‘সিএনজি চালিত’ হয়ে যাচ্ছে ‘ডিজেল চালিত’

49

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীর অভ্যন্তরে চলাচলরত বাস, মিনিবাস ও হিউম্যান হলারগুলোর মধ্যে যেসব গাড়ি ‘সিএনজিচালিত মোটরযান’ সেগুলোতে স্টিকার লাগানো নেই। ডিজেলচালিত গাড়ির জন্য নির্ধারিত ভাড়া আদায়ে বাসের চালক-হেলপাররা স্টিকার তুলে ফেলেন। অথচ সিএনজিচালিত গাড়ির ভাড়া বাড়ায়নি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ১০ দিন আগে (১৩ নভেম্বর) সিএনজিচালিত গাড়ি ও ডিজেলচালিত গাড়ি চিহ্নিত করতে স্টিকার লাগিয়ে দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বিআরটিএ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এনএম নাসির উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, আমরা স্টিকার লাগিয়ে দেয়ার পরও সিএনজিচালিত গাড়ির চালক-হেলপাররা তা উঠিয়ে ফেলছে। যেসব বাস বা গণপরিবহনে স্টিকার দেখা যাবে না, সেগুলোকে ধরে নিতে হবে সিএনজিচালিত। যাত্রীদের উচিত আগের ভাড়া যেন চালক হেলপাদের দেয়। অতিরিক্ত ভাড়া চাইলেই যেন আমাদের কন্ট্রোল রুমে জানায়।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীতে চলাচলরত ডিজেলচালিত গাড়িতে স্টিকার দেখা গেলেও সিএনজিচালিত গাড়িতে স্টিকার দেখা যায়নি। অথচ চালক-হেলপাররা ডিজেলচালিত গাড়ি দাবি করছে। গতকাল সরেজমিনে টাইগারপাস এলাকায় দেখা গেছে, যেসব গাড়িগুলোতে ‘ডিজেলচালিত মোটরযান’ স্টিকার নেই, সেসব গাড়ির হেলপাররাও বেশি ভাড়া দাবি করছে, অর্থাৎ ডিজেলচালিত গাড়ির জন্য নতুন করে নির্ধারণ করা ভাড়া আদায় করছে। স্টিকার না থাকায় যাত্রী ও গণপরিবহন শ্রমিকদের মাঝে বাক-বিতন্ডা চলছে হরহামেশা।
যাত্রীরা বলেন, বর্ধিত ভাড়া শুধুমাত্র ডিজেলচালিত গণপরিবহনের জন্য, সিএনজিচালিত গণপরিবহনের জন্য নয়। তাহলে সিএনজিচালিত গাড়িগুলো পূর্ব নির্ধারিত ভাড়া নিবে না কেন? চালক-হেলপারদের কিছু বলতে গেলেই তারা গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলে।
যাত্রী মো. মাহবুবুল আলম বলেন, দেশটা মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। ভাড়ার জন্য প্রতিবাদ করতে গেলেই তারা আমাদের উল্টো হুমকি দিচ্ছে। চালক-হেলপাররা এমন চালাকি করে যে, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটদেরও ধরা মুশকিল হয়ে পড়েছে। হেলপাররা বাসে উঠার পর ভাড়া নিবে না, বাস থেকে নামার আগ মুহূর্তে ভাড়া চায়। ফলে ম্যাজিস্ট্রেটদের সামনে পড়লেও আমরা অতিরিক্ত ভাড়া কত নিচ্ছে তা বলতে পারি না। ভাড়ার বিষয়ে সার্জেন্টদেরকে অবহিত করলে তারা ব্যস্ততা দেখান। তাহলে আমরা সুবিচার পাব কোথায়?
জানা গেছে, মহানগরীর মধ্যে মেট্রো সার্ভিসের নামে গাড়িগুলো বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এসব রুটের মধ্যে বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও টেম্পু রয়েছে। যদিও টেম্পুর জন্য ভাড়ার কোনো তালিকা করা হয়নি। এরপরও সিএমপি ও বিআরটিএ থেকে সকল গণপরিবহনকে স্টিকার দেয়া হয়েছে।
এর আগে ডিজেলচালিত গণপরিবহনে সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়া বাস্তবায়ন এবং সিএনজি, অকটেন, পেট্রোলচালিত গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করার বিষয়ে গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে সভা করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। সভায় পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জ্বালানি ভেদে সরকার নির্ধারিত ভাড়া মেনে চলার বিষয়ে সম্মত হন। সভায় ডিজেলচালিত পরিবহনে লাল স্টিকার (ডিজেলচালিত মোটরযান) এবং সিএনজিচালিত পরিবহনে সবুজ স্টিকার (সিএনজি চালিত মোটরযান) লাগিয়ে চিহ্নিত করার পাশাপাশি নগরীতে রুটভিত্তিক গণপরিবহনে দূরত্ব অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সিএমপি, বিআরটিএ এবং মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে পরিবহনের অভ্যন্তরে, টার্মিনাল এবং বাস স্টপেজে দৃশ্যমান স্থানে লাগিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চারটি জোনের জন্য প্রায় ১০ হাজার ১০০ স্টিকার প্রিন্ট করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে- ‘ডিজেলচালিত মোটরযান’ ও ‘সিএনজিচালিত মোটরযান’। প্রতিটি জোনে ২ হাজার ৫০০টি করে স্টিকার পাঠিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিতরণের নির্দেশনা দেয় হয়। একই সাথে বিআরটিএ’র নতুন নির্ধারিত ভাড়ার চার্টও বাসে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তা গণপরিবহনে লাগানোর কার্যক্রম শুরু করে সিএমপি। বর্তমানে যেসব গাড়িতে স্টিকার ও তালিকা নেই, সেসব গাড়িতে এসব প্রদান করা হচ্ছে।
কিন্তু দশদিনের মাথায় এসে সড়কে ‘ডিজেলচালিত মোটরযান’ স্টিকার দেখা গেলেও ‘সিএনজিচালিত মোটরযান’ স্টিকার কোনো গাড়িতে দেখা মিলছে না।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, আমরা দুইটি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের আইনের আওতায় আনছি। সব জায়গায় তো আমাদের মোবাইল কোর্ট করা সম্ভব না। যতটুকু পারছি সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে যাত্রীরা যদি আমাদেরকে সরাসরি অভিযোগ করতেন, তাহলে ওই গাড়ির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম।
সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার এনএম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে তালিকা করে বাসগুলোতে স্টিকার লাগিয়েছি। প্রথম দিনে প্রায় দেড়শ’ বাসে স্টিকার লাগোনো হয়েছে। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর কেউ যদি স্টিকার ছিঁড়ে ফেলে বা নষ্ট করে তাহলে আমরা গাড়ির নাম্বার ও তালিকা দেখে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ২ হাজার ৪০০টি গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট এবং ১০ হাজারের মত স্টিকার দিয়েছি। এছাড়াও ‘সিএনজিচালিত মোটরযান’ স্টিকার না থাকলে গ্যাস ফিলিং না করার জন্য সকল ফিলিং স্টেশনকে নির্দেশনা দিয়েছি। স্টিকার লাগানো গণপরিবহনকে গ্যাস ফিলিং করবে, অন্যগুলো নয়। যারা আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ডিজেলের দাম এক দফায় ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বাস মালিকদের ধর্মঘট ও দাবির মুখে গত ৭ নভেম্বর বিআরটিএ ও মালিকদের সভায় বাসভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয় এবং পরদিন থেকে তা কার্যকর হয়। পরবর্তীতে গাড়ি চিহ্নিত করার জন্য স্টিকার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় সিএমপি ও বিআরটিএ।