সীতাকুন্ডে প্রাকৃতিক ছড়া দখল করে মার্কেট!

30

সীতাকুন্ড পৌরসদরে সড়কের জায়গা ও প্রাকৃতিক ছড়া ভরাট করে চলছে মার্কেট নির্মাণ। তবে খবর পেয়ে নির্মাণাধীন মার্কেটের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল ইসলাম। গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে মার্কেট নির্মাণ কাজ বন্ধ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
সীতাকুন্ড পৌরসভা কার্যালয়ের প্রায় দুইশ মিটার উত্তরে হাসান গোমস্তা মসজিদ সংলগ্ন পয়েন্ট থেকে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই ছড়া। সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে নেমে আসা এই ছড়াটি মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে। পৌর সদরের বিভিন্ন এলাকাসহ পাহাড়ের বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির পানি সাগরে গিয়ে পড়ে এই ছড়া দিয়ে। ছড়াটির দুই পাশে রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গা। জানা গেছে, সওজ’র ওই জায়গাগুলো স্থানীয় ভূমিদস্যুরা সড়কের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ভাড়ায় লাগিয়েছেন। ছড়াটির দুই পাশে ৪০ ফুটের অধিক প্রস্থ থাকার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে দখলদার কর্তৃক ৩০ ফুটের অধিক দখলে চলে গেছে। সম্প্রতি ছড়ার উভয় পাশে লম্বায় প্রায় তিনশ মিটার জায়গা ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে একাধিক মার্কেট ও স্থাপনা। ছড়াটি দখল ও ভরাটের ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলে পৌরসভার ব্যাপক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়তে পারে লাখো পৌরবাসী।
দখলকারীদের দাবি তারা ছড়াটি জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়ে ও পৌরসভার প্ল্যান অনুমোদন করে মার্কেট নির্মাণ করছেন। তবে পৌরসভার মেয়র বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
ছড়া ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার বাসিন্দা মো.সালাউদ্দিন বলেন, এই ছড়াটি দিয়ে বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি সাগরে গিয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে দেখতে পেলাম কয়েকজন লোক ছড়াটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করছে, যেটা বর্ষা মৌসুমে পৌরবাসীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সংশ্লিষ্ট মহল ছড়া ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমি মনে করি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পৌর সদরের এই ছড়াটির দুই পাশেই ভরাট ও দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেট ও ভাড়া বাসা। আরএস সিট অনুযায়ী এই ছড়াটির প্রস্থ ৪০ ফুট। তবে বিএস খতিয়ানে ছড়াটির দুই পাশের জায়গা সড়ক ও জনপদ বিভাগের আর খতিয়ানে ছড়াটির রেকর্ড আছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নামে।
জায়গা দখলকারী ওসমান গণি খোকন বলেন, ৫’শ বছরের পুরনো এই ছড়াটি আরএস খতিয়ানে থাকলেও বিএস খতিয়ানে অস্তিত্ব নেই। কিন্তু বাস্তবে ছড়াটি পূর্বের অবস্থায় রয়েছে। ভরাট হতে হতে সংকুচিত হয়েছে এই ছড়াটি। বর্তমানে খতিয়ানে ছড়াটির অস্তিত্ব না থাকলেও ওই জায়গা জেলা পরিষদের নামে খতিয়ানভুক্ত রয়েছে। খতিয়ানের আলোকে তিনিসহ স্থানীয় বাসিন্দা ওমর ফারুক, ইসরাত, সিরাজ সওদাগর, শফিউল আলম, সোহরাব ও ছানাউল্লা পৃথক নামে এই ছড়াটির অংশ বিশেষ লিজ নিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে ভরাট করে মার্কেট করেছেন। খতিয়ান অনুযায়ী ছড়াটির কর্তৃত্ব চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের কাছে থাকায় আমরা জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়েছি।
সীতাকুন্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল ইসলাম বলেন, ছড়া ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করছিলো কয়েকজন ব্যক্তি। তারা লিজ নিয়ে ছড়ার মধ্যে মার্কেট করছে। আমি তা বন্ধ করে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমার দপ্তরে আসার জন্য বলেছি। খতিয়ানে ছড়া না থাকলেও সেটি লিজ বা প্ল্যান দেওয়া সমুচিত নয়। কারণ ওই ছাড়া দিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার পানি সাগরে গিয়ে পড়ে। এই ছড়া দিয়ে পানি চলাচলে বিঘœ ঘটলে বর্ষা মৌসুমে পৌরবাসী চরম জলাবদ্ধতার মধ্যে পড়বে। তাই এই ছড়া পানি চলাচলে উন্মুক্ত রাখা দরকার।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার ইমতিয়াজ ইমন বলেন, খতিয়ানে ছড়াটির অস্তিত্ব নেই। তাই লিজ দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে যদি ছড়া থাকে তদন্ত করে লিজ বাতিল করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আ ম ম দিলসাদ বলেন, ছড়াটি প্রায় কয়েকশ বছরের পুরনো। এটি ভরাট করার কোন সুযোগ নেই। যদি পূর্বে জেলা পরিষদ থেকে কেউ বাস্তব তথ্য গোপন করে লিজ নেয়, তা খুব দ্রুত আমরা বাতিল করে পূর্বের অবস্থানে নিয়ে আসবো।
সীতাকুন্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বলেন, জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়ে কয়েকজন লোক ছড়ার উপর চলাচলের জন্য সাত ফুটের একটি সেতু করার অনুমতি নিয়েছে। ছড়া ভরাট করে মার্কেট করার কোন অনুমতি আমি দেয়নি।
চট্টগ্রাম উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, সড়কের জায়গায় কোনো স্থাপনা করার জন্য লিজ দেওয়া হয়নি। সওজ’র জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।