সিআরবি’র মতো আন্দোলনে ‘নতুন হাওয়া’

70

সবুর শুভ

সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে ক্ষোভে ফুসছে চট্টগ্রামবাসী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আন্দোলনে উত্তাল নগরী। উত্তাপের এ সময়ে নতুন করে হাওয়া লেগেছে লালখান বাজার থেকে টাইগারপাস অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিতর্কে। আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবিও আদায় করে নিতে চায় বিভিন্ন সংগঠন।
টাইগারপাস এলাকার নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজার না নিয়ে টাইগারপাস পর্যন্ত করার দাবি তাদের। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদী আন্দোলন সফলতার অনেকটা কাছাকাছি আসায় আন্দোলনকারীরা এবার নজর দিচ্ছেন এক্সপ্রেসওয়ের উল্লেখিত অংশ নিয়ে। এ লক্ষে আজ শনিবার সকাল ১১টায় লালখান বাজার মোড় থেকে টাইগারপাসের মাঝামাঝি স্থানে মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছে আমরা চট্টগ্রামবাসী নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের নেতা মুজিবুল হক শুক্কুর জানান, সিআরবিতে যেমন পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষার আন্দোলন চলছে একইভাবে এখানেও চলবে আন্দোলন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, পাহাড়ের সৌন্দর্য ও পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখেই হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
তথ্য মতে, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে গেল কয়েকদিন কর্মসূচি পালন করে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সিআরবির সাত রাস্তার মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে রাজনৈতিক, সাামজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন অংশ নেন। এতে যোগ দেন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের মহাসচিব মো. ইউনূস, পরিবেশবিদ প্রফেসর ইদ্রিস আলী, জেলা সিপিবির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নুরুচ্ছফা ভূঁইয়া, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, নাট্যজন সাইফুল আলম বাবু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, সাংবাদিক নাজিমুদ্দিন শ্যামল, আসিফ সিরাজ ও ঋত্বিক নয়ন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অ্যানি সেন, আবৃত্তিশিল্পী মিলি চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি আলীউর রহমান।
এদিকে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান থাকলেও এ নিয়ে এখন নতুন করে আপত্তি করছে বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও সিডিএ’র কাছে লিখিত আপত্তি দেয়া হয়েছে। যার জবাব ঈদের পরে দেয়া হবে বলে জানান সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। স¤প্রতি সমন্বয় সভার মাধ্যমে লালখান বাজার থেকে টাইগারপাস অংশের নতুন ডিজাইন করা হয় সিডিএ’র পক্ষ থেকে। তাছাড়া লালখান বাজার থেকে টাইগারপাস অংশের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম।
বিভিন্ন সংস্থার সাথে সিডিএ’র সমন্বয় সভায় লালখান বাজার থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত কোনো পাহাড় কাটা হবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়ে প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, এ অংশে চার লেনের পরিবর্তে দুই লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের প্রস্তাবনাগুলো হলো- এটি টাইগারপাস পর্যন্ত না এনে দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে শেখ মুজিব রোডের উপযুক্ত প্রশস্ত স্থানে শেষ করা, পেশাগতমান, পরিবেশ সংরক্ষণ ও নান্দনিকতা বজায় রেখে সংবেদনশীলভাবে পাহাড় ঘেঁষে নতুন যান ও পথচারি চলাচলের পথ দিয়ে ডিজাইন করা, লালখান বাজার গোল চত্ত¡র থেকে দেওয়ান হাট ওভারব্রিজ-ফ্লোরা-পাস-আমবাগান গোলচত্তর পর্যন্ত টাইগার পাসের স্বল্প দীর্ঘ পরিসরে নিরবচ্ছিন্নভাবে যানচলাচলের জন্য উভয় দিকে একটা করে ডেডিকেটেট নো-স্টপেজ লেন চিহ্নিত করা, টাইগার পাস ট্রাফিক গোল চত্ত¡রের সংস্কার ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা, নগরের ট্রাফিক ও যানবাহন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং দেওয়ানহাট ওভার ব্রিজ সংস্কার।
এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান জানান, এক্সপ্রেসওয়ে হলে বিমান বন্দর থেকে ১৫ মিনিটে ট্রাফিক দেওয়ানহাট এলাকায় আসতে পারবে। একইভাবে বহদ্দারহাট এলাকা থেকেও ট্রাফিক দ্রæত আসবে। তখন লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাটের মধ্যবর্তী স্থানে ট্রাফিক কনজেশন হবে। এজন্য লেনের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। শুধুমাত্র পাহাড় ও এর সৌন্দর্য রক্ষায় লেন না বাড়িয়ে চার লেনের পরিবর্তে এই এলাকায় দুই লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যাতে সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর আঁচড় না পড়ে। যারা বিতর্ক করছেন তারা না বুঝে বিতর্ক করছেন।
প্রসঙ্গতঃ সিআরবি এলাকায় ৬ একর জমিতে ৫০০ শয্যার মাল্টি স্পেশিয়ালিটি হসপিটাল এবং ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের চুক্তির কথা সামনে আসে সম্প্রতি। এরপর শুরু হয় হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে চট্টগ্রামের অন্য কোন উপযুক্ত স্থানে প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন।