সিআরবি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ

1

 

নগরের সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা বাতিল করার দাবি জানিয়ে গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিআরবি এলাকায় একটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও ঢাকার ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যে এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য চুক্তি হয়েছে, সেখানে যদি হাসপাতাল হয় তাহলে তা এলাকার পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। সিআরবি এলাকাটি চট্টগ্রামের ফুসফুস স্বরূপ। চট্টগ্রাম পার্বত্য শহর হলেও বহুদিন ধরে পাহাড় ও বনজঙ্গল কেটে সাফ করে ফেলার কারণে সবুজ স্পট বলতে সিআরবি পাহাড়টিই অবশিষ্ট আছে। চট্টগ্রামের মানুষ মুক্ত বায়ু সেবন ও অক্সিজেন গ্রহণের জন্য প্রাতে ও সন্ধ্যায় সিআরবি পাহাড়ে সমবেত হয়। তারা শরীরচর্চা ও হাঁটাহঁাঁটি করে। সিআরবি পাহাড়ে অনেকগুলো শতবর্ষীয় শিরীষ বৃক্ষ আছে। এই বৃক্ষগুলোকে অবলম্বন করে সাড়ে তিনশ প্রজাতির গাছপালা সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতাল এলাকায় পানির জন্য গভীর নলকূপের প্রয়োজন হবে। ইতিমধ্যে একটি নলকূপ বসানো হয়েছে। এরকম আরো ৯টি নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই নলকূপগুলো দিয়ে যখন ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করা হবে তখন শতবর্শী সিরিষ গাছের গোড়া থেকে পানি শুকিয়ে যাবে। ফলে গাছগুলো মারা যাবে এবং সাড়ে তিনশ প্রজাতির লতাগুল্ম ধ্বংস হবে। ইউনাইটেডকে ৮ কোটি টাকা মূল্যে ৬০০ শতক জায়গা দেওয়ার কথা হয়েছে। জায়গার দর নির্ধারণেও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ঐ এলাকায় ১ শতক জায়গার মূল্য ১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ৬০০ শতক জায়গার মূল্য ১০০০ কোটি টাকা হওয়ার কথা। কার স্বার্থে, কি প্রয়োজনে দর অবমূল্যায়ন করে ইউনাইটেডকে জায়গা দেওয়া হচ্ছে তা বোধ্যগম্য নয়। এলাকাটিতে চাকসু’র প্রথম জিএস শহীদ আবদুর রব এর জন্মস্থান। শহীদ রবের সমাধিও এখানে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধে জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র সিটি কলেজের এজিএস সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী ও আবদুর রব শহীদ হন। শহীদ রবের জন্মস্থান হওয়ায় এই জায়গাটির ওপর চট্টগ্রামের মানুষের এক ধরনের সংবেদনশীল অনুভূতি রয়েছে।
হাসপাতাল নির্মাণ প্রতিরোধ ঐক্যসংহতি, স্বাধীনতা স্মৃতি ট্রাস্ট এবং চট্টল ইয়ূথ কয়ার এর সম্মিলিত উদ্যোগে স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন চবি প্রাচ্যভাষা ও পালি বিভাগের প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দু নন্দন দত্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রাজু, ব্যাংকার আবদুল হক, চট্টগ্রাম জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কিরণলাল আচার্য্য, বাকলিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক আবদুল মালেক, চট্টল ইয়ূথ কয়ারের সাধারণ সম্পাদক অরুণ চন্দ্র বণিক, সমাজসেবী ইমরান মিয়া চৌধুরী, শিল্পী সমীরন পাল, চট্টল ইয়ূথ কয়ারের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত দাশ অপু, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জয়নুদ্দীন আহমদ, অচিন্ত্য দাশ, দিলীপ সেন, শিল্পী হানিফুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি