সীতাকুন্ডের জাহাঙ্গীরের দিন ফিরেছে শখের মালটা চাষে

6

জাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী, সীতাকুন্ড

দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দুবাই থেকে ২০০৯ সালে দেশে ফেরেন জাহাঙ্গীর। গাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি পৈতৃক জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ফসলের চারা রোপণ করে এগিয়ে যান। এক সময় নিজে খাওয়ার আশায় রোপণ শুরু করেন মাল্টা গাছ। অদম্য শক্তি, কর্মস্পৃহা, কর্মনিষ্ঠা একজন মানুষকে নিয়ে যেতে পারে সাফল্যের চরম শিখরে। তারই প্রমাণ রেখেছেন তিনি। ২০১৮ সালে ৬০ শতক জমিতে শখের বসে পতিত জমিতে মাল্টাগাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। তিন বছরের মাথায় সেই শখের বাগানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে মাল্টা। আর সেই বাগান থেকে তৃতীয়বারের মতো এবার তিনি মাল্টার ফলন তুলেন। মাল্টা বিক্রি করে প্রবাস জীবনের কষ্ট ভুলে ধীরে ধীরে নিজের দিন নিজেই ফিরাচ্ছেন সীতাকুন্ড কুমিরা মগপুকুর এলাকার যুবক প্রবাসি জাহাঙ্গীর। সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা যায়, তিনটি সারিতে মাল্টা গাছ লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় মাল্টা ধরেছে। মাল্টার ভারে নুইয়ে পড়া ডাল ঠেকাতে ডালগুলো বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বাঁধা হয়েছে। মাল্টার রং এখন সবুজ। তাছাড়া কিছু কিছু গাছের মাল্টা হালকা হলদে। মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হওয়া এবং বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ইত্যাদী বিষয়ে আলাপকালে জাহাঙ্গীর আলম বলেন,“দুবাই থেকে ২০০৯ সালে দেশে আসি। প্রথম দিকে গাড়ির ব্যবসা শুরু করলেও পরবর্তীতে পৈত্রিক জমিতে শখের বশে কৃষিকাজ শুরু করি। ২০১৮ সালের দিকে অন্য ফসলের পাশাপাশি খাওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে মাল্টা গাছের চারা লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয় এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল মুনছুর এর পরামর্শে তিনি ৬০ শতক জমির পুরোটাতে প্রতিটি ১২ ফুট দূরত্বে মাল্টা গাছ লাগাই । প্রতি সারিতে মোট ৩৫টি করে ১০৫টি মাল্টার চারা লাগিয়েছি। খরচ হয় সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা। গাছ লাগানোর পর থেকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। কাজের মানুষ থাকলেও নিজের কাজ নিজে করার মাঝে আমি আনন্দ পাই। মাল্টা গাছের ফাঁকে ফাঁকে শুষ্ক মৌসুমে লাউ-মিষ্টিকুমড়াসহ মিশ্র ফসল লাগাই। আর এসব ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে মাল্টা গাছের পরিচর্যার খরচ মিঠায়। নিজেই নিজের বাগানে কাজ করে তৃপ্তি পাই। সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে মাল্টা গাছে ফুল আসে এবং আট মাস পর ফলন খাওয়ার উপযোগী হয়। গত বছর পুরো বাগান থেকে প্রায় ৩০০ কেজি মাল্টা পেয়েছি। কিছু বিক্রি করলেও বেশির ভাগ মাল্টা নিজেরা ও আত্মীয় স্বজনকে খুশি হয়ে দিয়েছি। চলতি বছর এক হাজার কেজি মাল্টা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছি। তাছাড়া এ বছরের শেষের দিকে পাহাড়ের পাদদেশে আরও ৪০ শতক জমিতে মাল্টার চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। মাল্টা বিক্রিকৃত টাকা হাতে পেয়ে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। আশা করছি আগামী এই মাল্টা চাষে আমি অনেক উন্নতি করতে পারবো। মাল্টা চাষী জাহাঙ্গীরের স্কুল বন্ধু মো. আব্দুল গফুর বলেন, প্রবাস জীবন শেষে টাকার পেছনে না ঘুরে নিজেই কাজ শুরু করে পাহাড়ি জমিতে। উদ্দেশ্য একটাই বাগান করা। ফুল থেকে ফলে শুরু হল বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো। ধৈর্য্য এবং পরিশ্রম আজ তাকে সফলতায় নিয়ে এসেছে। এবার গ্রাহকদের অনেক চাহিদার পরও মাল্টা পৌঁছে দিতে পারেনি সে। আগামীতে আরও বেশী ফলন উৎপাদন করে সে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে বিক্রি করার আশায় কাজ শুরু করেছে। এভাবে দেশের প্রতিটি লোক নিজ উদ্যোগে অন্যর দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেই কিছু করে জীবনের পথকে সুন্দর করুন। সীতাকুন্ড উপ-সহকারি
কৃষি কর্মকর্তা বাঁশবাড়িয়া বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের লাগানো বারি-১ জাতের মাল্টা মিষ্টি হয়। আর সে কারণে এগুলোর চাহিদা বেশী।
সীতাকুন্ডে বারি-১ মাল্টা খুবই জনপ্রিয়। সীতাকুন্ডে ছোট-বড় অর্ধ শতাধিক মাল্টাবাগান আছে। যাঁরা মাল্টাবাগান করতে চান তাঁদের কলমি বড় চারা লাগানোর পরামর্শ প্রদান করছি। এভাবে জাহাঙ্গীর আলমের মত মাল্টা চাষ করে অনেকই ইতিমধ্যে লাভবান হয়েছেন।