি হয়ে থাকে। ওই ৬০ কিলোমিটার অংশে নাইলনের ফেন্সিং নির্মাণ করে বাঘ-মানুষের দ্ব›দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। খবর বিডিনিউজের
২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালে আইলা এবং ২০২১ সালে ইয়াসের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে সুন্দরবনের সব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণী আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে ঢোকে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণী ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কেল্লা বসানো হবে।