সালিশে ‘ন্যায্যকথা’ বলার অপরাধ

91

হাটহাজারীতে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে সালিশ বৈঠকে এক নারীর পক্ষে ‘ন্যায্যকথা’ বলায় ইউপি সদস্যকে ছুরিকাঘাত করেন এক যুবক। ওই সদস্যের নাম মো. এমরান চৌধুরী (৪৫)। গত সোমবার রাত ২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এমরান গড়দুয়ারা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং ওই এলাকার কামদর (প্রকাশ কান্দর) আলি চৌধুরী বাড়ির ওমর চৌধুরীর পুত্র। আর যুবকের নাম মো. জামশেদ (৩২)। তিনি মেখল ইউনিয়নের চাঁদগাজী চৌধুরী বাড়ির মো. ফরিদের পুত্র বলে জানা গেছে।
গড়দুয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান সরওয়ার মোর্শেদ তালুকদার জানান, সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কের হাটহাজারীর মেখল ইউনিয়নের ইছাপুর ফয়জিয়া বাজারে এমরানকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন জামশেদ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুরে বাজার করতে ইছাপুর ফয়জিয়া বাজারে যান ইউপি সদস্য এমরান। এ সময় জামশেদের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জামশেদ মুরগীর দোকান থেকে ছুরি নিয়ে এমরানকে ছুরিকাঘাত করতে শুরু করে। এতে এমরান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে রাত ২টার দিকে সেখানে তিনি মারা যান।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমান। এ সময় নিহতের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
এমরানের স্ত্রী ডেইজি আক্তার স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। স্বামীকে হারিয়ে তিনি নির্বাক। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তিন কন্যাকে জড়িয়ে ধরে শুধু কেঁদেই চলেছেন। তিন কন্যা এরিন, ইসমু এবং আঁখি পিতাকে হারিয়ে দিশাহারা।
এমরানের দুই কন্যা এসএসসি পরীক্ষার্থী এরিন ও ইসমু জানান, আমরা শুধু বাবাকে চাই। আর কিছু চাই না। বাবাকে ফিরিয়ে দিন। তাকে ছাড়া আমরা বাঁচবো না।
হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূূূলক বিচার দাবি করে এমরানের ছোটভাই মো. ইয়াছিন আরাফাত চৌধুরী বলেন, আমাদের এলাকায় জামশেদের শ্বশুর বাড়ি। তার শ্বশুর জাকারিয়া চৌধুরীর সাথে পার্শ্ববর্তী নারগিস নামে এক নারীর জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। ইউপি সদস্য হিসেবে আমার ভাই শালিস-বৈঠকে ন্যায্য কথা বলায় এবং জামশেদের শ্বশুরের প্রতিপক্ষকে জেল থেকে জামিনে আসতে সহযোগিতা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে জামশেদ তাকে ছুরিকাঘাত করে।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী মডেল থানার ওসি বেলাল উদ্দীন জাহাঙ্গীর বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এখনও আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে দোষীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে গড়দুয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে এমরানকে দাফন সম্পন্ন হয়।