সীতাকুন্ডে পাহাড়ি এলাকায় পুদিনার বাম্পার ফলন

75

 

সুগন্ধি জনপ্রিয় পুদিনা পাতা ঔষধি হিসেবে বহুল প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত। পুদিনা চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হলেও করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের কারণে পুদিনা পাতা বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় উপজেলার শতাধিক কৃষক। দেশে ধারাবাহিক লকডাউন চলতে থাকায় পুদিনা চাষীদের বিক্রি শুধু সীতাকুন্ডে সীমাবদ্ধ। যদি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসতো, তাহলে আরো বেশি লাভবান হতো পুদিনা চাষীরা। এই পুদিনা পাতায় অনেক উপকারিতা ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে। যা অনেকের অজানা। এর মধ্যে প্রচুর পরিমান অ্যান্টি, অক্সিড্যান্ট থাকে, যা ক্যান্সার,হৃদরোগসহ আরো ভংঙ্কর রোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে সাহায্যে করে। নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়া গেলে গলার ক্ষত প্রতিরোধ করে,দাঁত ও মাড়ির ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়া পুদিনার চা শরীরের নির্দিষ্ট অংশের উপর কাজ করতে পারে এবং শ^াসতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী পুদিনা। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে ইফতারিতে কয়েক টুকরো পুদিনার পাতা হলে ইফতারির স্বাদে আসে আলাদা স্বাদ। এ সকল গুনাবলি ও স্বাদের কথা মাথায় রেখে পবিত্র রমজান মাসের কথা চিন্তা করে উপজেলার ভাটিয়ারী, সলিমপুর, সোনাইছড়ি ও কুমিরায় ১৫ হেক্টর জমিতে ব্যাপক ভাবে পুদিনার চাষ করেছেন কৃষকরা। তবে আশানুরোপ বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চরম শঙ্কায় পড়েছেন তারা। তবুও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাধা অতিক্রম করে পুদিনার চাষ করেন তারা। তারই ধারাবাহীকতায় এবারও ভাটিয়ারী খাদিমপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রমজান মাসের কথা চিন্তা করে পাহাড়ি এলাকা জুড়ে দিনরাত পরিশ্রম করে সুগন্ধি জনপ্রিয় পুদিনার চাষ করেছেন পুদিনার সফল চাষী হিসেবে পরিচিত মো. ফরিদুল আলমের পুত্র কৃষক মো. শিবলু। তিনি জানান, আমি ও এই অঞ্চলের কৃষকরা মূলত রমজান মাসের কথা চিন্তা করে পুদিনার চাহিদাকে মাথায় রেখে প্রতিবছরের মত এই বছরও বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৯০ শতক জায়গায় পুদিনার চাষ করেছি। এতে শ্রমিক ও বিভিন্ন বাবদ আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। বাজার দর ভাল হলে আমি প্রায় ৩/৪ লাখ টাকার পুদিনা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। তবে বর্তমানে সারাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তাই লকডাউনের ফলে বাহির থেকে পাইকার না আসলে আমাদের চাষকৃত পুদিনা ক্ষেতেই নষ্ট হতে পারে। তারপরও সীতাকুন্ড উপজেলাজুড়ে আমরা পুদিনা বিক্রি করছি। আমার মত অনেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে রমজানে বিক্রির উদ্দেশ্যে পুদিনার চাষ করেছেন। কিন্তু সকল কৃষক এখন দুশ্চিন্তায় দিন অতিবাহিত করছেন। ঐ অঞ্চলে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ঝন্টু কুমার নাথ বলেন, এখানকার পাহাড়ি ভূমি এবং পাহাড়ের ঢালুতে গুণে ভরা ঔষধি উদ্ভিদ পুদিনা পাতা চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। এবারও অধিক লাভের আশায় শুধু ভাটিয়ারী খাদেমপাড়া এলাকায় অন্তত ৬ হেক্টর পাহাড়ের ঢালুতে বাণিজ্যিক ভাবে পুদিনার চাষ করেছেন ৪০/৫০ জন কৃষক। প্রতিবছর বিশেষ করে রমজান মাসকে সামনে রেখেই পুদিনা চাষ করে থাকেন কৃষকরা। এতে বার্ষিক লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে চলেছেন তারা। পুদিনা চাষীদের ফলন বৃদ্ধিতে পরামর্শ দিয়ে আসছি। কফ সর্দিজ¦র ও কুষ্ঠ রোগের জন্য পুদিনা পাতা উপকারী। এছাড়া পুদিনা পাতা সিদ্ধ করে বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে পায়ের গোদের উপকার হয়। সব রকম গুণই পুদিনা পাতায় রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুন রাসেল বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫ হেক্টর জায়গার উপর ১০৫ জন কৃষক ঔষধি উদ্ভিদ পুদিনা পাতার চাষ করেছেন। সারাবছর পুদিনার চাষ হলেও বিশেষ করে প্রতিটি রমজানেই সবচেয়ে বেশি চাষ হয়ে থাকে পুদিনার। পুদিনা পাতার গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। বহুল প্রাচীনকাল থেকেই পুদিনা পাতার ব্যবহার করে চলেছে মানুষ। বর্তমানে কৃষক পুদিনা পাতা চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হচ্ছে। প্রতিবছর সীতাকুন্ডের এ সকল অঞ্চল থেকে পুদিনা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বিক্রির উদ্দ্যোশে নেন পাইকাররা। কৃষকরা রমজানকে মাথায় রেখে পুদিনার চাষ করে থাকেন এবং বেচা-বিক্রি করেন। স্থানীয় ভাবে পুদিনার অনেক চাহিদা,তবু বাহিরের পাইকাররা আসতে পারলে কৃষকরা আরো বেশি দামে পুদিনা বিক্রি করে লাভবান হতে পারতো।