সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন প্রসঙ্গে

44

আবদুল হাই

সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ গত ০১/০২/২০২০ শনিবার ঢাকার উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যয় লক্ষ করা গেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনের বিকল্প আর কিছু নেই। নির্বাচন হচ্ছে গণরায়ের ইচ্ছার প্রতিফলন। সংখ্যাগরিষ্ঠব্যক্তি বা দল গদিসীন হয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন এবং রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবেন এটাই যেন বাস্তবতা। গত ১ ফেব্রুয়ারি দিনটা ছিলো ঢাকার উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জন্য দুটো নগর পিতা নির্বাচনের দিন। উভয় ক্ষেত্রে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোট কেন্দ্র, তৎমধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। আর ৮৭১টি সাধারণ কেন্দ্র। নিরাপত্তাজনিত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ৬জন অস্ত্রসহ পুলিশ ২জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভুত আনসার এবং ১০জন লাঠিসহ অঙ্গীভুত আনসার মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত ছিলো ৪২৬৮২ জন আনসার এবং পুলিশ সদস্য। ৭৫ প্লাটুন বিজিবি ২ হাজার ২৫০ জন জোয়ান নিয়োজিত ছিলো। এ নির্বাচনে সর্বসাকুল্যে ৫০ হাজারের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরাট বহর দায়িত্ব ছিলো। আচরণবিধি পালন ও অপরাধ দমনে ১২৯ জন নির্বাহী হাকিম ৬৪জন বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোটারসংখ্যা ৩০লক্ষ ১০ হাজার ২৭৩জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ২৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৫৪ জন। ঢাকা উত্তর ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮টি দক্ষিণে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০টি।
নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও কড়া নিরাপত্তা নজরদারির ভিতর দিকে নির্বাচন সংগঠিত করা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মোটামুটি ভীতিমুক্ত একটা পরিবেশ সৃজন করা।
২রা ফেব্রæয়ারি পত্রিকার পাতায় দেখাযায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আওয়ামীলীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ভোট পেয়েছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫টি বিএনিপ প্রার্থী ইশরাক সাহেব ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ২৭টি অর্থাৎ ফজলে নুর তাপস, ইশরাক সাহেবের চেয়ে ২ লাখ ৫ হাজার ৫৬৮টি ভোট বেশী পেয়ে জয়লাভ করে নির্বাচিত হন।
দক্ষিণে সর্বমোট ভোটারের সংখ্যা ২৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৫৪জন আওয়ামী লীগের তাপস সাহেব ৪ লাখ ২৪৫৯৫। বিএনপির ইশরাক সাহেব ২ লাখ ১৯০২৭ মোট ৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬২২ জন অন্যান্যরাপান ৫১ হাজার ৩৮১জন। অর্থাৎ ভোটদানে বিরত ছিল ১৭ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৫১জন ।
ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের আতিক সাহেব ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৮৫ পক্ষান্তরে তাঁর নিকটতম প্রতিদ›দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩৬১ অর্থাৎ ১ লাখ ০০ হাজার ৬২৪ পেয়ে আতিক সাহেব জয়ী হন।
উত্তরে সর্বসাকুল্যে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন , আতিক সাহেব পেয়েছেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৮৫ , তাবিথ সাহেব পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬১ ভোট দানে বিরত ছিলেন ২৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৯২৭জন। ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে ২৯ শতাংশ এবং উত্তরে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতো কম ভোট সবাইকে হতবিহবল করেছে। ভোট গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গণরায়। দৃশ্যত গণরায়ে অংশ গ্রহণে এমন ধস ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। দুই সিটি এলাকায় গড়পড়তা ২৭.১৫%। কেউ কোন মন্তব্য করার আগখানেই খোদ নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ আলমগীর সাহেব এ ধসের কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা করার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তাঁর ক্ষুদ্র একটি মন্তব্য প্রনিধানযোগ্য ভোট পড়ার এ হারে তিনি অসন্তুষ্ট না হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। কথায় বেশ মার প্যাঁচ লক্ষনীয়। এতো বড়ো একটা নির্বাচন স্বস্তিদায়ক বিষয় হচ্ছে কোথা ও কোন কেন্দ্রদখল বা হাঙ্গামা হয়নি। প্রাণঘাতি কিছুই হয়নি। এতোবড় কর্মযজ্ঞ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিসমাপ্তি একটা নতুন রেকর্ড বললে অত্যুক্তি হবেনা।
তথ্যমন্ত্রী মহোদয় তাঁর স্বীয় তথ্য সমৃদ্ধ বক্তব্যে উল্লেখ করেন ভোটার উপস্থিতি হতাশাব্যাঞ্জক হওয়ার কারণ সমূহের মধ্যে –
১ম : টাকা তিনদিন ছুটিতে অনেকে বাড়ী চলে গেছে।
২য়ত : শুরু থেকে প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতিবাচক প্রচারণা করেছে।
৩য়ত : নির্বাচনকে বিএনপি জয়ের জন্য নয় আন্দোলনের ইস্যু হিসেবে নিয়েছে। যার কারণে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমে গেছে।
৪র্থত : যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সে দেশে মোট জন সংখ্যার ৬০% যোগ্য ভোটার হলেও সেই ৬০% এর মধ্যে ৪০-৫০ % লোক ভোট দিতে পারে। তাদের তুলনায় গত ০১.০২.২০২০ এর নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক ভালো।
এক্ষেত্রে মন্তব্য নিস্প্রয়োজন মনে করি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেব সত্যানুসন্ধানী নেতা। নির্বাচনোত্তরে সাংবাদিকদের কতিপয় প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত ছন্দবদ্ধ ভাষায় রুচিশীল মাধুর্য্যপূর্ণ ভাষায় ঠাÐা মাথায় উত্তর দিতে সচেষ্ট হন। সত্য ব্যক্ততায় তার কোন কার্পণ্যতা পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে মিটিং হবে। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং এ নির্বাচন নিয়ে বীক্ষণ-পরিবীক্ষণ, আমাদের অবজারবেশন পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করবো। তাঁর ভাষায় প্রাজ্ঞলতা রীতিমত আবাক করার মত। বীক্ষণ শব্দের অর্থ আবিস্কারে ভারতীয় বাংলা অভিধানের আশ্রয় গ্রহণ করলাম। এর অর্থ হচ্ছে ভালোভাবে নিরক্ষণ বা অডিটিং করা। তাঁর মহৎগুণ হচ্ছে তিনি কিছু ব্যক্ত করার সময় কথার মার প্যাঁচের তোয়াক্কা না করে সত্য প্রকাশে পশ্চাৎপদ হননা। তাই তিনি সত্য প্রকাশ করার এক পর্যায়ে নির্দ্বিধায় সংকোচহীন চিত্তে বলেই ফেললেন ‘ঢাকা’ উত্তর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আমাদের ভোটের যে পাসেন্টেজ সে পাসেন্টেজ অনুযায়ী যে ভোট পড়ার কথা ছিলো সেটা এতো হয়নি। এ বিষয়টার ব্যাপারে তিনি সর্বপ্রথম সাংগঠনিক দুর্বলতহাকে দুষেছেন। যা শতভাগ সত্য বললে অত্যুক্তি হবেনা। নেতৃত্বে কোন উঁচু পদবীর নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদেরকে তেমন একটা পাত্তাই দেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থা নিতান্ত খারাপ। চেইন অব কামান্ডের ঘাটতি। কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বে পদ রুদ্ধ। ত্যাগী নেতারা দারুণ অবহেলিত, যারা নেতৃত্বে আছেন তাদের সাংগঠনিক যোগ্যতার ঘাটতি যথেষ্ট। সাধারণ কর্মীকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের সুখ দুঃখে একটু দেখবাল একটু খোঁজ খবর নিতে হবে। ওয়ার্কিং কমিটি ঘন ঘন সভা করতে হবে। এতে করে নেতাকর্মীদের মানসিক শক্তিবল গুণিতক হারে বৃদ্ধি পাবে। ভোটাধিকার প্রয়োগে অনীহা এবং ভোটের ধস পড়াবার ২য় হেতু হিসেবে ২-৩ দিনের টাকা বন্ধ এবং গ্রামের বাড়ি যাবার প্রবণতা ও পরিবহণ সংকটকে দায়ী করেছেন। বিষয় দুটো আংশিক গ্রহণযোগ্য হলেও পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয় অর্থাৎ গড়পড়তা মোট ভোটারের ২৭% ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি ৭৩% ভোটার গড়হাজির ছিলো। এই ৭৩%কে নিয়ো বীক্ষণ, পরিবীক্ষণ, অবজারভেশন, পর্যবেক্ষণ করা অন্যতম ফরজ প্রকৃতির ব্রতি। নির্বাচন কমিশনার সমস্ত আয়োজন পরিসমাপ্তি করে ভোটারদেরকে সার্বিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভয়ভীতিহীন নির্বাচন করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলে ও ৭৩% ভোটার ভোটদানে বিরত ছিলো নিশ্চয় সাধারণ সম্পাদক মহোদয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথামতো সলাপরামর্শ করেছেন। আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তফশীল ঘোষিত হয়েছে। বন্দরনগরীতে ও সবক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ২৭ ফেব্রæয়ারি বাছাই ১ মার্চ আপিল ২ থেকে ৪ মার্চ প্রত্যাহারের ৮ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ ৯ মার্চ ভোট গ্রহণ ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম সাহেব। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বহদ্দার পরিবারের প্রাণ পুরুষ। তিনি সুস্থ ধারার একজন আদর্শিক পুরুষ। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তিনিই এবার জননেত্রীর পছন্দ আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তি। সততা তাঁর মহৎগুণ, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে তিনি প্রশংসিত ব্যক্তি। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া মানেই দুর্বল স্বীকৃতি। ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তাঁকে জয়যুক্ত করা মানে একজন সৎ, যোগ্য মুক্তিযুদ্ধাকে স্বীকৃতি প্রদান করা। ভোট পবিত্র আমানত। যারা সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে তারা যেন স্বীয় পবিত্র দায়িত্বটা পালন করেছেন একথা শতভাগ সত্য। ভোটারগণ যাতে নির্ভয়ে ভোট প্রায়োগ করতে পারেন নির্বাচনে সে ব্যবস্থাই করবেন জনগণ এটাই প্রত্যাশা করে। গণরায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় উত্তম পথ। সরকারে ব্যর্থতার চাইতে সাফল্যের পাল্লাভারী সে ক্ষেত্রে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এটাই আশা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার নিরলস কম তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই বললে চলে। পানি সংকটও নেই। পয়ঃনিষ্কাশন, জলসরবরাহ ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঘনঘন খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তাঘাটে দৈন্যদশা পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ধূলাবালিজনিত কারণে যা জন দুর্ভোগের কারণ তা নিরসনে তড়িৎ ব্যবস্থা আবশ্যক। নতুন নির্বাচিতদের কাছে এমন প্রত্যাশা।
আশাকরা যায় আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটারগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রয়োগ করবেন। জনমত এবং গণরায় সর্বোচ্চ রায়। সে রায়কে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। একথা অবশ্যই স্বীকার করতেই হবে জনগণ আগের চাইতে অনেকবেশী সচেতন। এবারে নৌকার নতুন মাঝি নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী ১৯জনের মধ্যে তাঁর নাম অগ্রে উঠে আসে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সাবেক মেয়র মহোদয় বলেন, মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম সাহেবের বিজয়ের জন্য সামর্থ্যরে শতভাগ উজাড় করে খাটবেন। প্রধানমন্ত্রীকে সিটি মেয়র পদটি উপহার দেওয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন। তাঁর ভাষায় ৪০ বছরে সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে যত কাজ হয়নি তারচেয়ে অনেক বেশি কাজ হয়েছে আমার আমলে, কাজের ক্ষেত্রে আমি শতভাগ সফল, তার কর্মযজ্ঞ দৃশ্যমান। এবার তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে রেজাউল করিম সাহেবকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : কলামস্টি আবদুল হাই

সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ গত ০১/০২/২০২০ শনিবার ঢাকার উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যয় লক্ষ করা গেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনের বিকল্প আর কিছু নেই। নির্বাচন হচ্ছে গণরায়ের ইচ্ছার প্রতিফলন। সংখ্যাগরিষ্ঠব্যক্তি বা দল গদিসীন হয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন এবং রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবেন এটাই যেন বাস্তবতা। গত ১ ফেব্রæয়ারি দিনটা ছিলো ঢাকার উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জন্য দুটো নগর পিতা নির্বাচনের দিন। উভয় ক্ষেত্রে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোট কেন্দ্র, তৎমধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। আর ৮৭১টি সাধারণ কেন্দ্র। নিরাপত্তাজনিত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ৬জন অস্ত্রসহ পুলিশ ২জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভুত আনসার এবং ১০জন লাঠিসহ অঙ্গীভুত আনসার মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত ছিলো ৪২৬৮২ জন আনসার এবং পুলিশ সদস্য। ৭৫ প্লাটুন বিজিবি ২ হাজার ২৫০ জন জোয়ান নিয়োজিত ছিলো। এ নির্বাচনে সর্বসাকুল্যে ৫০ হাজারের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরাট বহর দায়িত্ব ছিলো। আচরণবিধি পালন ও অপরাধ দমনে ১২৯ জন নির্বাহী হাকিম ৬৪জন বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোটারসংখ্যা ৩০লক্ষ ১০ হাজার ২৭৩জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ২৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৫৪ জন। ঢাকা উত্তর ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮টি দক্ষিণে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০টি।
নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও কড়া নিরাপত্তা নজরদারির ভিতর দিকে নির্বাচন সংগঠিত করা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মোটামুটি ভীতিমুক্ত একটা পরিবেশ সৃজন করা।
২রা ফেব্রæয়ারি পত্রিকার পাতায় দেখাযায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আওয়ামীলীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ভোট পেয়েছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫টি বিএনিপ প্রার্থী ইশরাক সাহেব ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ২৭টি অর্থাৎ ফজলে নুর তাপস, ইশরাক সাহেবের চেয়ে ২ লাখ ৫ হাজার ৫৬৮টি ভোট বেশী পেয়ে জয়লাভ করে নির্বাচিত হন।
দক্ষিণে সর্বমোট ভোটারের সংখ্যা ২৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৫৪জন আওয়ামী লীগের তাপস সাহেব ৪ লাখ ২৪৫৯৫। বিএনপির ইশরাক সাহেব ২ লাখ ১৯০২৭ মোট ৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬২২ জন অন্যান্যরাপান ৫১ হাজার ৩৮১জন। অর্থাৎ ভোটদানে বিরত ছিল ১৭ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৫১জন ।
ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের আতিক সাহেব ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৮৫ পক্ষান্তরে তাঁর নিকটতম প্রতিদ›দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩৬১ অর্থাৎ ১ লাখ ০০ হাজার ৬২৪ পেয়ে আতিক সাহেব জয়ী হন।
উত্তরে সর্বসাকুল্যে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন , আতিক সাহেব পেয়েছেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৮৫ , তাবিথ সাহেব পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬১ ভোট দানে বিরত ছিলেন ২৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৯২৭জন। ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে ২৯ শতাংশ এবং উত্তরে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতো কম ভোট সবাইকে হতবিহবল করেছে। ভোট গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গণরায়। দৃশ্যত গণরায়ে অংশ গ্রহণে এমন ধস ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। দুই সিটি এলাকায় গড়পড়তা ২৭.১৫%। কেউ কোন মন্তব্য করার আগখানেই খোদ নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ আলমগীর সাহেব এ ধসের কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা করার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তাঁর ক্ষুদ্র একটি মন্তব্য প্রনিধানযোগ্য ভোট পড়ার এ হারে তিনি অসন্তুষ্ট না হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। কথায় বেশ মার প্যাঁচ লক্ষনীয়। এতো বড়ো একটা নির্বাচন স্বস্তিদায়ক বিষয় হচ্ছে কোথা ও কোন কেন্দ্রদখল বা হাঙ্গামা হয়নি। প্রাণঘাতি কিছুই হয়নি। এতোবড় কর্মযজ্ঞ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিসমাপ্তি একটা নতুন রেকর্ড বললে অত্যুক্তি হবেনা।
তথ্যমন্ত্রী মহোদয় তাঁর স্বীয় তথ্য সমৃদ্ধ বক্তব্যে উল্লেখ করেন ভোটার উপস্থিতি হতাশাব্যাঞ্জক হওয়ার কারণ সমূহের মধ্যে –
১ম : টাকা তিনদিন ছুটিতে অনেকে বাড়ী চলে গেছে।
২য়ত : শুরু থেকে প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতিবাচক প্রচারণা করেছে।
৩য়ত : নির্বাচনকে বিএনপি জয়ের জন্য নয় আন্দোলনের ইস্যু হিসেবে নিয়েছে। যার কারণে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমে গেছে।
৪র্থত : যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সে দেশে মোট জন সংখ্যার ৬০% যোগ্য ভোটার হলেও সেই ৬০% এর মধ্যে ৪০-৫০ % লোক ভোট দিতে পারে। তাদের তুলনায় গত ০১.০২.২০২০ এর নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক ভালো।
এক্ষেত্রে মন্তব্য নিস্প্রয়োজন মনে করি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেব সত্যানুসন্ধানী নেতা। নির্বাচনোত্তরে সাংবাদিকদের কতিপয় প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত ছন্দবদ্ধ ভাষায় রুচিশীল মাধুর্য্যপূর্ণ ভাষায় ঠাÐা মাথায় উত্তর দিতে সচেষ্ট হন। সত্য ব্যক্ততায় তার কোন কার্পণ্যতা পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে মিটিং হবে। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং এ নির্বাচন নিয়ে বীক্ষণ-পরিবীক্ষণ, আমাদের অবজারবেশন পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করবো। তাঁর ভাষায় প্রাজ্ঞলতা রীতিমত আবাক করার মত। বীক্ষণ শব্দের অর্থ আবিস্কারে ভারতীয় বাংলা অভিধানের আশ্রয় গ্রহণ করলাম। এর অর্থ হচ্ছে ভালোভাবে নিরক্ষণ বা অডিটিং করা। তাঁর মহৎগুণ হচ্ছে তিনি কিছু ব্যক্ত করার সময় কথার মার প্যাঁচের তোয়াক্কা না করে সত্য প্রকাশে পশ্চাৎপদ হননা। তাই তিনি সত্য প্রকাশ করার এক পর্যায়ে নির্দ্বিধায় সংকোচহীন চিত্তে বলেই ফেললেন ‘ঢাকা’ উত্তর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আমাদের ভোটের যে পাসেন্টেজ সে পাসেন্টেজ অনুযায়ী যে ভোট পড়ার কথা ছিলো সেটা এতো হয়নি। এ বিষয়টার ব্যাপারে তিনি সর্বপ্রথম সাংগঠনিক দুর্বলতহাকে দুষেছেন। যা শতভাগ সত্য বললে অত্যুক্তি হবেনা। নেতৃত্বে কোন উঁচু পদবীর নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদেরকে তেমন একটা পাত্তাই দেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থা নিতান্ত খারাপ। চেইন অব কামান্ডের ঘাটতি। কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বে পদ রুদ্ধ। ত্যাগী নেতারা দারুণ অবহেলিত, যারা নেতৃত্বে আছেন তাদের সাংগঠনিক যোগ্যতার ঘাটতি যথেষ্ট। সাধারণ কর্মীকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের সুখ দুঃখে একটু দেখবাল একটু খোঁজ খবর নিতে হবে। ওয়ার্কিং কমিটি ঘন ঘন সভা করতে হবে। এতে করে নেতাকর্মীদের মানসিক শক্তিবল গুণিতক হারে বৃদ্ধি পাবে। ভোটাধিকার প্রয়োগে অনীহা এবং ভোটের ধস পড়াবার ২য় হেতু হিসেবে ২-৩ দিনের টাকা বন্ধ এবং গ্রামের বাড়ি যাবার প্রবণতা ও পরিবহণ সংকটকে দায়ী করেছেন। বিষয় দুটো আংশিক গ্রহণযোগ্য হলেও পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয় অর্থাৎ গড়পড়তা মোট ভোটারের ২৭% ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি ৭৩% ভোটার গড়হাজির ছিলো। এই ৭৩%কে নিয়ো বীক্ষণ, পরিবীক্ষণ, অবজারভেশন, পর্যবেক্ষণ করা অন্যতম ফরজ প্রকৃতির ব্রতি। নির্বাচন কমিশনার সমস্ত আয়োজন পরিসমাপ্তি করে ভোটারদেরকে সার্বিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভয়ভীতিহীন নির্বাচন করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলে ও ৭৩% ভোটার ভোটদানে বিরত ছিলো নিশ্চয় সাধারণ সম্পাদক মহোদয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথামতো সলাপরামর্শ করেছেন। আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তফশীল ঘোষিত হয়েছে। বন্দরনগরীতে ও সবক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ২৭ ফেব্রæয়ারি বাছাই ১ মার্চ আপিল ২ থেকে ৪ মার্চ প্রত্যাহারের ৮ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ ৯ মার্চ ভোট গ্রহণ ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম সাহেব। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বহদ্দার পরিবারের প্রাণ পুরুষ। তিনি সুস্থ ধারার একজন আদর্শিক পুরুষ। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তিনিই এবার জননেত্রীর পছন্দ আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তি। সততা তাঁর মহৎগুণ, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে তিনি প্রশংসিত ব্যক্তি। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া মানেই দুর্বল স্বীকৃতি। ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তাঁকে জয়যুক্ত করা মানে একজন সৎ, যোগ্য মুক্তিযুদ্ধাকে স্বীকৃতি প্রদান করা। ভোট পবিত্র আমানত। যারা সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে তারা যেন স্বীয় পবিত্র দায়িত্বটা পালন করেছেন একথা শতভাগ সত্য। ভোটারগণ যাতে নির্ভয়ে ভোট প্রায়োগ করতে পারেন নির্বাচনে সে ব্যবস্থাই করবেন জনগণ এটাই প্রত্যাশা করে। গণরায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় উত্তম পথ। সরকারে ব্যর্থতার চাইতে সাফল্যের পাল্লাভারী সে ক্ষেত্রে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এটাই আশা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার নিরলস কম তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই বললে চলে। পানি সংকটও নেই। পয়ঃনিষ্কাশন, জলসরবরাহ ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঘনঘন খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তাঘাটে দৈন্যদশা পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ধূলাবালিজনিত কারণে যা জন দুর্ভোগের কারণ তা নিরসনে তড়িৎ ব্যবস্থা আবশ্যক। নতুন নির্বাচিতদের কাছে এমন প্রত্যাশা।
আশাকরা যায় আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটারগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রয়োগ করবেন। জনমত এবং গণরায় সর্বোচ্চ রায়। সে রায়কে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। একথা অবশ্যই স্বীকার করতেই হবে জনগণ আগের চাইতে অনেকবেশী সচেতন। এবারে নৌকার নতুন মাঝি নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী ১৯জনের মধ্যে তাঁর নাম অগ্রে উঠে আসে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সাবেক মেয়র মহোদয় বলেন, মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম সাহেবের বিজয়ের জন্য সামর্থ্যরে শতভাগ উজাড় করে খাটবেন। প্রধানমন্ত্রীকে সিটি মেয়র পদটি উপহার দেওয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন। তাঁর ভাষায় ৪০ বছরে সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে যত কাজ হয়নি তারচেয়ে অনেক বেশি কাজ হয়েছে আমার আমলে, কাজের ক্ষেত্রে আমি শতভাগ সফল, তার কর্মযজ্ঞ দৃশ্যমান। এবার তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে রেজাউল করিম সাহেবকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : কলামস্টি