সুন্দরবনের বাঘ গণনা চলছে

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের বাঘ (রয়েল বেঙ্গল টাইগার) জরিপ শুরু হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে খাল সার্ভের মাধ্যমে এ জরিপ শুরু হয়েছে।
জরিপের পরবর্তী ধাপ ক্যামেরা ট্র্যাপিং ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় অর্থ ছাড় করার পরই জরিপের জন্য চার বিশেষজ্ঞ নিয়োগে টেন্ডার আহবান করা হয়।
এ টেন্ডারে ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও খাল সার্ভের জুনিয়র এবং ডাটা অ্যানালাইসিসের সিনিয়র বিশেষজ্ঞ পাওয়া গেছে। বাকি দুইজন এখন পাওয়া যায়নি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও খাল সার্ভে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ ও ডাটা এনালাইসিস সিনিয়র বিশেষজ্ঞ পাওয়ার পর ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঘ জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। শুরুতে খাল সার্ভে করা হচ্ছে। ১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ক্যামেরা ট্র্যাপিং শুরু হবে। সে জন্য পুরোনো ক্যামেরা থেকে সচলগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে। নতুন ২০০টি ক্যামেরা এখনও কেনা হয়নি। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, এ জরিপের জন্য চার জন বিশেষজ্ঞ দরকার ছিল। তারা হলেন- ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও খাল সার্ভের জন্য একজন সিনিয়র বিশেষজ্ঞ ও একজন জুনিয়র বিশেষজ্ঞ, ডাটা এনালাইসিসের জন্য সিনিয়র ও জুনিয়র বিশেষজ্ঞ। চার বিশেষজ্ঞ নিয়োগের টেন্ডার আহবানের পর ৭ ডিসেম্বর ছিল আবেদনের শেষ দিন। এরপর অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দুজন বিশেষজ্ঞ (ক্যামেরা ট্রাপিং ও খাল সার্ভে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ ও ডাটা অ্যানালাইসিস সিনিয়র বিশেষজ্ঞ) বাছাই করা হয়েছে। এদের নিয়েই ১৫ ডিসেম্বর খাল সার্ভে শুরু হয়।
আবু নাসের বলেন, এ প্রকল্পে দুই কিস্তিতে এক কোটির কিছু বেশি অর্থ ছাড় করার পরই বিশেষজ্ঞ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাঘ জরিপের জন্য প্রয়োজনীয় অবশিষ্ট অর্থ জরিপ শুরুর পর পাওয়া যাবে। বাঘ জরিপের জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে তিন কোটি টাকা অনুমোদন হয়। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় দুই কিস্তিতে এক কোটির কিছু বেশি টাকা ছাড় করে। সব কার্যক্রম শেষে বাঘ জরিপ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন পুরোনো ক্যামেরাগুলোর অবস্থা দেখা হচ্ছে। এ জরিপ কাজের জন্য উপযুক্ত ক্যামেরা খোঁজা হচ্ছে। বাঘ জরিপ কাজে এবার নতুন ২০০ ক্যামেরা থাকবে। আর পুরোনো ক্যামেরা থেকে আরও ১০০ নিয়ে ৩০০টি স্পটে ক্যামেরা স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বন বিভাগ থেকে জানা গেছে, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প অনুমোদন হয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ রয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের একটি অংশে তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা দিয়ে বাঘ গণনা করার কথা উল্লেখ আছে। প্রকল্পের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে বাঘ যেন লোকালয়ে চলে না আসে সে জন্য জনবসতি আছে এমন ৬০ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের বেড়া দেওয়া, ঘূর্ণিঝড় ও উচ্চ জলোচ্ছ্বাসে বাঘ যেন নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারে সে জন্য বনের মধ্যে ১২টি মাটির কেল্লা নির্মাণ, সুন্দরবনে আগুন লাগার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ এবং আগুন লাগলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে তা নেভানো যায় সে জন্য যন্ত্রপাতি, পাইপ ও ড্রোন কেনা, সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্ব›দ্ব নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও চারটি রেঞ্জের কমিউনিটি প্যাট্রল গ্রæপের ১৮৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, পোশাক সরবরাহ ও প্রতি মাসে বনকর্মীদের সঙ্গে মাসিক সভা করা।
উল্লেখ, ২০১৮ সালের জরিপ মতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০০৯-২০১৭), ২০১০ সালের বিশ্ব বাঘ সম্মেলনের অঙ্গীকার, দ্বিতীয় টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৬-২০২৭) ও গেøাবাল টাইগার ফোরামের সিদ্ধান্তের আলোকে দেশে বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ এবং সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও এর সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়।