সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রচারণায় হঠাৎ ছন্দপতন

160

চট্টগ্রামকে করোনা ঝুঁকিতে থাকা এলাকা হিসেবে ভাবা হচ্ছে। বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর থাকায় চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের বাকি ১১ দিন। গত ৯ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীরা জোরেশোরে প্রচারণায় নামেন। সূচি ধরেই মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভোটভিক্ষায় ব্যস্ত ছিলেন প্রার্থীরা। গতকাল থেকে হঠাৎ ভোটের প্রচারণায় ছন্দপতন ঘটেছে প্রার্থীদের। করোনা ইস্যুতে ভোট পেছানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের পরপরই প্রার্থীদের মধ্যে বেড়ে যায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। যার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনী মাঠে। প্রচারণার চেয়ে নগরের অলিগলিতে নির্বাচন স্থগিত হওয়া না হওয়ার বিষয়টিই বেশি আলোচিত।
চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ভোট পেছানো নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্বাচন কমিশন সবকিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিবে। আমরা নিয়মনীতির মধ্যে সব প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছি। এরমধ্যে নির্বাচন কমিশন যেভাবেই সিদ্ধান্ত দিবে সেভাবেই হবে। আপাতত নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থী জানান, ‘ভোটারদের দুয়ারে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ভোট হচ্ছে কিনা তা নিয়ে কৌতুহল বেশি ভোটারদের। প্রার্থীরা প্রচারণায় গেলেও ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে কম। সবাই জীবন নিয়ে শঙ্কিত। এবারের ভোটের আবহে যেন পানি ঢেলেছে করোনা ভাইরাস। সিইসির ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের পর আমরাও অনিশ্চয়তায় পড়েছি। যে কারণে প্রচারণা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছি। ভোট না হলে প্রচারণা চালিয়ে লাভ নেই। নগরজুড়ে আপাতত ভোটের আবহে ভাটা পড়েছে। ’ জানা যায়, আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ছাড়া বেশিরভাগ প্রার্থীই নির্বাচন পেছানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। গত ১৪ মার্চ মেয়র প্রার্থীদের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার মতবিনিময়কালে বেশিরভাগ প্রার্থীই নির্বাচন পেছানোর দাবি জানান। সেদিন সিইসি বলেছিলেন, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। করোনা মহামারি আকারে ছড়ালে কিংবা জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা হলে তখন ভেবে দেখার কথাও বলেন তিনি। অবশ্য সেদিনের সভায় এমন বক্তব্য দিলেও নিজেই করোনা আতঙ্কের কারণে প্রার্থীদের সাথে হাত মেলাননি সিইসি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মো. জান্নাতুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই মুহূর্তে ভোটাররা প্রার্থীদের সাথে হাত মেলাতে চাইবেন না। আর হাত মেলাতে না পারলে কোনো ভোটার প্রার্থীদের ভোট দিবেন না। আবার কোনো প্রার্থী যদি ভোটারের দিকে হাত বাড়িয়ে না দেন তাহলে সেই ভোটার মনে করবেন প্রার্থী তার প্রতি বিরূপ আচরণ করেছেন। করোনা নিয়ে উভয় সংকটে ভোটার ও প্রার্থীরা। ভোট পিছিয়ে দিলেই সবার জন্য মঙ্গল। সিইসি তো নিজেই করোনা আতঙ্কে আমাদের সাথে হ্যান্ডশেক করেননি।’
এদিকে গতকাল রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে কতখানি বিস্তার করবে, তা বিশ্লেষণ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন স্থগিত করা হবে। অ্যাফেক্ট বিবেচনায় দু’একদিন পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, সিইসি স্যারের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে আজকালের মধ্যেই নির্বাচন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। ভোট পেছানোর সম্ভাবনাই বেশি মনে হচ্ছে।
তবে চসিক নির্বাচন না পেছানোর পক্ষেই আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থী। নিয়মিত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে কোলাকুলি-হ্যান্ডশেক এড়িয়ে অনলাইন প্রচারণায় জোর দিয়েছেন বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন।
অনলাইনে প্রচারণা চালাতে ওয়েবসাইট উদ্বোধনকালে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় কোলাকুলি-হ্যান্ডশেক এড়িয়ে অনলাইনে প্রচারণা বাড়াতেই এই ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। আমি আগেও বলেছি, ২৬ মার্চ থেকে টানা ছুটির কারণে কেউ বাড়িঘরে বা বেড়াতে চলে গেলে তারা আর ভোট দিতে আসতে উৎসাহী হবে না। সেজন্য ২৯ মার্চেও পরিবর্তে ৩১ মার্চ ভোটগ্রহণের জন্য বলেছিলাম। তার মানে করোনা ভাইরাসের কারণে নির্বাচন পেছাতে হবে এমনটা না।’
সরেজমিনে দেখা যায়, অন্যান্য সময়ের তুলনায় গত দুইদিন প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন কম। গতকাল প্রচারণায় ছন্দপতন চোখে পড়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে বিভিন্ন অলিগলিতে মাইকের আওয়াজ ও প্রচারণায় শোরগোল লেগে থাকলেও এখন ওয়ার্ডগুলোতে নীরবতা বাড়ছে। পাড়া-মহল্লায় পছন্দের প্রার্থীদের ঘিরে ভোটকেন্দ্রিক আলোচনার চেয়ে ভোট হওয়া না হওয়া নিয়ে জোরশে আলোচনা চলছে। প্রার্থীর চেয়ে সমর্থকদেরকেই প্রচারণায় বেশি দেখা গেছে। নতুন করে কোথাও পোস্টার-ব্যানার লাগানো হয়নি। নির্বাচন পেছানোর শঙ্কায় সবধরনের হিসেব গুটিয়ে ইসির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে প্রার্থী ও ভোটাররা।
উত্তর হালিশহর এলাকার ভোটার শুভাশীষ বলেন, ‘ভোটের চেয়ে জীবন বাঁচানো নিয়ে চিন্তিত বেশি ভোটাররা। প্রার্থীরা সেটা বুঝেই প্রচারণায় কিছুা কমিয়ে দিয়েছেন। এখন নির্বাচন হলেও তেমন একটা আগ্রহ থাকবে না ভোটারদের। ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও কম থাকবে।’
প্রসঙ্গত, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাতজন মেয়র প্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রার্থী মিলিয়ে ২২৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার ১৯ লক্ষ ৫১ হাজার ৫২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার নয় লক্ষ ৯৮ হাজার ৭২৩ জন ও নারী ভোটার নয় লক্ষ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েচ্ছে ৭৩৫টি। চার হাজার ৮৮৬টি কক্ষে ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করবেন ৭৩৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, চার হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও নয় হাজার ৭৭২ পোলিং কর্মকর্তা।