সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটরের আত্মকথা

90

আচ্ছা, আপনি কি কখনও চিন্তা করেছেন আপনি যে ইমেইল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন সেটি কীভাবে আপনার কম্পিউটার পর্যন্ত আসে অথবা ফেসবুক-এর প্রতিটি স্ট্যাটাস কীভাবে আপডেট হয়? এ সকল সেবা অনেকগুলো কম্পিউটার সিস্টেমের মধ্য দিয়ে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আপনার কাছে আসে। আর এটি সম্ভব হচ্ছে কারণ এ সকল কম্পিউটার সিস্টেম ও নেটওয়ার্ককে কার্যকর রাখতে একদল সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটর রাতদিন কাজ করছেন।
আপনার অফিসের আইটি বিভাগ যিনি মনিটর করেন তিনিও একজন সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটর। একবার চিন্তা করুন তো আইটির লোক ছাড়া আপনার প্রতিদিনের অফিসিয়াল কাজ যেমন ইমেইল, ফাইল শেয়ার করা, ইন্টারনেটে কাজ করা, প্রিন্ট করা, সফটওয়্যার চালানো ইত্যাদি সকল কাজ আপনি কীভাবে করতেন? এসব কাজে একটু সমস্যা হলেই আপনি আইটির লোকের সাহায্য চান। একজন আইটি লোকের ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হয়। আপনি হয়ত একটি নির্দিষ্ট সময় অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেবেন কিন্তু একজন সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটরকে সবসময়ই মনিটর করতে হয় সিস্টেমের সেবাগুলো ঠিকমতো চলছে কি না। আর যদি কোনো কারণে সেবায় সমস্যা দেখা যায় তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। দিনরাত এক করে দ্রুত সেটি সমাধান করতে হয়। এমনও হয় যে ছুটি নিয়েও আবার ছুটি বাতিল করে কাজ সমাধা করতে হয়।
আমাদের অনেকেরই ধারণা অফিসে আইটি বিভাগে কর্মরতদের কোনো কাজ নেই। কোনায় বন্ধ একটি ঘরে সারাদিন বসে কী যেন করেন। কিন্তু সারাদিন যে তিনি কী ধরনের চাপ নিয়ে কাজ করেন সেটি যদি আপনি বুঝতেন তাহলে প্রতিদিন সকাল-বিকাল তাদের ধন্যবাদ দিতেন।
একজন সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটরের একটি ভুল কমান্ডে হারিয়ে যেতে পারে আপনার ফেসবুক প্রোফাইল, আপনার ডেস্কটপ, আপনার মেইল ইন-বক্স, আপনার ব্যাংক একাউন্ট তথ্য। একটু অসাবধান হলে আপনার অমূল্য তথ্য চলে যেতে পারে কোনো হ্যাকার বা তথ্য চোরের হাতে। এই ভয়ঙ্কর চাপ মাথায় নিয়ে তাদেরকে সবসময় কাজ করতে হয়। আইটি বিভাগের কাজের ধরনই হলো প্রথমে সেটআপ তারপর মনিটরিং। কোনো সিস্টেমকে যদি মনিটর করা না হয় তাহলে যেকোনো সময় সেটি ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনার অফিসের আইটি সাপোর্ট ঠিকমতো চলছে মানে আইটির লোক তার কাজটি ঠিকমতোই করছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেকই মনে করেন সেবাতো ঠিকমতো চলছে। আইটির লোক তো শুধু শুধু বসে আছে। না বুঝেই মন্তব্য করে বসলেন আইটির কাজ নাই কিন্তু সেবাটি কীভাবে চলছে আর পেছন থেকে কে সেটি ঠিক রাখছেন সেটি বুঝলেন না অথচ সেই আপনিই (মন্তব্য করা ব্যক্তি) আইটি বিভাগের কারো কাছে নিজের ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনটি নিয়ে আসবেন আর বলবেন, ‘ভাই অমুক সমস্যা একটু হেল্প করবেন?’ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কর্পোরেট অফিসে এরকম মানুষের সংখ্যাই বেশি।
ফেসবুকের অফিসের কার্যকলাপ সম্পর্কে খবর নিলে দেখবেন কিছু লোকের কাজই হচ্ছে পোস্ট বা লাইভ ভিডিও মনিটর করা। আপনি কমিনিউটি রুলসের বাইরে কিছু পোস্ট করলেই তা ডিলেট করে দেবে তারা। একাজটি করার জন্য ফেসবুক হাজার হাজার ডলার বেতন দিয়ে লোক নিয়োগ দিয়েছে। এ ব্যাপারটি এখানে এ জন্যই বললাম যে মনিটর করা আইটি বিভাগের লোকজনের কাজের একটা অংশ। তাই, আশা করি আমার এই লেখাটি পড়ে আইটির কাজ সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
পৃখিবীতে সকল পেশাই সম্মানীয় তবে আমার মতে আইটির জব বেশি সম্মানের কারণ একটি প্রতিষ্ঠানে আইটি সরাসরি ম্যানেজমেন্টের তত্তাবধানে কাজ করে। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের অনেকেই কিন্তু আইটির সাথে জড়িত। সারা পৃথিবীতে আইটি অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রয়োজনের তুলনায় রিসোর্স কম দেয়া হয়। এর মধ্যেই একজন সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটরকে সব ম্যানেজ করতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তি এমন একটি কাজ যেখানে গায়ের শক্তি দিয়ে বা লোক বাড়িয়ে প্রসেসর বা স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বাড়াবার সুযোগ নেই। নিজের দক্ষ্যতা দিয়েই ম্যানেজ করতে হয় সবকিছু। এরকম আরো অনেক কথা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের দেশে দক্ষ সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটরের প্রচুর অভাব আছে। আগামীতে বেশির ভাগ কাজই হবে কম্পিউটার নির্ভর। তাই এ পেশায় ক্যারিয়ারের সুযোগ আছে। নিজেকে এই পেশায় দক্ষ করতে চাইলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ভেন্ডর সার্টিফিকেশন যেমন মাইক্রোটিক, সিসকো, মাইক্রেসফট, লিনাক্স ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে ।