সিডিএ এলাকায় বাধ্যতামূলক হচ্ছে এসটিপি

33

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর কোনো ভবনে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নেই। কিছু ভবনে সেপটিক ট্যাংক থাকলেও সেটাও আবার নালা বা খালের সাথে পাইপলাইন করা হয়েছে। ফলে পয়োঃবর্জ্য চলে যাচ্ছে নালা-খাল হয়ে সাগরে। পরিবেশ হচ্ছে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম ওয়াসা স্যুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ওয়াসার প্রকল্পটি চলমান থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আওতাধীন এলাকায় বাধ্যতামূলকভাবে এসটিপি স্থাপনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভবনে কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় দেশের সকল নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও তাদের আওতাধীন এলাকায় বাধ্যতামূলকভাবে এসটিপি স্থাপনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। কমিটির সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ্,মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন এবং ফরিদা খানম সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় ২১তম বৈঠকের কার্যবিবরণী সংশোধিত আকারে অনুমোদন ও নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া ২১তম বৈঠকের সিদ্ধান্তের অগ্রগতি ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় কক্সবাজার সমুদ্র তীর এলাকায় অবস্থিত ঝুঁপড়ী দোকান উচ্ছেদ, সাগরের পানির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করণার্থে কক্সবাজারে স্থাপিত প্রতিটি হ্যাঁচারী/হোটেল/প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি) স্থাপনে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে পত্র প্রেরণ করার পরামর্শ দেয়া হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তর, রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর ও হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চলমান প্রকল্পসমূহের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আবাসিক পরিদপ্তরের সার্বিক কর্মকান্ড নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল নির্মাণে এসটিপি (সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) স্থাপন বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। একইসঙ্গে সাথে এসটিপির উপর কর কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে বলেছে কমিটি। সে সভায় চট্টগ্রাম নগরীতে মেট্রোরেল প্রকল্প করার বিনিময়ে সাগর উপকূলে ৬০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় চীন ও বাংলাদেশের অংশীদারিত্বে যে স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার প্রস্তাব চীন দিয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ’র নির্বাহী প্রকোশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, এসটিপি হচ্ছে প্রত্যেকটি বিল্ডিংয়ে ছোট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। যেটার মাধ্যমে পয়োঃবর্জ্যগুলো শোধন হয়ে পানি আকারে বের হবে। মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত পেলে আমরা এটি বাস্তবায়নে বিল্ডিংয়ের প্ল্যান পাসের সময় সুপারিশ করবো। তবে এটি আইন না করলে বাস্তবায়ন কঠিন হবে। আইন হলে বাস্তবায়ন অনেক সহজ হয়ে যায়।
সিডিএ স্যুয়ারেজ নিয়ে এতোদিন কোনো পদক্ষেপ না নিলেও চট্টগ্রাম ওয়াসা অনেক কাজ করেছে। ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার যাত্রা শুরু হলেও দীর্ঘ সময়ে স্যুয়ারেজ নিয়ে কোনো কাজ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালে শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজে হাত দেয় ওয়াসা। নগরীতে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৪০ কোটি লিটার পয়োঃবর্জ্য উৎপন্ন হয়। নালা-খাল গড়িয়ে এসব বর্জ্য যায় কর্ণফুলি ও হালদা নদীতে। জোয়ার-ভাটার টানে এর শেষ ঠিকানা হয় বঙ্গোপসাগর। ওয়াসার স্যুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, ২০৩০ সালে নগরীতে দৈনিক প্রায় ৫১৫ মিলিয়ন লিটার পয়োঃবর্জ্য উৎপন্ন হবে। আর ৭১৫ ঘনমিটার ফিক্যাল স্লাজ (মানব বর্জ্য) জমা হবে। এজন্য ছয়টি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং ২টি ফিক্যাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে। নগরী ও আশপাশের ৫৯১ বর্গকিলোমিটার এলাকা ঘিরে মাটির গভীরে স্থাপন করা হবে ৬১৬ কিলোমিটার স্যুয়ারেজ পাইপ নেটওয়ার্ক। শহরের সব বসতবাড়ির সঙ্গে ৪ ইঞ্চি পাইপ স্থাপন করে পরে তা স্যুয়ারেজ ট্রাঙ্ক লাইনের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পৌঁছবে বর্জ্য। আর শহরের প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প হিসাবে হালিশহর অংশের কাজ শুরু করেছে ওয়াসা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, স্যুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে পুরো শহরকে ৬টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি ক্যাচমেন্ট এলাকার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এখন কোনো ভবনে স্যুয়ারেজ প্ল্যান্ট নেই। পয়োঃবর্জ্য সেপটিক ট্যাংক হয়ে নালা-খালে যাচ্ছে। স্যুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত হবে। প্রতিটি বাসা থেকে পয়োঃবর্জ্য সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে চলে যাবে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে।
এসটিপি হচ্ছে এমন এক ধরণের বর্জ্যপানি শোধন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে পয়োঃবর্জ্য থেকে দূষক পদার্থ দূর করে। এটি এমন নির্গম পানিপ্রবাহ উৎপাদন করে যেটি চারপাশের পরিবেশে নিরাপদে নির্গমনযোগ্য। এ ব্যবস্থায় বাসাবাড়ি ও ভবনের বর্জ্য পরিশোধনের জন্য একটি প্রক্রিয়া করা হয়। সেখানে বাসা-বাড়ির পয়োঃবর্জ্যগুলো এক জায়গায় (ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে) এসে জমা হবে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে বর্জ্যগুলো পরিশোধনের মাধ্যমে দূর্ষিত পদার্থ দূর করে দিবে। বাকি অংশ পানি আকারে নালা বা খালের মধ্যে চলে যাবে। এ ব্যবস্থা অধিকতর পরিবেশ বান্ধব হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।