সিভিএফ শীর্ষ সম্মেলন ২০২১ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ আশাব্যঞ্জক

14

বিশ্বের জলবায়ু সংকট নিরসন কল্পে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহŸানে গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া দু’দিনের শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিন বক্তব্য দেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শীর্ষ সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমানো, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থায়নসহ চারটি পরামর্শ বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের যেসব দেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান বাংলাদেশ। সভাপতির ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল নিশ্চিতের পরামর্শ দেন। উক্ত শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতির দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য বিশ্ব জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে বাংলাদেশ যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিতে রয়েছে, সেহেতু জলবায়ু স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এবং ঝুঁকি মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক। তবে দেশে যে সকল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হতে চলেছে সে গুলোর ব্যাপারে দেশের নীতি নির্ধারকদের সচেতনতা খুবই জরুরি। দেশে কয়লাভিত্তিক যে সকল বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল তার শুরুতেই বিভিন্ন মহল থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধে প্রতিবাদ হতে দেখা গেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাঁশখালী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে। দেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস. আলম এবং চীনের যৌথ উদ্যোগে বাঁশখালী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ যখন সমাপ্তির দিকে তখনই শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে বললেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প কমাবে সরকার। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দেশ বিদেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যয় কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্য দুঃখজনক। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কার্বন নিঃসরণের বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে ইতোপূর্বে জানা ছিল না এমন নয়। জানা থাকার পরও প্রকল্প সমূহ হাতে নেয়া উচিৎ হয়নি এ কথা বলা বালুতার পর্যায়ে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প কমানোর পদ্ধতি কি হবে তা বিশেষজ্ঞদের বুঝে আসছে না। একটি প্রশ্ন বার বার উঁকি দেয় যে, প্রকল্পগুলোর ব্যয়ে যে অপচয় হলো তার দায়ভার কে নেবে। সরকারি অনুমোদন নিয়ে যে প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেসব প্রকল্প বন্ধ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা হয়তো রাজি হবে না। যার ফলে দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কারণে দেশের জলবায়ু ও পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কেননা এসব প্রকল্প হতে প্রচুর কার্বন নিঃসরিত হবে। এতে যে ক্ষতি হবে তা কমিয়ে আনার কোন বিকল্প ব্যবস্থা আছে কি না আমাদের জানা নেই। সরকার ও দেশের নীতি নির্ধারকসহ সংশ্লিষ্টদের এ জাতীয় বিষয়ে আগেভাগে সুফলের সাথে কুফল চিন্তা করা খুবই জরুরি। গরীব দেশে উন্নয়ন করতে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় জাতির জন্য শুভ নয়। বিষয়টি সরকার ও সরকারি নীতিনির্ধারকদের আগেভাগে-অনুধাবন করা প্রয়োজন। দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে সবসময়। বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় আমাদের দেশের পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক যে কোন সিদ্ধান্ত বিজ্ঞতার সাথে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু মোকাবেলায় আশাবাদের কথা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে শুনিয়েছেন। নিজ দেশের বিষয়ে আরো পরিবেশ উপযোগী এবং দেশের কল্যাণে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সুচারু এবং বিজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করবেন এমন প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞদের।