সীমানা পেরোনো আফগান নারী সাইক্লিস্ট মাসোমাহ

15

যত বাঁধাই আসুক না কেন, লক্ষ্য যদি থাকে অটুট-অবিচল, তাহলে স্বপ্ন সত্যি হয়, ধরা দেয় সাফল্য- এই জীবন দর্শনকেই যেন আবার সত্যি প্রমাণ করলেন আফগানিস্তানের সাইক্লিস্ট মাসোমাহ আলি জাদা। টোকিও অলিম্পিকসে যিনি এসেছেন ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির রিফিউজি টিমের হয়ে। তার গল্পটাও আফগানিস্তানের রক্ষণশীল সমাজের বাকি সব নারীদের মতোই। যেখানে নারী-শিক্ষাকে খারাপ চোখে দেখা হয়, নারী স্বাধীনতা বলতে নেই কিছু। এমন প্রতিকূল পরিবেশে জন্ম নেওয়া মাসোমাহ ছুটেছেন স্বপ্নের পথে। শত বাঁধা পেরিয়ে, জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েও হাল ছাড়েননি। শক্ত মনোবলের জোরেই আজ তিনি টোকিও অলিম্পিকসে। হয়ে উঠেছেন অলিম্পিয়ান। পিছিয়ে থাকা নারীদের, বিশেষ করে আফগানদের অনুপ্রেরণার উপলক্ষ্যও।
আইওসি রিফিউজি দলের সদস্য হয়ে অলিম্পিকে অভিষেক হয়েছে মাসোমাহর। মেয়েদের ইনডিভিজ্যুয়াল টাইম ট্রায়ালে তিনি চমক জাগানো কিছুই করতে পারেননি, হয়েছেন ২৫ জনের মধ্যে ২৫তম। তবে এখানে ফলের বিশেষ কোনো তাৎপর্য নেই। জীবনে সব বাধা আর ভয়-ভীতিকে পায়ে ঠেলে যেভাবে স্বপ্নের পানে ছুটেছেন, উঠে এসেছেন এই পর্যায়ে, সেটাই তো বড় বিষয়। খবর বিডিনিউজের
সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুদ্ধের ময়দানে জীবনবাজি রাখে সৈনিক, কিন্তু যেখানে জীবনের পথচলার প্রতিটি মুহূর্তই যুদ্ধের সমতুল্য সেখানে খেলাধুলা হয়ে পড়ে গৌণ। তবে স্বপ্ন ছোঁয়ার তাড়নাই মাসোমাহকে লড়াই করতে শিখিয়েছে, যার জোরে আজ তিনি সেরাদের মঞ্চে। আর তাই অলিম্পিকের মঞ্চে তার জায়গা করে নেওয়াটাকেই দেখা হচ্ছে বিজয় হিসেবে। জন্ম হয়েছে শত প্রতিকূলতার বিপক্ষে সদর্পে এগিয়ে চলার গল্পের। যে গল্প প্রেরণা জোগাতে পারে বিশ্বব্যাপী ঘর হারানো লাখো-কোটি মানুষ ও নারীদের এগিয়ে চলায়। দেখাতে পারে যে তারাও তাদের স্বপ্নকে জয় করতে পারে।
আফগানিস্তানের এমন এক রক্ষণশীল সমাজে জন্ম মাসোমাহর, যেখানে মেয়েদের সাইকেল চালানোকে দেখা হতো বাঁকা চোখে। আর দেশটিতে তালেবান শাসন শুরুর পর তো সব স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনাশ হওয়ার জোগাড়। ইরানে নির্বাসিত হলো তার পরিবার। পরবর্তীতে রাজনৈতিক চিত্র বদলালে দেশে ফেরত আসে তারা। মাসোমাহর বোন ক্রীড়া শিক্ষক জহরা এবং আরও কয়েকজন নারী দুই চাকায় তাদের স্বপ্নকে অনুসরণ করতে শুরু করলেন। তাদের পিছু নিল রক্ষণশীলতার দুষ্টুচক্রও।
সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় তারা অংশ নেওয়া শুরু করলে সমাজের লোকজন তাদের হুমকি দিতে শুরু করে। এরপর মাসোমাহর পরিবার চলে যায় ফ্রান্সে। বদলে যায় জীবন ধারা। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার পর দুই বোন নির্ভয়ে অনুশীলন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চালিয়ে যেতে থাকেন পড়ালেখাও। নিজ দেশে যা ছিল স্বপ্নেরও অতীত!
কিছুদিন পরই আইওসি রিফিউজি অ্যাথলেটের স্কলারশিপ পান মাসোমাহ, যেটা ছিল তার অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার স্বপ্নের পথে বড় এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। “অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়ে আমি তাদেরকে বোঝাতে চাই, যারা মনে করে মেয়েদের সাইকেল চালানো ঠিক নয় অথবা হেডস্কার্ফ পড়ে একজন মুসলিম নারীর সাইক্লিস্ট হওয়াতে যারা অবাক হয়। তাদের আমি বলতে চাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, এটা স্বাভাবিক। আমি দেখাতে চাই যে মেয়েরা স্বাধীনভাবে যা চায় তাই করতে পারে।”
সাইক্লিংয়ের পাশাপাশি তিনি লিলের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন। দুই বোনকে নিয়ে ‘দা স্মল কুইন্স অব কাবুল’ নামে একটি ডকুমেন্টারি প্রচার হওয়ার পর থেকে ফ্রান্সে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তাদের সংগ্রামী জীবনের গল্প।