সিআরবি ধ্বংস করে হাসপাতাল নয়

42

চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের খবরে আন্দোলনে ফেটে পড়ে বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্টজন, পরিবেশকর্মী, রাজনৈতিক নেতা থেকে সাধারণ জনগণ। এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে আন্দোলন। তাদের মতে, সিরআবির মত একটি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ না করে নগরের অন্য জায়গায় করা হোক। চট্টগ্রামের মানুষের নিশ্বাস ফেলার জায়গায় ইট-পাথরের জঞ্জাল না বানিয়ে বরং সেখানে আরো গাছ রোপন করে সবুজ পরিবেশ সমৃদ্ধ করা হোক। নগরবাসির চিকিৎসা সুবিধা দরকার,তবে তা গাছ কেটে নয়। করোনার ভয়াবহ সময়ে মানুষ যখন নিজেকে ঘরে আবদ্ধ রেখেছে। তখন একদল পরিবেশ প্রেমিক মাঠে নেমেছেন দিনরাত আন্দোলনে সিআরবির নিরিবিলি নির্মল পরিবেশ রক্ষায়। কিন্তু আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদকে পাশ কাটিয়ে যত গাছ কাটা হবে তার দ্বিগুণ রোপনের দোহাই দিয়ে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজে হাত দিল রেলওয়ে। সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বের আওতায় (পিপিপি) এ হাসপাতালে থাকবে ৫০০ শয্যা ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ। আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু করায় ক্ষোভে ফুঁসছে নগরবাসি। যে কোন মূল্যে হাসপাতাল বন্ধের মতামত ব্যক্ত করেন তারা। এ নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দেবেন বলেও জানান আন্দোলনকারীরা। আমলাতান্ত্রিক চক্র ও মুনাফাবাজির নির্মমতার শিকার চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি। শতবর্ষী গাছ ও প্রকৃতি ধ্বংসে উঠেপড়ে লেগেছে। রেলওয়ের এমন কাজকে আত্মঘাতি উল্লেখ করে সাধারণ মানুষ বলেন, সিআরবি ধ্বংস করে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে হাসপাতাল নির্মাণ একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। কোনভাবে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ করতে দেওয়া হবেনা। তাই রেলওয়ের উচিত এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসা।
নগরবাসীর ভরসা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তিনি একজন পরিবেশ ও জনমতবান্ধব মানুষ। তিনিও কখনো প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণে সায় দেবেননা। এখন প্রশ্ন হল সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধে চট্টগ্রাম সহ দেশের বিখ্যাত ব্যক্তি ও সুশীলজন আন্দোলন করছেন। যাদের জন্য হাসপাতাল তারা বলছেন, এখানে হাসপাতাল নয়। তারপরেও তাদের প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে কেন হাসপাতাল নির্মাণ? কেন এই নির্মল ও সাংস্কৃতির উঠোন ধ্বংসে মেতে উঠা। বুঝতে হবে জনমত উপেক্ষার ফলাফল কখনো ভালো কিছু বয়ে আনেনি। তাছাড়া চট্টগ্রাম ও সিআরবি মুক্তিযুদ্ধ ও আন্দোলন সংগ্রামের তীর্থস্থান। এই জেলার মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার জায়গায় বিষ ঢেলে কখনো সুফল বয়ে আনবেনা। জনমত, প্রকৃতি, ঐতিহ্য ও আন্দোলন-সংগ্রামের কথা ভেবে সিআরবিকে ধ্বংসের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। হাসপাতাল নয়, এখানে বেশি করে গাছ রোপণ করুন। পাখ-পাখালির নিরাপদ আবাস গড়ে তুলুন। নগরবাসি এখানে এসে নির্মল নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে সজীব করে তুলবেন। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মেতে উঠবেন। তাই নগরবাসি সিআরবি ধ্বংস কখনো মেনে নেবেনা।