সিসি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেন ট্রেন কন্ট্রোলার!

52

রাহুল দাশ নয়ন

দেশের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকে। এর ব্যতিক্রম নয় রেলওয়ে বিভাগীয় কন্ট্রোল অফিসটিও। এ অফিস থেকেই সবধরনের চলমান ট্রেনের কন্ট্রোল পর্যবেক্ষণ করা হয়। নিরাপত্তার সুবিধায় এ অফিসের কন্ট্রোল কক্ষে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। যে ক্যামেরা দিয়ে সম্পূর্ণ কক্ষের চলমান দৃশ্য ধারণ করা হয়। কিন্তু সে ক্যামেরাটিই নিজ হাতে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন বিভাগীয় ট্রেন কন্ট্রোলার। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে নাইট ডিউটিতে থাকাকালীন সময়ে এমন কান্ড ঘটান ট্রেন কন্ট্রোলার। এ ঘটনায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি ট্রেন কন্ট্রোলারের কাছে সাত দিনের মধ্যে জবাব চেয়ে ডিটিও চিঠি দিলেও সেই চিঠির জবাব এখনও মিলেনি। সম্প্রতি ঘটনাটি জানাজানি হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়।
জানতে চাইলে গত ১৫ মার্চ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান পূর্বদেশকে বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠায় সাত দিনের মধ্যে জবাব চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছি। চিঠির জবাব এখনও পাইনি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শোকজ করা মানে সতর্ক করা। একটি শোকজে যদি তিনি সংশোধন হন তাহলে সবার জন্য ভালো। আর যদি সংশোধন না হন তাহলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিভাগীয় কন্ট্রোল অফিসটির ভেতরে ও বাইরে সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতাধীন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সিআরবি জোনাল কন্ট্রোল থেকে পাহাড়তলী কন্ট্রোল অফিসে বদলি হয়ে যান বিভাগীয় ট্রেন কন্ট্রোলার মো. শাহিদ হোসেন। যোগদানের পর তার প্রথম রাত্রীকালীন ডিউটি ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে রাত ২টা ৩ মিনিটে নিজ হাতে কন্ট্রোল রুমে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরাটি উর্ধ্বমুখী করে দেন তিনি। নাশকতামূলক কার্যক্রমের উদ্দেশ্যেই সিসিটিভি ক্যামেরা উর্ধ্বমুখী করে কন্ট্রোল কক্ষের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে দেয়া হয়নি বলে প্রতিয়মান হয়। ট্রেন কন্ট্রোলার হিসেবে কন্ট্রোল কক্ষের যাবতীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় নিজের দায়িত্ব থাকলেও উল্টো এমন ঘটনায় নড়েচড়ে বসে পরিবহন বিভাগ। এটিকে নাশকতামূলক কর্মকান্ডের প্রস্তুতি হিসেবে গণ্য করে ইএন্ডডি রুল ১৯৬১ এর ৩(ক) এবং (ঘ) বিধিতে অভিযুক্ত করা হয় মো. শাহিদ হোসেনকে। পরে তার বিরুদ্ধে রেলওয়ে কর্মচারী বিধিমালা অনুসারে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ ও দন্ড আরোপ করা হবে না তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
পাহাড়তলীর বিভাগীয় ট্রেন কন্ট্রোলার মো. শাহীদ হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি কোনো চিঠি পাইনি। কেউ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তুলেছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে চাকরি করছি। হয়তো কেউ আমার ডিটিও স্যারকে ভুল বুঝিয়েছেন। অনেক পরিশ্রম করে চাকরি করছি। কন্ট্রোলে চাকরি করে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।’
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী জানান, অনৈতিকভাবে পদোন্নতি নিয়েছেন শাহীদ হোসেন ওরফে খোকন। এর আগেও বাসা বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ছিল। একাধিকবার তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিও গঠন হয়েছিল। সবকিছুতে কৌশলে পার পেয়ে যান এই কর্মচারী। পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তার আস্থাভাজন হওয়ায় এবং শ্রমিক লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় রেলঅঙ্গনে নিয়মিত দাপট দেখিয়ে চলেন খোকন। যে কারণে পরিবহন বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে কথা বলতেও ভয় পান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চরের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘কন্ট্রোল কক্ষে সিসিটিভি ঘুরিয়ে দেয়ার বিষয়টি আমি জানি না। হয়তো দুষ্টামি করে ডিউটি ফাঁকি দিতে এটি করেছে। কেন এমন করা হয়েছে তার খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’