সুইস ব্যাংক বিত্তশালীদের এত পছন্দের কেন

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা টাকার পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সেই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইটজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে, এই অর্থের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে কয়েক বছরের যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে তাতে এই বৃদ্ধি এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ।
এই হিসাব অনুযায়ী, এক বছরেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ দুই হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সেই পটভ‚মিতে পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার উদ্দেশ্যে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও কিছু সুযোগ রাখা হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের আইন অনুযায়ী দেশটির ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। গ্রাহকের জমা করা অর্থের উৎস সম্পর্কেও সুইস কর্তৃপক্ষ জানতে চায় না।
কয়েক বছর ধরে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে কোন দেশের নাগরিকরা কত অর্থ জমা রাখছে তার একটি পরিসংখ্যান দিচ্ছে, কিন্তু গ্রাহকদের তথ্য তারা গোপন রাখছে। এই গোপনীয়তার নীতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের ধনী ব্যক্তিরা তাদের অর্থ সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা রাখেন।
এদিকে বাংলাদেশিদেরও জমা রাখা অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও বাংলাদেশে একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগের তিন বছর কমলেও গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা টাকার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ বেড়েছে; যা ১৯৯৬ সালের পর সর্বোচ্চ।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সেখানকার ব্যাংকে থাকা অর্থে বড় উল্লম্ফন হয়ে মোট ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঙ্ক ৯৬.২ টাকা দর ধরে)।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশিদের নামে সেখানে রাখা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে ৩০ কোটি ৮১ লাখ ফ্রাঙ্ক (৫৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ); টাকার হিসাবে যা প্রায় ২,৯৭০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে থাকা গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্রাঙ্ক।
কোভিড মহামারীর মধ্যে সেবার জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে কমেছিল ৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের নামে সেখানে জমা ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক। এর আগের বছর ২০১৮ সালেও সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা টাকা কমেছিল। ওই বছর গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঙ্ক।
সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি এমন এক সময় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করল, যার এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরাতে কম কর দিয়ে দায়মুক্তির প্রস্তাব করেন। এ নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। গত বৃহস্পতিবারও সংসদে এ নিয়ে কথা হয়েছে।
সর্বশেষ হিসাব মতে, ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা করা অর্থের পরিমাণ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এসএনবির ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের পর এত অর্থ কখনও জমা পড়েনি সেখানে। এর আগে ২০১৬ সালে রাখা ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্রাঙ্ক ছিল সর্বোচ্চ, আর ১৯৯৬ সালে ছিল মাত্র ৩ কোটি ৮৩ লাখ ফ্রাঙ্ক।
বিশ্বজুড়ে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না।
তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতিবছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে।
এবারও সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসএনবি ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ নামে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের ব্যাংকগুলোর রাখা আমানত এবং অন্যান্য দেশে রাখা তাদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ করে। এ তালিকায় রয়েছে দুই শতাধিক দেশের নাম। তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য হল, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা জমা রয়েছে, তার বেশিরভাগটাই অবৈধভাবে অর্জিত এবং বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
সারা পৃথিবীতে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না।
তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতিবছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে। তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না।
দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য হল, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা জমা রয়েছে, তার বেশিরভাগটাই অবৈধভাবে অর্জিত এবং বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রথমবার ১০ কোটি সুইস ফ্রাঙ্ক ছাড়িয়ে যায় ২০০৬ সালে, যেটি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর। নয় কোটি ৭২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে বেড়ে ওই বছর জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক। এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রথম বছর ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১১ সালে জমার পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ২৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৬ সালে তা ৬৬ কোটি ১৯ লাখে দাঁড়ায়।
পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালে তা কমে ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে নেমে এলেও ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের বছরে তা আবারও বেড়ে ৫১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে দাঁড়ায়।
২০২১ সালে বাংলাদেশের মত প্রতিবেশী ভারতীয়দের নামেও সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের পরিমাণ ব্যাপক বেড়ে ৩৮৩ কোটি ফ্রাঙ্ক হয়েছে, যা ১৪ বছরের মধ্য সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দু। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৫৫ কোটি ফ্রাঙ্ক।
গত বছর পাকিস্তানের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণও বেড়ে ৭১ কোটি ফ্রাঙ্ক হয়েছে, যা ২০২০ সালে ছিল ৬৪ কোটি ২২ লাখ ডলার। অপরদিকে অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার সুইস ব্যাংকে রাখার অর্থের পরিমাণ কমে ৫ কোটি ৬০ লাখ ফ্রাঙ্ক হয়েছে। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঙ্ক।
বিশ্বজুড়ে তালিকার দিকে নজর দিলে দেখা যাবে সুইস ব্যাংকগুলোতে যুক্তরাজ্যের জমা রাখা অর্থের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি ৩৭৯ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। তাদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ১৬৮ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক। সুইস ব্যাংকে রাখা ১০০ বিলিয়নের উপরে অর্থ রয়েছে শুধু এ দুই দেশের নাগরিকদের নামেই।
তালিকার শীর্ষ ১০ এ থাকা অন্য দেশগুলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জার্মানি, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, হংকং, লুক্সেমবার্গ, বাহামাস, নেদারল্যান্ডস ও কেম্যান।